‘কারিতাস রোমানা’: অপূর্ব এক মানবতার দৃষ্টান্ত

প্রকাশ : ২৪ জুন ২০১৬, ০১:১০

বার্তলোমে এস্তেব্যান মুরিলো (Bartolome Esteban Murillo) ১৬১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর স্পেনের সেভিলে জন্মগ্রহণ করেন। গ্যাস্পার এস্তেব্যান (Gaspar Esteban) ও মারিয়া পেরেজ (María Perez) দম্পতির ১৪ সন্তানের মধ্যে মুরিলো ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ।

মুরিলোর বয়স যখন ১০ বছর, তখন তার বাবা গ্যাস্পার মারা গেলে তিনি তার বোনের সংসারে চলে আসেন। এরপর স্পেন থেকে তারা আমেরিকা চলে যান। মুরিলো প্রায় ১২ বছর বয়স থেকেই চারুশিল্প চর্চা শুরু করেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি একজন ভালো চিত্রশিল্পী হয়ে উঠেন।

মুরিলোর জীবনের জন্য ১৬৪৫ সাল ছিল টার্নিং পয়েন্ট। এ বছরই তিনি একজন চিত্রশিল্পী হিসেবে ব্যাপক নাম করেন। সর্বমহলেই তার আঁকা দারুণ প্রশংসিত হতে থাকে। একসময় তিনি আমেরিকা ছেড়ে ইতালির মাদ্রিদে চলে আসেন। এখানেই তিনি স্থায়ী হন।

মুরিলোর আঁকা তৈলচিত্রসহ অন্যান্য চিত্রশিল্প ছিল অসাধরণ সব গল্পের পটভূমি। এরমধ্যে ‘কারিতাস রোমানা’ শিরোনামে তার কিছু ছবি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এবং তা অপূর্ব এক মানবতার দৃষ্টান্ত হিসেবেই রোমান ক্যাথিলিকদের কাছে সমাদৃত। শুধু তাই নয়, পুরো বিশ্বের বর্তমান প্রজন্মের কাছেও মুরিলোর ‘কারিতাস রোমানা’ মানবতার দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

ভ্যালেরিয়াস ম্যাক্সিমাস’র লেখা (হ্যান্ডবুক সংকলিত) `Memorable Doings and Sayings' ( 4 & 5) (Factorum ac Dictorum)-এ রক্ষিত বর্ণনা অনুসারে কয়েকটি তৈলচিত্র আঁকেন তিনি। যা ‘কারিতাস রোমানা’ শিরোনামে পরিচিত। এরও অনেক আগে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী স্যার পিটার পল রুবেন্স তার খোদাই কর্মে এই গল্পটি তুলে ধরেন। তবে বিতর্ক ছিল, রুবেন্স মেয়েটির বাম স্তন উল্লেখ করলেও মুরিলো ডান স্তন দেখিয়েছেন।

ভ্যালেরিয়াস ম্যাক্সিমাস’র লেখা `Memorable Doings and Sayings' বর্ণনাকৃত গল্পের পটভূমি ছিল, রোম নগরীতে এক বৃদ্ধকে দেশটির প্রশাসন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোন রকম জল-খাবার না খাইয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দেন। কিন্তু বৃদ্ধের মেয়ে পেরো তার বাবার নিষ্ঠুর এই মৃত্যুদণ্ড কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তার বাবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি যেন বাবার সাথে প্রতিদিন বন্দীশালায় গিয়ে দেখা করতে পারেন, এমন আবেদন করেন বিচারপতিদের কাছে। এরপর তাকে বাবার সাথে সাক্ষাৎ করার অনুমতি প্রদান করা হয়।

এদিকে পেরো বন্দীশালায় তার বাবার সাথে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার সময় কারা রক্ষীরা দফায় দফায় তাকে পরীক্ষা করেন, কোন জল-খাবার আছে কি না? শেষতক তার সাথে আর কিছু না পেয়ে তাকে বাবার কাছে যেতে দেন। পেরো দেখেন তার বাবার হাত পিছ মোড়া করে বাঁধা। জল তেষ্টা আর খাবারের জন্য তিনি ছটফট করছেন। এমন করুণ চিত্র দেখে পেরো তার ডান স্তন থেকে তার বাবাকে দুগ্ধ পান করান। এতে কিছুটা স্বস্তি পান বৃদ্ধ। কিন্তু এমন করে বেশিদিন আর চলতে পারেনি। কারারক্ষীরা বিষয়টি টের পেয়ে যান এবং উভয়কে বিচারের মুখোমুখি করেন।

বিচারকরা ব্যাপারটিকে মানবতার নিদর্শন স্বরূপ অনন্য এক দৃষ্টান্ত বলেই রায় দেন এবং বিরল এই মানবতার দৃষ্টান্তের পর শাসকগোষ্ঠীর মনেও মানবতা-বোধ জাগ্রত হয়। যার ফলে ওই বৃদ্ধকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে দেন। মূলত এই গল্পটি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে রূপক অর্থেই জনশ্রুতি আছে। আর এ চিত্রটি মুরিলো তার তৈলচিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেন, যা বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে মানবতা বোধ জাগরণে সহায়ক ভূমিকা রাখেন। তবে এই চিত্রকর্মটির পেছনের গল্প নিয়ে আরব বিশ্বে ব্যাপক বিতর্ক আছে। এরপর থেকে মুরিলোকে আরব বিশ্বে একজন বিতর্কিত চিত্রশিল্পী হিসেবেই আখ্যায়িত করা হয়।

লেখক: ব্লগার

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে jagoroniya.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরণের দায় গ্রহণ করে না।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত