স্বাধীনতার দাবিতে টুইটারে সৌদি নারীদের আন্দোলনের ঝড়

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১২:৪৭

জাগরণীয়া ডেস্ক

একজন প্রাপ্তবয়স্ক পেশাদার নারীকে ভ্রমণ বা কাজের জন্য বাড়ির বাইরে যেতে হলে অনুমতি নিতে হয় স্বামী, ভাই বা ছেলের কাছ থেকে। আদৌ তিনি বাড়ির বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারবেন কিনা সে ব্যাপারেই অনুমতি নিতে হয়। সৌদি নারীদের দৈনন্দিন জীবনের বাস্তবতার পরিস্থিতি এই। নারীরা যেখানে তাদের জীবনের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না কোনো পুরুষ অভিভাবকের অনুমোদন ছাড়া।

সে পুরুষটি হয়তো ওই নারীরই গর্ভে জন্ম নিয়েছেন এবং তার নিজ বাড়িতে রেখেই তাকে লালন-পালন করা হয়েছে। 

আবার অনেক সময় ওই পুরুষ অভিভাবকটি হন একজন অত্যাচারি অভিভাবক। যিনি তার পুরুষালি ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার নিয়ন্ত্রণে থাকা নারীর কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন। অথবা চালান আরো গুরুতর কোনো অত্যাচার।

শুধু কাজ, ভ্রমণ বা বিয়ের জন্যই পুরষ অভিভাবকের অনুমোদন দরকার হয় না। বরং কোনো নারীকে জেল থেকে ছাড়া পেতে হলেও তার পুরুষ অভিভাবকের অনুমোদন লাগে! আরো অদ্ভুত হলো, পুলিশে অভিযোগ দায়ের, স্বাস্থ্য সেবা বা জরুরি কোনো সেবা পেতে গেলেও কোনো নারীকে তার পুরুষ অভিভাবকের লিখিত অনুমোদন নিতে হয়।

হাজার হাজার নারী এই অমানবিক দশা থেকে মুক্তি পেতে এখন সামাজিক গণমাধ্যম টুইটারে একটি আন্দোলন শুরু করেছেন। ওই আন্দোলনের লক্ষ্য হলো পুরুষ অভিভাবকদের অধীনে নারীদেরকে কার্যত দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে বা শিশু বানিয়ে রাখা থেকে মুক্ত করতে সৌদি সরকারকে চাপ প্রয়োগ করা। 

আন্দোলনটি প্রাথমিকভাবে শুরু করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

‘#টুগেদারটুএন্ডমেলগার্ডিয়ানশীপ’ এই হ্যাশট্যাগে আন্দোলনটির সুচনা করে এইচআরডব্লিউ।

ওই আন্দোলনের একটি আরবী সংস্করণও শিগগিরই শুরু হয়। যা ১ লাখ ৪০ হাজার টুইটার ব্যবহারকারীকে যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই। এর পাশাপাশি ‘#স্টপএনস্লেভিংসৌদিওমেন’ হ্যাশট্যাগেও চলছে আরেকটি আন্দোলন।

সম্প্রতি সৌদি সরকার দেশটির নারীদের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষ্যে কিছু ছোট ছোট পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরিপ্রেক্ষিতে এই আন্দোলনের সুচনা হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে সৌদি নারীদেরকে অবশেষে পৌরসভা নির্বাচনে ভোটের অধিকার দেওয়া হয়। নারীরা প্রার্থী হিসেবেও অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় ওই নির্বাচনে। বেশ কয়েকজন নারী কয়েকটি আসনে জয়লাভও করেন বেশ কয়েকজন নারী। তবে পুরুষদের তুলনায় তা ছিলো খুবই নগন্য।    

কিন্তু পৌরসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়া নারীদেরকে পুরুষ কাউন্সিল সদস্যদের কাছ থেকে আলাদা থাকার আদেশ দিয়ে সরকার তাদের ওপর একটি পাল্টা আঘাত হানে। শুধু ভিডিওর মাধ্যমে বৈঠকে অংশগ্রহণের আদেশ দেওয়া হয় তাদেরকে।
গাড়ি চালানো এখনো নিষিদ্ধ সৌদি আরবের নারীদের জন্য। নিজেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও খুলতে পারেন না তারা। তাদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে সঙ্গে একজন পুরুষ অভিভাবক রাখতে হয় বাজারে যাওয়ার সময়ও। 

চলতি বছরের এপ্রিলে সৌদি আরব “ভিশন” ২০৩০ নামের একটি উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে। এতে নারীদের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো, নিজেদের ভবিষ্যত শক্তিশালি করা এবং সৌদি আরবের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য তাদেরকে সক্ষম করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সহ যারা সৌদি আরবের নারীদের পরিস্থিতির উন্নয়নে সরব হয়েছে তাদের মতে, প্রধানত পুরুষদের অভিভাবকত্বের শৃঙ্খলসহ অন্যান্য বৈষম্যমূলক নীতি দেশটির নারীদের পিছিয়ে পড়ার প্রধান কারণ। 

সূত্র: দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত