রাগ-ঘৃণা না হলে, বেঁচে থেকে কি হবে?
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০১৮, ২৩:৫১
তুমি সারাক্ষণ এতো রেগে থাকো কেন আপু? সেদিন এক আড্ডায় নিজের সম্পর্কে কথাটা শুনে কেমন যেনো লাগলো। ভার্সিটির এক ছোটবোনের মনে অনেক প্রশ্ন আমাকে নিয়ে।
আমি কেন রেগে রেগে লিখি?
কেন এতো ঘৃণা?
এতো তথ্য কই পাই?
সারাদিন পড়াশোনা করি কিনা?
মানুষজন যে আমার উপর রাগ করে তাতে আমি ভয় পাই কিনা?
সেও আমার মতো লিখতে চায়, কিন্তু ভয় পায়। যদি কেউ তার ক্ষতি করে। আর তাছাড়া ওর নাকি আমার মতো এতো রাগ আর ঘৃণাও নাই।
একসাথে এতগুলো প্রশ্ন আর এনালাইসিস শুনে থমকেছিলাম একটু, তারপর হাসি পেলো। মজা করে পাশ কাটিয়ে গেলাম। পরিবেশটা হাসিঠাট্টাময়, এইসব এনালাইসিসের জন্য উপযুক্ত না। বললাম, তোর টকশোতে যাওয়া উচিত। তুই ভালো করবি।
কিন্তু কথাটা আমাকে ভাবিয়েছে। আমি যেসব বিষয়ে রেগে লিখি, সেসব বিষয়ে রাগ না হওয়াটাই বরং বিস্ময়কর আমার কাছে। পাঁচ বছরের পূজাকে ব্লেডের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত যৌনাঙ্গ নিয়ে মৃতপ্রায় পড়ে থাকতে দেখে বা তিন বছরের সোনিয়াকে ধর্ষণের পর মেরে ফেলতে দেখে আমার রাগ এবং ঘৃণা তৈরি না হলে জানবো আমি আর বেঁচে নেই।
মুয়াজ্জিন কর্তৃক ধর্ষিত ছোট্ট সুমাইয়ার লাশ পুকুরের পানিতে ভেসে উঠতে দেখে রাগ এবং ঘৃণা তৈরি না হলে জানবো আমি আর বেঁচে নেই।
ছোট্ট অসহায় এতিম বালককে গেলমান হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেখে রাগ এবং ঘৃণা তৈরি না হলে জানবো আমি আর বেঁচে নেই।
এসিডে ঝলসানো মানুষের মুখ দেখে রাগ এবং ঘৃণা তৈরি না হলে জানবো আমি আর বেঁচে নেই।
নির্যাতন করে কোন গৃহকর্মীকে বা পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে কোন কিশোরকে মেরে ফেলতে দেখে আমার রাগ এবং ঘৃণা তৈরি না হলে জানবো আমি আর বেঁচে নেই।
নাসিরনগরে, সিরাজগঞ্জে, নেত্রকোণায়, রামুতে, ফরিদপুরে, বরিশালে, দেশের আনাচে কানাচে সংখ্যালঘুদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা দেখেও আমার রাগ এবং ঘৃণা তৈরি না হলে জানবো আমি আর বেঁচে নেই।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কারো আখের গোছানোর ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেখে আমার রাগ এবং ঘৃণা তৈরি না হলে জানবো আমি আর বেঁচে নেই।
বাংলার বুকে দাঁড়িয়ে পাকিস্তান প্রেমে কাউকে মাতোয়ারা হতে দেখে আমার রাগ এবং ঘৃণা তৈরি না হলে জানবো আমি বেঁচে নেই।
"আমার সোনার বাংলা" গাইতে গিয়ে গলা ধরে না এলে, চোখদুটো ভিজে না গেলে নিশ্চিত হবো আমি আর বেঁচে নেই।
এমনি আরো যতো কারণে আমি রেগে যাই, চিৎকার করি, সেগুলোতে রাগ তৈরি না হলে, ঘৃণা তৈরি না হলে, বেঁচে থেকে কি হবে? নিজের দেশের জন্য চোখ ভিজে না এলে বেঁচে থেকে কি হবে? জীবন্মৃতের মতো বেঁচে থাকা আমার পোষায় না। আর ভয়? ভয়ে ভয়ে বাঁচা আবার বাঁচা নাকি?
তুমি তোমার মতো হও ছোটবোন। আমার মতো হয়ে কাজ নেই।
লেখক: তরুণ কবি ও সাহিত্যিক