গায়ের জ্বালা চোখের জল

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০১৭, ২২:০৪

ক্রমেই বঙ্গ সমাজে শিক্ষার হার বাড়ছে কিন্তু এর আসল উদ্দেশ্য ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। প্রমথ চৌধুরী বলেছিলেন, "শিক্ষা আমাদের গায়ের জ্বালা চোখের জল দুটোই দূর করে"। আজ হয়তো গায়ের জ্বলাটা দূর হয় চোখের জল কখনই দূর হচ্ছে না। শিক্ষা দীক্ষা নীতি নৈতিকতায় এই প্রজন্মটার সবচাইতে বেশি জ্ঞানী হবার কথা ছিলো। দেশ, মুক্তিযুদ্ধ এবং তৎপরবর্তী ধ্যান ধারণা এদের হাত ধরেই বিকশিত হবার কথা। বরং তা তো হয়নি যা হয়েছে তা হলো ধর্ম এবং ফ্যাশনের একটা মেলবন্ধন। আমরা বাঙালি, আমাদের নিজস্ব একটা সংস্কৃতি আছে। আমরা সৃষ্টিতে এবং কৃষ্টিতে উপমহাদেশের যে কোন অঞ্চলের চেয়ে অনেক এগিয়ে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি কখনই পর্দার বিপক্ষে নই কিন্তু তা যখন ফ্যাশনের অনুসঙ্গ সেখানে আমার খানিক এলার্জি আছে বৈ কি।

যেখানে দেশের জাতীয় দিবসগুলো সম্পর্কে বেড়ে ওঠা শিক্ষার্থীরা ক্রমশ জ্ঞান হারাচ্ছে আর তাদেরকে ট্রল করে টিভি চ্যানেলগুলো তাদের টিআরপি বাড়াচ্ছে সেখানে কতটুকু সৃজনশীলতার চর্চা হচ্ছে তা বরং না বলাই ভালো। একটি দেশের মূল মেরুদণ্ড হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা। একটি দেশের সবথেকে স্কলার শ্রেণিগোষ্ঠী দেশটির শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে থাকেন। আর আমাদের দেশে বারবার পরিবর্তিত শিক্ষানীতিতে শিক্ষার্থীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। যে দেশের শিক্ষকদের বুঝে ওঠার আগেই সৃজনশীল নামক পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে সেখানে শিক্ষার্থীদের কথা বলাই বাহুল্য। সরকারকে বলতে চাই, সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হবার পাঁচ বছর আগে ঘোষণা হওয়া উচিত ছিলো, যেন পাঁচ বছর ধরে শিক্ষকেরা ট্রেনিং পায় এবং পরবর্তীতে সেটা বাস্তবে রূপলাভ করে।

কোমলমতি বাচ্চাদের হাতে বই তুলে দেওয়া হচ্ছে আর তাতেও সাম্প্রদায়িকতার সুস্পষ্ট গন্ধ। দেশটা সবার, আমরা বাঙালি। আর তা যদি নাই হতো তাহলে আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ হতো না। সংখ্যাগরিষ্ঠ আর সংখ্যালঘু হিসেবের আগে হিসেব কষুন এই পতাকা এই মানচিত্র আপনার যতটুকু আপনার পাশে মন্দিরে যাওয়া গীর্জায় যাওয়া বা কোথাও না যাওয়া মানুষটিরও ঠিক ততটুকু। ৫০ বা ৮০'র দশকে যে হিসেব কখনো কষা হয়নি, যে দেশে সবাই আমরা মিলেমিশে থাকবার চর্চা প্রতিপালনের মধ্য দিয়ে বিশ্বদরবারে আতিথেয়তায় বিশেষ সুনামের অধিশ্বর, সেদেশে আজ একবিংশ শতাব্দীতে এসে কেন এত হিসেব নিকেষ? কেন ভিন্ন মতাবলম্বীরা বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা আলাদা হয়ে আকাশের নিচে বসে চোখের পানি ফেলবে?

স্কলারদের বদলে যখন হেফাজতের আমির জামায়াতের দোসররা দেশের শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নের দায়িত্ব নিতে হাপিত্যশ করে তখন সে দেশের ছাগল গাছে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। বরং আজ বড় আক্ষেপ নিয়েই বলতে হয় বঙ্গবন্ধু আপনি ভাগ্যবান যে আপনাকে আজ আপনার সোনার বাংলা এমন দেখে যেতে হয়নি! দেখে যেতে হয়নি বইয়ের বোঝায় কতটা নাজুক আপনার সন্তানেরা! দেখে যেতে হয়নি এক ভাই আরেক ভাইয়ের ঘরে কেমন আগুন দেয়! আপনি থাকুন যেখানে আছেন শান্তিতে থাকুন। তবে আজকাল ৭১ এর যীশুর আবির্ভাবের বড় অভাব বোধ হয়।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা ও সংগঠক, গ্রিন ওইম্যান

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে jagoroniya.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরণের দায় গ্রহণ করে না।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত