‘ডেট রেপ’ বাড়ার এ সময়ে ধর্ষকদের চরিত্র সম্পর্কে আমরা কতোটা জানি?
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০১৭, ১৫:৫৪
গণমাধ্যমে নিয়মিতই আসছে ধর্ষণের ঘটনা। কখনো শোনা যায় অশীতিপর বৃদ্ধা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন, আবার কখনো শিশুও রেহাই পাচ্ছে না। এর কারণ: বয়স, সম্পর্ক, সময়, সমাজ, বিবেক কিছুই দেখে না ধর্ষক। কিন্তু কেন? একজন পুরুষ কী কারণে ধর্ষক হয়ে উঠে? ধর্ষকদের চরিত্র নিয়ে আমরা কতোটা জানি?
যৌনতা একটি প্রাকৃতিক বিষয়, ধর্ষণ হলো এর বিকৃত রূপ। ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করাই হলো ধর্ষণ। তবে ধর্ষণের ক্ষেত্রে যৌনতার চাইতেও ক্ষমতা বেশি প্রাধান্য পেয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের কারণে ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে। পুরুষ ভাবে, একজন নারীর ওপর যে কোন ধরণের ক্ষমতা প্রয়োগ করার অধিকার তার আছে। তাই ধর্ষক বয়স কিংবা সমাজ কোনটাই মানে না।
ক্রিমিনাল সাইকোলজিস্ট ডঃ স্যামুয়েল ডি. স্মিথিম্যান তার গবেষণার জন্য একটি ফোন নম্বর দিয়েছিলেন যেখানে ধর্ষকরা পরিচয় গোপন করে সরাসরি তাদের কৃতকর্মের কথা স্বীকার করতে পারবে। গবেষক ভেবেছিলেন, তার এই ফোনে কেউ সাড়া দেবে না। তবে তাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে একে একে ২০০ জন ফোন করেছে এবং তাদের ধর্ষণের ঘটনা স্বীকার করেছে।
স্মিথিম্যান জানান, একটি ফোনের অপর প্রান্তে এক কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ছিল যে তার প্রেমিকাকে ধর্ষণ করেছিল। এক চিত্রকর জানায়, সে পরিচিত একজনের স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছে। বেভারলি হিলের এক স্কুল পরিচারক জানায়, সে ১০ থেকে ১৫টি ধর্ষণ করেছে শুধুমাত্র ধনীদেরকে শিক্ষা দেয়ার জন্য! এভাবে ৫০ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্মিথিম্যান তার নিবন্ধ ‘দ্যা আনডিটেকটেড রেপিস্ট’ এর জন্য।
তার জন্য এই গবেষণাটি খুবই চমকপ্রদ ছিল। কারণ তিনি যাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তারা সবাই খুব স্বাভাবিক কণ্ঠে সাবলীলভাবে তাদের ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছিল। আশেপাশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভালো পেশার সম্মানিত মানুষগুলোর চরিত্রেই লুকিয়ে আছে অন্ধকার ছায়া।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পুরো বিশ্বের নারীরা ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছেন। সামাজিক মাধ্যমে ‘মি টু’ হ্যাশট্যাগ ছড়িয়ে পড়ছে। সেই সঙ্গে প্রকাশিত হচ্ছে ধর্ষকদের পরিচয় যাদের অনেকেই সমাজের উঁচু স্তরের জনপ্রিয় সব মানুষ। স্মিথিম্যানের গবেষণার ফলাফলের সঙ্গে এসব মানুষের সামাজিক পরিচিতি অনেকটাই মিলে যায়।
তবে স্মিথিম্যান এর গবেষণার কয়েক দশক পরেও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ধর্ষকদের সাইকোলজিতে কিছু মিল আছে। জাতি, শ্রেণি, বৈবাহিক অবস্থা ইত্যাদি সাধারণ কিছু মিল তো আছেই, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে খুব কম বয়সেই যৌন নিপীড়নের স্বীকার হয়েছে এসব ধর্ষক। শৈশবে বা কৈশোরেই অন্য কারও মাধ্যমে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পরা কিংবা নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে তাদেরকে। বেশিরভাগ ধর্ষকই এই অপরাধকে ধর্ষণ হিসেবে স্বীকার না করে সম্মতি ছাড়া যৌন সম্পর্ক বলে মনে করে। এটা তাদের কাছে তেমন বড় কোন অপরাধ নয়।
ডঃ মালামুথ এর সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘ডেট রেপ’ এর প্রবণতা বাড়ছে। সহপাঠীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং এরপর ডেট এর নামে ধর্ষণ চলছে অহরহ। গবেষণায় দেখা গেছে, পশ্চিমা দেশে প্রতি চারজন কলেজ ছাত্রীর একজন ‘ডেট রেপ’ বা ‘ডেট রেপ’ চেষ্টার শিকার হন। ক্যাম্পাসে অপরাধের ৯০ শতাংশই ‘ডেট রেপ’ বা ‘ডেট রেপ’ চেষ্টা। এর বেশিরভাগই ঘটে মেয়েটিকে মদ বা মাদকে সাধারণ চেতনানাশের মাধ্যমে।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লোক লজ্জার ভয়ে তা প্রকাশ করছেন না ধর্ষিতা। এছাড়াও ধর্ষিতা নারীকেই সমাজে দোষী হিসেবে দেখা হচ্ছে। এতে ধর্ষকরাও খুব অনায়াসেই তাদের অপরাধ লুকাতে পারছে। অতিরিক্ত পর্ন দেখার অভ্যাসও বাড়িয়ে দিচ্ছে ধর্ষণ। বিশেষ করে গবেষকরা ‘রেপ পর্ন’কে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন। দেখা গেছে হীনমন্যতার কারণে কিংবা প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হওয়ার কারণেও ঘটছে ধর্ষণের মতো ঘটনা।
প্রতিটি গবেষণাতেই দেখা গেছে যে ধর্ষণ নিজের কৃতকর্মকে অপরাধ বলে মনে করছে না। তারা যে আইন অমান্য করছে, সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করছে এবং নারীদের জন্য নিরাপত্তাহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এই বোধটাই তাদের নেই। তাদের মতে, তারা মানুষ এবং যে কোন মানুষই নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে যে কোনো সময়।
সূত্র: নিই ইয়র্ক টাইমস/চ্যানেল আই