সবার জন্য একই ধারার, বৈষম্যহীন শিক্ষা চাই

প্রকাশ : ৩১ মে ২০১৬, ১৩:০২

বাকী বিল্লাহ

হঠাৎ করে শিক্ষা নিয়ে সবাই মাথা ঘামাচ্ছেন, এটা ইতিবাচক ঘটনা। মাছরাঙা টিভিকে ধন্যবাদ- একই সাথে শিক্ষা ব্যবস্থার সাম্প্রতিক হাল হকিকত ও টিআরপি নির্ভর মিডিয়া চরিত্রের স্বরূপ হাজির করার জন্যে। তবে ওই টিভি রিপোর্টের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এর প্রেক্ষিতে গড়ে ওঠা জনমত। সেই জনমতে নানান বিরোধ আছে। কেউ কেউ ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে শিক্ষার বর্তমান নিম্নমান নিয়ে বিচলিত হয়ে পড়েছেন- শিক্ষামন্ত্রীর মুণ্ডুপাত করছেন। কেউ বা ওই প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তার সমালোচনা করছেন এবং সমস্যাটির আরো গভীরে গিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছেন। তবে সকলেই শিক্ষার মানোন্নয়নের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন- এই পুরো ঘটনাপ্রবাহে সেটাই হচ্ছে প্রাপ্তির দিক।

এই সুযোগে আমি দুটি প্রস্তাবনা রাখতে চাই। এর কোনোটিই আমাদের কাছে নতুন নয়, দীর্ঘকাল ধরে এই কথাগুলো আমরা বলছি এবং এই প্রস্তাবনাগুলোকে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছি। যে ধরনের রাষ্ট্র চরিত্র এখানে গড়ে উঠেছে শিক্ষা ব্যবস্থা তার বাইরের কিছু নয়। সুতরাং মানসম্পন্ন শিক্ষা কাঠামো গড়ে তুলতে হলে শিক্ষা আন্দোলনের বিকল্প নেই- সেই কথাটিকে মাথায় রেখেই এই প্রস্তাবনা সবার সামনে হাজির করা।

১. বাংলাদেশে শিক্ষা বরাদ্দ জিডিপির শতকরা দুই শতাংশেরও কম। সাম্প্রতিক সময়ে অন্যান্য দেশের শিক্ষা ব্যয়ের যেসব পরিসংখ্যান দেখেছি, তাতে বাংলাদেশই জিডিপির সবচেয়ে কম অংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দেয়। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোও শিক্ষখাতে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি জিডিপি খরচ করে। আফ্রিকার কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যানতো রীতিমত বিস্ময় জাগানিয়া। অনেকেই হয়ত মাছরাঙা টিভির প্রতিবেদনের আলোকে শিক্ষার নিম্নমানের সাথে শিক্ষা ব্যয়ের সম্পর্ক এই মুহূর্তে খুঁজে পাবেন না। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি- বাকী পৃথিবীর কাছ থেকে শিক্ষা নিতেই হবে। শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানো অর্থাৎ শিক্ষাখাতে জিডিপি বরাদ্দ না বাড়িয়ে কোন দেশই মানসম্মত শিক্ষা কাঠামো গড়ে তুলতে পারেনি। সুতরাং আমাদেরও সেটি পারার কোনো কারণ নেই। আমার দাবি করে এসেছি- শিক্ষাখাতে জাতীয় আয়ের আট ভাগ অথবা জাতীয় বাজেটের পঁচিশভাগ বরাদ্দ দিতে হবে। এখনই সেটা সম্ভব না হলেও দাবি তুলতে হবে- আগামী বাজেট থেকেই শিক্ষাখাতে জাতীয় আয়ের অন্তত তিন ভাগ বরাদ্দ দিতে হবে।

২. বহুধাবিভক্ত প্রাথমিক শিক্ষা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার গোড়াতেই বিশৃংখলা সৃষ্টি করে রেখেছে। এখানে সাধারণ শিক্ষা, ইংরেজী মাধ্যম শিক্ষা এবং মাদ্রাসা শিক্ষা- এরকম তিনটি বড় ধারা শিক্ষা কাঠামোতে বৈষম্য এবং বিভাজন তৈরি করেছে। এর বাইরে অন্যান্য ছোটখাট আরো কয়েকটি ধারা রয়েছে। তবে মোটা দাগে উল্লেখিত তিনটি ধারাতেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা বিভাজিত হয়ে আছে। এই বিভাজন টিকিয়ে রেখে সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়। আমাদের দাবি তুলতে হবে- সবার জন্য একই ধারার, বৈষম্যহীন প্রাথমিক এবং নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষা প্রদানের। সেই শিক্ষা গ্রহণ হতে হবে মাতৃভাষায় (মাতৃভাষা মানে শুধু বাংলা নয়, প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর যার যার মাতৃভাষা)।

এর বাইরে শিক্ষার মানোন্নয়নে আরো শত শত প্রস্তাবনা আছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এই দুই দাবি বাস্তবায়ন না করে আর কোনো প্রস্তাবনা অগ্রসর করারই সুযোগ নেই।

বাকী বিল্লাহ’র ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত