বাঙালির বাংলা সমাচার

প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০১৬, ০১:৪৩

মোঃ ফরহাদ রব্বানী

জীবন জীবিকার তাগিদে বাংলাদেশের মানুষ আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাঙালি আজ নিজ গুনে আলাদা একটা পরিচিতি পেয়েছে। কোথাও মেধার গুনে, কোথাও কঠোর পরিশ্রমের গুনে, কোথাও সততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে, কোথাও ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ এলাকায় শান্তি স্থাপন করে। বিশ্বের অনেক দেশে আজ বাঙালি জাতিকে আলাদা করে চেনে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম আর আমাদের ভাষার জন্য সংগ্রামের ইতিহাসের কারণে। বিশ্বের প্রবাসী বাঙালি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বিভিন্ন বিষয়ে নানা মতের, নানা পথের বাঙালি থাকলেও একটা "অদ্ভুত বৈপরীত্যের" দিক থেকে কেমন যেন একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

বিষয়টাকে একটু খোলাসা করেই তাহলে ব্যাখ্যা করি।

বিশ্বের প্রবাসী বাঙালি অধ্যুষিত এলাকাগুলোর মধ্যে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহর অন্যতম। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এসে এই শহরে বাঙালি জনবসতিতে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ জনের বসবাস থাকায় এই শহরটাকে প্রবাসে একটা ক্ষুদ্র বাংলাদেশ বলেই মনে হয়। আমেরিকার খুব সম্ভবত এই একটা শহরেই আপনি শুধুমাত্র বাংলা ভাষা ব্যাবহার করেই আপনার দৈনন্দিন প্রায় সব কাজ করে যেতে পারবেন। দোকানের বাংলা সাইনবোর্ড, বাংলা পত্রিকা, রেস্টুরেন্টে বাংলায় খাবার মেন্যু; এ যেন আপনার চির চেনা শহরটারই একটা আধুনিক ভার্সন। তার উপর এখানে প্রবাসী বাঙালিদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন, বনভোজনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন প্রবাসে বাঙালির সংস্কৃতির চর্চাকে বেশ ভালভাবেই জানান দেয়। 

বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কথা বিবেচনা করে এখানকার বড়বড় হাসপাতাল গুলোতে রয়েছে বাংলা দোভাষীর ব্যাবস্থা। রয়েছে ইংলিশ, স্প্যানিশ এর পাশাপাশি আপনার প্রিয় ভাষা বাংলায় নির্দেশিকা। অর্থাৎ আপনার দৈনন্দিন চলাফেরায় আপনি আপনার প্রিয় ভাষাকে বেশ আপন করে পেতে পারবেন এখানে।

কিন্তু ঐ যে বলেছিলাম একটা "অদ্ভুত বৈপরিত্যের" দিক থেকে একটা কেমন যেন মিল রয়েছে। আর সেটা হচ্ছে কোন ভারতীয় পাকিস্তানীদের সাথে আমাদের বাংলা বিদ্বেষের দিক দিয়ে। আরেকটু সোজাভাবে বললে আমাদের হিন্দি-উর্দু প্রেম বা এই দুই ভাষায় আমাদের পারদর্শিতা(!) দেখানোর প্রতিযোগিতায় নামার দিক থেকে। 

জীবন জীবিকার তাগিদে এখানে শিক্ষিত, অশিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত বিভিন্ন রকম মানুষের আগমন ঘটে। কেউ ইংরেজি ভাল জানে, কেউ দীর্ঘদিন এখানে থেকে ইংরেজি ভাল রপ্ত করে ফেলেছে, কেউ বা ভাল ইংরেজি পারে না। কিন্তু কোন ভারতীয় পাকিস্তানীর সাথে কথা বলতে গেলেই কিভাবে যেন অনেক বাঙালিই একেকজন দক্ষ হিন্দি-উর্দু বক্তা বনে যান! অথচ এমনও নয় যে এদের অধিকাংশই খুব ভাল হিন্দি বলতে পারেন এমনকি যারা ভাল ইংরেজি বলতে পারেন তাদেরও অনেকে নিতান্তই না ঠেকলে আর ইংরেজি বলতে চান না। 

অথচ এই মানুষগুলাই আমরা দেশে থাকলে ২১ শে ফেব্রুয়ারি আসলে একেকজন গালে মুখে রঙ দিয়ে "২১" লিখে, শহিদ মিনার এঁকে, মাথায় লাল সবুজ কাপড় বেঁধে একেকজন বিশাল বড় দেশপ্রেমিক বনে যাই। বাংলা প্রেমিক বনে যাই! সর্বস্তরে বাংলা চালুর দাবী জানাই।
সপ্তাহ তিনেক আগে আমার সাথে ঘটা একটা ঘটনার কথা খুব মনে পড়ছে। প্রাসঙ্গিক মনে করে এখানে বলতে চাই।

ঢাকায় থাকতে এক বড় ভাইয়ের সাথে পরিচয় ছিল। ধানমন্ডিতে থাকতেন উনি। উনার নামটা এখানে প্রকাশ করতে চাইছি না। ২০১৩ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারীর সকালে উনি আমাকে একবার কল দিলেন। ছুটির দিন। আমিও শান্তি মত ঘুমাচ্ছিলাম। আধোঘুম চোখেই উনার ফোন রিসিভ করতেই-

-- "কি মিয়া! আজকের দিনেও ঘুম? শহীদ মিনারে নিশ্চয়ই যাও নাই ফুল দিতে? হায়রে বাঙালি!! এই শোন। আমি কেয়ারী প্লাজায় আছি। তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হইয়া চইলা আস।"

কেয়ারী প্লাজা আমার বাসার কাছেই। আমি সকাল সকাল ঘুম ভাঙ্গা এবং উনার এই খোঁচা মারা কথার বিরক্তি নিয়ে ঘুম থেকে উঠে কোন রকম ফ্রেশ হয়ে গেলাম উনার সাথে দেখা করতে। গিয়ে দেখি উনি একটা ফাস্ট ফুডের দোকানে বসা। সাথে আরো তিনজন। এক গালে "অমর একুশে" লেখা আর আরেক গালে শহীদ মিনার আঁকা। লাল পাঞ্জাবি। একটা হাত পাশে বসা এক সুন্দরী মেয়ের কাঁধে। মেয়েটির গালেও প্রায় একই রকম কিছু একটা আঁকা ছিল। লাল সাদা শাড়ি পরা। দেখে বোঝাই যাচ্ছিল উনারা আজকে বেশ প্রস্ততি নিয়েই ২১ শে ফেব্রুয়ারী "পালন করতে" বেরিয়েছেন এবং প্রাথমিক ভাবে সাফল্যের সাথে সেটা সম্পন্নও করেছেন। আমাকে ঐ আপুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েই শুরু হল উনার আরেক দফা বাঙালিপনা!

-- "কিরে ভাই, আজকের দিনে একটা পাঞ্জাবী পড়ে বের হতে পারলা না! জিন্স টি শার্ট তো সারা বছরই পড়ে থাক আজকের দিনে এসব না পড়ে একটা পাঞ্জাবী পড়লে কি হত?"
বুঝলাম আজকে উনার বাঙালিপনা পুরা তুঙ্গে। আর আমাকেই পেয়েছেন এই বাঙালিপনার শো-অফ করার জন্য। তাই টুকটাক কথা বলেই তাড়াতাড়ি বিদায় নিলাম সেখান থেকে।

কাকতালীয় ভাবে উনার সাথেই আমার এই নিউ ইয়র্ক শহরে আবার দেখা। ২০১৫ তে আমেরিকা এসেছেন। ফেসবুকে আমার নম্বর চেয়ে আমাকে কল করে একবার দেখা করতে বললেন। আমিও গেলাম একদিন সময় করে উনার সাথে দেখা করতে। গিয়ে আবারো অবাক হলাম। এবং কারণ এবার পুরা উলটো!!

নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে একটা দোকানে কাজ করা সেই ভাই এখন পুরোদস্তুর হিন্দি বলে! উনার মুখ থেকে অনর্গল হিন্দি শুনে আমার আসলেই উনাকে মেলাতে অনেক কষ্ট হচ্ছিল যে এই লোকটিই আমাকে মাত্র দুই বছর আগে "২১ শে ফেব্রুয়ারী" নিয়ে কি ভাষণটাই না দিয়েছিলেন! 

দোকানের অন্যান্য সহকর্মীদের সাথেও আমাকে হিন্দিতেই পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমি একপর্যায়ে উনাকে মনে করিয়ে দিলাম আমার সাথে একবার উনার দেশপ্রেম দেখানোর কথা এবং উনার মত লোকের মুখেই আবার হিন্দি বলার কারণ জানতে চাইলাম। উনি খুব সহজ ভাবেই বললেন যে মালিক ইন্ডিয়ান। তাই নাকি টুকটাক বলতে বলতে এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। মাত্র দুই বছরেই উনার "বাংলা প্রেম" এভাবে উবে যেতে দেখে আমি আর কথা বাড়ালাম না।

তবে আমার প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করছিল; হিন্দি না জানলে কি উনার মালিক উনাকে কাজে রাখতেন না? উনার জায়গায় উনার মালিক যদি কোন আমেরিকানকে কাজে রাখতো তাহলে কি সেও তার মত হিন্দি বলত? উনাকে দিনে এমন কয়টা কাস্টমারের সাথে কথা বলতে হয় যারা হিন্দি ছাড়া আর কোন ভাষা জানেনা?

অথচ খোদ ভারতেরই বিশাল একটা জনগোষ্ঠী হিন্দি বলে না বা বোঝে না। দক্ষিন ভারতের হলে তো একদমই বোঝেনা। একজন হিন্দি ভাষাভাষী ও একজন হিন্দিভাষী নন এমন দুইজন যখন কথা বলে তখন তাদের ইংরেজিতেই কথা বলতে আমি দেখেছি। 

যেটা দেখে আমি সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি তা হল একটা বাঙালী মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টে ৮-১০ জন কর্মচারীর মধ্যে মাত্র একজন পাকিস্তানীর জন্য মালিকসহ সবাই কিভাবে হিন্দি/উর্দুতে কথা বলে। কিভাবে নিজেদের হিন্দিতে পারদর্শিতা দেখানোর প্রতিযোগিতায় নামে। এসব দেখে আমার তখন মনে হয় গোলামীর বৈশিষ্ট্যটা বোধহয় আমরা জাতিগতভাবেই বহন করে চলেছি। এবং সেটা করতে ভালোওবাসি।  

ভেবে অবাক লাগে যে, আফ্রিকার যুদ্ধ বিধ্বস্ত কিছু দেশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাওয়া বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের কল্যানে যেখানে হাজার মাইল দূরের দেশগুলোতেও অনেক মানুষ বাংলাকে ভালবেসেছে। বাংলায় অনেকে কথাও বলে বেশ সুন্দরভাবে। চমৎকার বাংলা গান গায়। সেখানে আমরা কাছের দেশের মানুষের কাছে আমাদের বাংলা ভাষার মর্যাদা খুইয়ে বসি। 

একটা সরল স্বীকারোক্তি করতে চাই। আর সেটা হচ্ছে আমি নিজেও অনেক হিন্দি সিনেমা দেখি। কিছু ফ্রেঞ্চ আর ইরানী সিনেমাও দেখেছি। সিনেমা, বই, উপন্যাস, গান এসব শৈল্পিক বিষয় গুলোকে আমি শিল্পের মানদণ্ডেই বিবেচনা করতে চাই। হিন্দি সিনেমা দেখার সুবাদে আমি নিজেও হিন্দি ভাল বুঝি। বলতেও পারি কিছুটা। কিছু অতি উৎসাহী মানুষদের সাথে থাকার দরুণ আর যেখানে ইংলিশের চেয়ে সুবিধাজনক সেখানে নিজে অনেক সময় হিন্দিতে কথাও বলেছি। কিন্তু পরে যখন দেখেছি যাদের সুবিধার্থে তাদের ভাষায় কথা বললাম তাদের অনেকে জানেই না যে আমরা আমাদের ভাষা রক্ষার জন্য রক্ত দিয়েছি। তারা মনে করে আমরা ভারতবেষ্টিত ক্ষুদ্র একটা দেশ (অনেকে তো ভারতের অংশই মনে করেছে) তাই আমরা হিন্দি কেন জানব না! একইভাবে পাকিস্তানীরা মনে করে আমরা একসময় পাকিস্তানের অংশ ছিলাম। তাহলে আমাদের বাপ দাদারা উর্দু জানার কথা তাই আমাদেরও উর্দু পারার কথা! আমাদের বাঙালিদের সম্পর্কে তাদের এমন ধারণা দেখে অনেক খারাপ লেগেছে। নিজেদের অনেক ক্ষুদ্র আর দুর্বল মনে হয়েছে।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ যেখানে থাকে সেখানের অবস্থাই যদি এরকম হয় তাহলে মধ্যপ্রাচ্য সহ বিশ্বের বাকি অংশের অবস্থা কি তা সহজেই অনুমেয়।

এ তো গেল কেবল দেশের বাইরে থাকা বাংলাদেশিদের কথা। দেশের ভেতরের অবস্থাও খুব বেশি সুবিধার নয়। এর মধ্যে কয়েকটা ঘটনার কথা তো না বললেই নয়।

বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর ভারতের একটা টিভি চ্যানেলে দেয়া একটা সাক্ষাতকার দেখলাম যেখানে উনি ঠিকমত বলতে না পারলেও হিন্দিতে বেশ কষ্ট করে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন! ভেবে খুব লজ্জা লাগছে, জনাব ইনু কি ইংলিশে জীবনে কোথাও কথা বলেন নি? একটি স্বাধীন দেশের সরকারের প্রতিনিধি হয়ে একটা টিভি সাক্ষাতকারে উনি কিভাবে হিন্দিতে কথা বলার ধৃষ্টতা দেখান? ইনু কি এতটাই বাধ্য হয়েছিলেন হিন্দিতে কথা বলার জন্য? সাক্ষাৎকার নেয়া ঐ সাংবাদিককে কি তিনি ইংরেজিতে কথা বলার অনুরোধ করতে পারতেন না? 
অথচ উনার হাতেই বাংলাদেশের গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রন! কি অদ্ভুত!!

গত ৩০ জুলাই আরো একটি ভিডিও দেখলাম যেখানে গুলশানে জঙ্গি হামলা নিয়ে "বিবিসি হিন্দি"র একজন সাংবাদিক বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়য়ে  গিয়ে সেখানকার ছাত্র ছাত্রীদের মতামত নিচ্ছেন। উপরের ঘটনার মত এক্ষেত্রেও ঐ সাংবাদিক হিন্দিতে ছাত্র ছাত্রীদের প্রশ্ন করছেন আর সব ছাত্র ছাত্রীরা পারুক না পারুক হিন্দিতে বেশ আগ্রহের সাথে কথা বলে যাচ্ছে। যেমনটা আগে স্কুলে আমাদের ইংরেজির শিক্ষকেরা আমাদের বলতেন "ভুল হোক শুদ্ধ হোক ইংলিশ ক্লাসে সবাই ইংলিশেই কথা বলবে। তবেই না ইংলিশ শিখবে।"

একটা ছাত্র বা ছাত্রী সাংবাদিককে ইংলিশে প্রশ্ন করার কথা বলা দূরে থাক সবাই যেন হিন্দিতে কথা বলে বেশ মজা পাচ্ছিল। সাংবাদিক যখন জানতে চাচ্ছিল তারা হিন্দি জানে কিনা আর কিভাবে হিন্দি শিখেছে তখন অকপটে তারা হিন্দি সিরিয়াল আর সিনেমা দেখে হিন্দি শেখার কথা স্বীকার করে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে ঐ ছাত্র ছাত্রীদেরও ইনুর মত কি এমন কারণ ছিল হিন্দিতে কথা বলার। যেখানে ঐ অনুষ্ঠানে তারা বাংলাদেশের শিক্ষিত সচেতন যুব সমাজের প্রতিনিধি হিসাবে সাক্ষাৎকার দিচ্ছে! আর হিন্দি চ্যানেলের ঐ সাংবাদিকই বা কিভাবে এত ভরসা পেলেন যে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের হিন্দিতে সাক্ষাৎকার নেয়া যাবে? অনুষ্ঠানটি হিন্দি ভাষার দর্শকদের জন্য হলেও কি কথাগুলো পরে হিন্দিতে অনুবাদ করা যেত না? 

পৃথিবীর বহু ভাষার মাঝে নতুন কোন ভাষা জানা দোষের কিছু নয়। বরং সেটা একটা গুণ। কিন্তু তাই বলে যেখানে মতামত অভিমত দেয়া নিয়ে কথা বলার দরকার হয় এবং যেখানে সেই ভাষার দক্ষতা দেখানোটা দরকারি কোন বিষয় নয় সেখানে নিজেদের স্বকীয়তা, নিজেদের পরিচয়কে এভাবে বিকিয়ে দেয়ার মাঝে দেউলিয়াপনা ছাড়া আর কিছুই থাকে না।
 এই ভিডিওর ফেসবুক লিঙ্কের দুটি কমেন্ট এখানে দিলামঃ

"What made you think that BBC can take interviews in Hindi in a Bangla speaking country? Whats wrong with English? And these stupid students are taking pride that they can speak in Hindi. Brainless creatures! What a waste of national resources.-- Mushfique Saleheen"

"What did our youngsters fight for in 1952 then?????? Why did we not appreciate speaking in Urdu that time???????-- Farhat Tasannum Farah"


তবে উপরের সবকিছুকে ছাপিয়ে যাওয়া একটি ঘটনা আমাদের ভুলোমনা বাঙালিকে আবার একটু মনে করিয়ে দিতে চাই। যেটা আমরা সবাই চুপেচাপে হজম করে নিয়েছি। তবু আবার একবার যাবর কাটি।

খুব সম্ভবত এ বছরেরই (২০১৬)  শুরুর দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। তার সফরের এক পর্যায়ে উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দেন। এবং বলা বাহুল্য সেই ভাষণও তিনি দেন হিন্দিতে!!

১৯৫২ সালে ঢাকায় জিন্নাহ এসে উর্দুকে রাস্ট্র ভাষা করার ঘোষণা দেয়ার পর যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রথম আন্দোলনে নেমেছিল আজকে সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আরেকটি দেশের সরকার প্রধান হিন্দিতে ভাষণ দিয়ে যান! আর কালের পরিক্রমায় সেই আন্দোলনকারী দেশের আজকের মানুষেরা তা হজম করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলি। অনেকে হয়ত বলবেন "জিন্নাহ তো এসে তখন উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন কিন্তু মোদী তো কেবল হিন্দিতে ভাষণ মাত্র দিয়েছেন এতে এত চিন্তার কি আছে?" বিবর্তনের ফলে আজ মানুষ রূপে ভিন্ন কোন প্রাণীতে পরিণত হওয়া সেসব প্রাণীরা যেন এই ভেবেই নিজেদের সন্তুষ্টি খুজে নেয়। তাদের আর কিছু চিন্তা করার দরকার নেই।

মোদী কি বিশ্বের আর কোন দেশে এমনকি প্রতিবেশি দেশ পাকিস্তানে গিয়েও হিন্দিতে এভাবে ভাষণ দিতে পারতেন? বাংলাদেশের কোন প্রধানমন্ত্রী কি ভারতে গিয়ে নিজের মাতৃভাষার কথা বলে বাংলায় এভাবে কোন লিখিত ভাষণ দিতে পারতেন?? 

আসলে আমাদের এই প্রজন্মটা অনেক বেশি আত্মকেন্দ্রিক আর স্বার্থপর এবং আত্মপরিচয় শঙ্কটে ভোগা একটা প্রজন্মে পরিণত হচ্ছি। যার কারনে একান্তই নিজের কোন ব্যাপার না হলে আমরা সমষ্টিগতভাবে কিছু ভাবতে পারছি না। আর এরকমটা দীর্ঘসময় চলতে থাকলে সেদিন হয়ত খুব বেশি দূরে নয় যখন আমাদের প্রতিবেশিরা তা বটেই এমনকি আমদেরই একটা প্রজন্ম হয়ত ভুলে যাবে আমাদের বাঙালি পরিচয়ের সংগ্রাম আর ইতিহাসের কথা।

লেখক: প্রবাসী প্রকৌশলী

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে jagoroniya.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরণের দায় গ্রহণ করে না।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত