ধর্ষণ হলে প্রাথমিক ভাবে করণীয়

প্রকাশ : ৩০ জুন ২০১৬, ০০:৫০


বাংলাদেশে প্রতিদিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) সারা দেশ থেকে গড়ে প্রতিদিনই গড়ে চার-পাঁচজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে চিকিত্‍সা নিতে আসছেন৷ আর প্রতিমাসে দেড় থেকে দুই শতাধিক ধর্ষিতাকে চিকিত্‍সা দিচ্ছেন তারা। (সূত্রঃ ডিডাব্লিউ)

এই হিসাবে আপনার আমার আশে পাশে প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ ধর্ষিত হচ্ছে। ধর্ষিত হয়ে নিজেকে অভিশপ্ত বা পাপী মনে করার কিছু নেই। কারণ এতে আপনি কোন ভাবেই অভিযুক্ত হতে পারেন না। আপনি যে কাপড়ই পড়েন না কেন বা যে পেশায় থাকেন না কেন। এই কথাটি আরো বিস্তারিত বলতে গেলে বলা যায় আপনি হাঁটুর উপর কাপড় পড়েন বা আপনার স্তন কোন ওড়না দিয়ে ঢাকা না থাকুক বা আপনি যদি পতিতাবৃত্তিতে থাকুন তবুও কেউ আপনাকে ধর্ষণ করতে পারে না। তবুও আমাদের দেশের নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে।

আপনার আশে পাশের যে কেউ ধর্ষিত হতে পারে। তখন একজন সচেতন নাগরিক, প্রতিবেশি সবচেয়ে বড় কথা একজন মানুষ হিসেবে ধর্ষিতাকে সাহায্য করুন। প্রশ্ন আসতেই পারে আপনি কি সাহায্য করবেন? আবার অনেকেই জানেন না একজন ধর্ষণের শিকার নারীকে কিভাবে সাহায্য করা যায়।

ধর্ষণের ঘটনাটি নির্ভরযোগ্য কাউকে জানান যিনি নির্যাতিতাকে মানসিক সাহস দিতে পারবে।
সাক্ষী হিসাবে কাজে লাগানো যায় এমন কোন বিশ্বস্ত মানুষকে জানান সে আত্মীয়, বন্ধু, পুলিশ, চিকিৎসকও হতে পারেন।
৭২ ঘন্টার মধ্যে ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়ে ফেলতে হবে।
কোন ভাবেই নির্যাতিতাকে গোসল করে আলামত নষ্ট করতে দিবেন না। তাতে শারীরিক আলামত গুলো নষ্ট হয়ে যায়। এমন কি পরনের কাপড়ও পরিস্কার করা যাবে না। কাপড় গুলো পলিথিনে রাখা যাবে না বরং সেগুলো কাগজের ব্যাগে বা কাগজে মুড়িয়ে থানায় নিয়ে যেতে হবে।
সবচেয়ে দ্রুত যে কাজটি করতে হবে তা হলো নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করে অভিযোগ জানাতে হবে। অভিযোগ যে কেউ করতে পারেন।
যিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তিনিই মামলার প্রধান সাক্ষী। তার জবানবন্দি পুলিশকে গ্রহণ করতে হবে। তবে কোন ধরণের অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি বাধ্য নন।

অনেকেই ভেবে থাকেন ডাক্তারি পরিক্ষা বা চিকিৎসা অনেক খরচের ব্যাপার। কিন্তু সরকারি/বেসরকারি হাসপাতালে ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মেডিকেল পরীক্ষা সম্পূর্ণভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে হবে এবং তা বিনামূল্যে দিতে হবে। পরবর্তী চিকিৎসাও সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে হবে।

আইনি সহায়তা পাওয়া নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই কারণ-
প্রথমেই ভিকটিম পুলিশের নিকট থেকে সব-রকম সহায়তা পাওয়ার অধিকারী। জেলা জজের আওতায় প্রতিটি জেলায় আইন সহায়তা কেন্দ্র রয়েছে যেখানে আবেদন করলে ভিকটিম আর্থিক অথবা আইনজীবীর সহায়তা পেতে পারেন।
বিভিন্ন মানাবাধিকার সংগঠনের কাছে শেল্টার, আইনগত সহায়তা পেতে পারেন।
থানায় এবং হাসপাতালে ‘ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে’ আইনগত ও চিকিৎসা পেতে পারেন।

আরেকটি বিষয়ে সোচ্চার হোন। কখনোই কোন ধর্ষণের ঘটনায় আপোষ মিমাংসা করা যাবে না। কারণ ধর্ষকের পরিচয় সে একজন ধর্ষক। তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড। আজকে আপনি তার সাথে আপোষ করলে সে কালকেই আরো একজনকে ধর্ষণ করবে। কোন ভাবেই কোন ধর্ষককে ছেড়ে দেয়া যাবে না। সে নানারকম ভয় দেখাতে পারে। কিন্তু মনে রাখবেন সে অপরাধী তার শক্তি কোনভাবেই আপনার চেয়ে বেশী নয়।

সচেতন হোন সচেতন করুন।

লেখক: আইন-অধিকার কর্মী

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে jagoroniya.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরণের দায় গ্রহণ করে না।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত