আমরা সবাই চাষীর সেই লোভী বউটা!
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০১৮, ১৮:৪৮
এই গল্পটা আমরা সবাই জানি। এক কৃষক একটি সোনার ডিম পাড়া হাঁস এনে দিয়েছিলো বউকে। বলেছিলো, একে যত্ন করো, হাঁসটা রোজ একটা করে সোনার ডিম পাড়বে। চাষীর বউটা লোভী ছিলো। রোজ একটা ডিমে তার মন ভরছিলো না। একসাথে বেশি ডিম পাওয়ার আশায় সে হাঁসটাকে একদিন জবাই করে ফেললো।
ফলাফল যা হবার তাই হলো। সোনার ডিম একসাথে তো আর পেটে থাকে না৷ ধীরে ধীরে একটার পর আরেকটা তৈরি হয়। চাষীর বউয়ের আমও গেলো, ছালাও গেলো।
আমরাও যেনো ঠিক চাষীর সেই লোভী বউটা। নিজেরা তো কিছু করার মুরোদ রাখি না। কিন্তু অন্যকে কিছু ভালো করতে দেখলে অমনি আমাদের লোভী জিভটা লকলকিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। লোভী চোখদুটো দুরভিসন্ধিতে চকচক করতে থাকে। নিজের সব কুবুদ্ধি প্রয়োগ করে তড়িঘড়ি স্বার্থ হাসিলে নেমে পড়ি। সব গোপন কামনা-বাসনা আদায় করে নিতে চাই একবারে। কিন্তু কেন? আমরা কি আরেকটু সৎ, দায়িত্বশীল হতে পারি না?
আমাদের দামাল সন্তানেরা যখন দেশের জন্য, দশের জন্য একের পর এক গণআন্দোলন গড়ে তোলে, আমরা তখন অতি লোভে ঝাঁপিয়ে পড়ে সব ভন্ডুল করে দেই। গণজাগরণ মঞ্চকে আমরা রেহাই দেইনি, এবারও রেহাই দিচ্ছি না শিশু কিশোরদের এই অনন্য সুন্দর আন্দোলনটাকে। কিন্তু কেন? এই আন্দোলনটার উপর আমাদের সকল নোংরামি নিয়ে সওয়ার হয়েছি কেন আমরা? আন্দোলনটাকে বিতর্কিত করে কি লাভ হচ্ছে আমাদের?
ছবি ফটোশপ করে, মিথ্যা ভিডিও বানিয়ে, গুজব ছড়িয়ে পুরো আন্দোলনটাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছি। আমরা যারা নিজেদের দায়িত্বশীল মনে করি তারাও এইসব ছবি, ভিডিও, গুজব শেয়ার করছি কোন রকম যাচাই বাছাই ছাড়াই। আমাদের এসব অপরিণামদর্শী আচরণের কারণে মানুষ এখন কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা এটা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
আন্দোলনকারীরা কি আক্রান্ত হয়নি কোথাও? হয়ে থাকলে সেসব খবর, ছবিই কি যথেষ্ট ছিলো না? আপনাদের কারণে আন্দোলনকারীদের আক্রান্ত হওয়ার সত্য খবরও এখন বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে বসেছে। এরপর রাখাল বালকের অবস্থা হবে।
আপনি বিপ্লব ঘটাতে চান ভালো কথা। সমাজ বদলাতে চান ভালো কথা। সরকার বদলাতে চান, সেও ভালো কথা। আপনি সেটা চাইতেই পারেন। কিন্তু মিথ্যা আর চালাকি দিয়ে আপনার এসব স্বপ্নের কোনটাই পূরণ হবে না। সমাজ বদলাতে সততা ও স্বাভাবিক বিবেচনা বোধের প্রয়োজন হয়। আপনাদের সেটার অভাব আছে।
সব কিছুতে আপনাদের নোংরা বাম হাতটা ঢুকানো এবার বন্ধ করুন প্লিজ। হ্যাডম থাকে তো নিজেরা জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলুন। নিজেদের যোগ্যতায় বিপ্লব ঘটান, সমাজকে বদলে ফেলুন, সরকারকে নামিয়ে দিন। শুধুমাত্র এই আন্দোলনটাকে ছেড়ে দিন দয়া করে। এই বাচ্চাগুলোর জীবন নিয়ে, স্বপ্ন নিয়ে খেলবেন না। আপনাদের কারণে ওরা স্বপ্ন দেখতে ভুলে যাবে। নিরাপত্তার কথা না হয় বাদই দিলাম।
আসেন, এবার একটু ক্ষেমা দেই আমরা সবাই। নাকি সোনার ডিম পাড়া হাঁসটাকে পুরো জবাই না করে আপনারা থামবেন না?
লেখক: কবি ও সাহিত্যিক