মেট্রোশহরের বাস হোক নারী বান্ধব
প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬, ২১:২৭
ঢাকায় সিটি সার্ভিসের বাসগুলোতে আজকাল নারীকে ভয়ানক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতে হচ্ছে। গত কয়েক মাসে অনেক নারী তাদের ফেসবুকে সেসব কাহিনি বলেছেন। কাহিনিগুলোতে তাদের নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরেছেন।
ঘটনা ০১
কর্মজীবী নারী বাসের অপেক্ষায়। পর পর তিন চারটি বাস চলে যাবে, ধাক্কাধাক্কি করে পুরুষরা উঠবে, হেলপার চিৎকার করবে, মহিলা না, মহিলা না।
কেনো??
সিট নাই।
পঞ্চমে উঠলেও ভীষন ঠাসাঠাসি।
ঘটনা ০২
বাসের দরজার মুখে হেলপার সবসময় দাঁড়িয়ে থাকবে। সে নেমে যাত্রীকে উঠাবে না। অসভ্যভাবে নারী যাত্রীকে টেনে তোলবে। কোনো পুরুষ যাত্রীকে সেভাবে তোলে না। দাঁড়ানো মাত্রই গায়ে লাগা অন্য যাত্রীরা ইচ্ছা অনিচ্ছায় নারী যাত্রীর গায়ে পড়ে যাওয়া। পায়ের উপর পা চেপে ধরা। এমনকি উপরের রডগুলো ধরে অনেক নারী দাড়াঁতে পারে না। কারন তা অতি উচ্চ। প্রায় বাসেই। অনেক বাসেই রডও নেই। বাধ্য হয়ে নারীরাও অন্য যাত্রী ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। ব্রেক করা মাত্রই তাল হারায়।
ঘটনা০৩
বাসের সিটের মাত্র নয়টাতে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধীর নামে। যা সারা দেশেই একই বন্টন। বাস্তবতায় দেখা যায় মেট্রোশহরের কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বেশি। তাদের জন্য বাসগুলোতে সিট বরাদ্দ কেন সারাদেশের মতো হবে?
সিট বাড়াতে হবে। নির্ধারিত নয়টা সিটের পর কেনো নারীকে হেলপার উঠাতে চায় না। তার জন্য কয়েকটা বাসের অপেক্ষা করে তাকে উঠতে হয়।
ঘটনা ০৪
অধিকাংশ বাসেই ড্রাইভারের ঠিক পাশেই মহিলাদের নির্ধারিত সিটগুলো, এমনকি বনেটেও গদি পেতে যাত্রী নেয়। সেখানে পুরুষ যাত্রী কিংবা মালামালের ব্যাগ বহন করে। অতএব নারী যাত্রীর বসাটা চরম বেকায়দায়।
ঘটনা ০৫
নির্ধারিত সিটের বাইরের সিটে নারীরা বসলে অনেকসময় পুরুষরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। চ্যাঁচামেচি করেন।
রাত আটটার পর কোনো নারী বাসে উঠতে গেলে বলে এতো রাতেও মহিলারা বাইরে কি করে?? কর্মজীবী নারীরাও যে রাতে সিফট ডিউটি কিংবা প্রয়োজনে যাতয়াত করতে পারে তা বিশ্বাস করে না। কই যান, কেন যান, এতো রাইতে!! এসব প্রশ্নের পর প্রশ্ন।
ঘটনা ০৬
কলেজের ছাত্রী, সিটি কলেজে যাবে। তারপাশে মধ্য বয়সী পুরুষ যাত্রী মোবাইলের স্ক্রিনে খারাপ ছবি ইঙ্গিতে দেখাচ্ছে। মেয়েটি অন্যমনস্ক হয়ে এড়িয়ে যাবার চেষ্টাও করেছে। জ্যাম, ব্রেক কষা, আবার জ্যাম। এভাবেই ছেলেটি সারারাস্তা তাকে বিব্রত করেছে।
ঘটনা ০৭
সর্বশেষ একজন নারী যাত্রীকে প্যান্টের জিপার খোলে তার গায়ে লাগিয়েছে চলন্ত বাসে। পরপর তিনবার, তিনি প্রতিবাদ করলে বদমাশটি পালিয়েছে। অন্যান্য যাত্রীরা কিংবা বাসের হেলপার, ড্রাইভার কোনো রকম সহযোগিতাও করেনি।
আমাদের ঢাকা শহরের মেয়র নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা ঢাকাবাসীকে সুন্দর শহর, নিরাপদ শহর করার নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিশেষ করে নারীর জন্য নিরাপদ নগরী। সেটি নিশ্চিত করতে কি কি উদ্যোগ নিয়েছেন তা চোখে পড়ে নাই।
এই সব সমস্যা বিবেচনা করে পরিবহনকে ঢেলে সাজাতে হবে। যেটি করা যেতে পারে তা হলো:
এক- নতুন সকল বাসে নারীর জন্য সিট বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
দুই- সকল বাসেই দুটি দরজা থাকতে হবে, প্রয়োজনে নারী ও পুরুষের আলাদা দরজা।
তিন- নারী যাত্রীদের জন্য নারী হেলপার রাখতে হবে।
চার- কোনো নারী হয়রানী কিংবা নির্যাতনের শিকার হলে অভিযোগ দাখিলের নম্বর সম্বলিত স্টিকার বাধ্যতামূলক বাসে সংরক্ষণ করতে হবে।
পাঁচ- বাসের ভেতর যাত্রীবান্ধব সিট রাখতে হবে।
দুই হাজার একুশ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় নেবার অনেক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর অবদানকে সাথে নিয়েই তা অর্জন হবে। তাই নারীরা কর্মে, পড়ালেখায় কিংবা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে এসেছে। তাদের চলাচলের পথকে, বাহনকে নিরাপদ না করলে তা কিভাবে অর্জন হবে!!
সামনে সাড়ে তিনহাজার নতুন বাস নামার কথা শুনেছিলাম। তা অবশ্যই যাত্রীবান্ধব হতে হবে এমনকি নারী যাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বটা দিতে হবে।
মালিক শ্রমিকের নারীর প্রতি সহিংসতা বিরোধী চেতনা বিকাশে প্রয়োজনে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করতে হবে।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, ফ্যামিলি টাইস