জন্ম থেকে যার দাম
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০১৮, ২৩:১০
জন্ম থেকেই ছেলে শব্দটার অনেক দাম। একজন গরীব বাবা মার কাছে ছেলে সন্তান মানে কিছুটা দুশ্চিন্তা মুক্ত। কারণ আমাদের সমাজে মেয়ে বিয়ে দিতে গিয়ে যৌতুক দিতে হয় যা একজন গরীব বাবামার কাছে বোঝা মাত্র। অবশ্য বড় লোকদের কাছে যৌতুক শব্দটার বিকল্প নাম হলো উপহার। তারা বিয়ের সময় মেয়েকে অনেক কিছু দেয় যা ছেলের পরিবারও উপহার হিসেবে নেয়। আবার ধনী মানুষদের ছেলে সন্তান জন্মের বিষয়টি গৌরবের কারণ তাদের বংশ মর্যাদা ও সম্পত্তি দেখাশুনার জন্য ছেলে প্রয়োজন।
এখন আসি আসল কথায় এখনকার যুগে প্রতিটা মেয়ের বাবামার টাকা থাকা খুব প্রয়োজন। কারণ আপনি যেখানে মেয়ে বিয়ে দিচ্ছেন সেই ছেলের পরিবারের সম্পত্তি থাকুক আর না থাকুক তার সবচেয়ে বড় পরিচয় সে একজন ছেলে। আজকাল ছেলে ও ছেলের বাবামায়েরাও অনেক চালাক। যেখানে ভাইবোন বেশি সেখানে বিয়ে করাবে না বর্ং বাবা মার এক মেয়ে কিনা সেটা আগে দেখে। এক মেয়ে হলে তো কোন কথাই নেই সেই সম্পত্তি ঘরে এক সময় এমনি পাবে। সে মেয়েদেরও তারা ভালই কদর করে। কথায় আছে তেলা মাথায় সবাই তেল দেয়।
অনেক ছেলে আছে নিজের কি আছে তা চিন্তা করে না বরং সবসময় খোটা দেয় বউকে তোমার বাবার বাড়িতে কি আছে, অমুকের বউ তার বাবার বাড়ি থেকে কত কিছু নিয়ে আসে। অথচ মেয়েটা তারই সংসারে বাপের বাড়ির আরাম আয়েশ ফেলে যে কত কষ্ট করে সংসার করছে তা কখনও স্বামী হয়ে চিন্তা করে না। আবার জামাই আদরের কমতি হলে বউকে সময় বুঝে ভালই কথা শোনানো যায়।
মেয়ের বাবা দিতে পারলে বা জামাই আদর ভাল হলে ছেলেরা শ্বশুর বাড়ি বলতে পাগল থাকে। না দিতে পারলে মেয়েদের যে কত কথা শুনতে হয়, নীরবে নিভৃতে যে কত চোখের জল ফেলতে হয় তা একজন ভুক্তভোগীকে বুঝতে হয়।
আবার অনেক ব্যতিক্রম ছেলে আছে যারা শ্বশুরবাড়িকে সম্মানের চোখে দেখে এবং প্রয়োজন হলে সাহয্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে ছেলের দায়িত্ব পালন করে থাকে। তবে এর সংখ্যা অনেক কম। বেশির ভাগ ছেলেরা যদি এরকম হতে পারতো তাহলে হয়ত অনেক মেয়েকে চোখের জল ফেলতে হতো না।
আবার একই পরিবারে এক ছেলে যদি বড় লোকের মেয়েকে বিয়ে করে অন্য ছেলে যদি একটু গরীব পরিবারে বিয়ে করে তার জন্যও সে মেয়েকে ছেলের পরিবার থেকে অনেক কথা শুনতে হয়। কারন বড় লোকের মেয়ে হিসেবে সে বাপের বাড়ি থেকে যা আনতে পারবে অন্য বউ তা পারবে না। মেয়েরা মনে হয় শুনার জন্য জন্ম হয়েছে।
আবার চাকুরিজিবী মেয়েরা যে অর্থ উর্পাজন করে সংসারটাতে কাজে লাগাচ্ছে তা না ভেবে বরং তাদেরকেও অনেক সময় শুনতে হয় বাপের বাড়ি থেকে এ পর্যন্ত কি এনেছে। তার মানে বউ যে সংসারে টাকা আয় করে দিচ্ছে তা মনে রাখার চেষ্টা তারা কখনও করে না। এসব দেখলে বা শুনলে মনে হয় মেয়েদের সত্যি কোন দাম নেই তা যতই তারা শিক্ষিত হোক। তখন আরও মনে হয় মেয়েরা বুঝি বানের জলে ভেসে এসেছে কিংবা আকাশ থেকে টুপ করে পড়েছে।
ঘুরে ফিরে সেই যৌতুকের কথায় আসি। এখনও এই বিষয়টা আমাদের সবার মাঝে সুপ্ত আছে। যৌতুকের কারণে অনেক নারী বিয়ের পর নির্যাতনের শিকার হয়। এখনও মাঝে মাঝে দেখি নারীরা যৌতুকের বলি হয়। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অনেকে বাচ্চাসহ নিজের জীবনকে শেষ করে দেয়।
তাই ছেলের বাবা মায়েদের ছেলেকে এখন থেকে সেই শিক্ষা দিতে হবে যাতে তারা কখনও মেয়ের বাবার বাড়ির সম্পত্তি আশা না করে। আমরা যদি ঘর থেকে এ শিক্ষা শুরু করি তাহলে হয়ত একদিন আমাদের সমাজটার পরিবর্তন আসবে।
লেখক: বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা