হয়ার ডু আই বিলং?

প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৬:০৮

গল্প কাহিনীতে শুনেছি, অপঘাতে মৃত বা আত্মহত্যা করা মানুষের আত্মার নাকি সদগতি হয়না। সেই আত্মা বারবার ফিরে আসে প্রিয়জনদের কাছে। সেই ফিরে আসার স্মৃতি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভয়াল রূপ নেয় এবং আচার অনুষ্ঠান এর মাধ্যমে সেই প্রেতাত্মাকে তৃপ্ত করে ফিরিয়ে দিতে হয়।

এই প্রেতাত্মাগুলো কেন ফিরে আসে? আসে কোনো একটা ভুলকে শুদ্ধ করতে। কোনো একটা অনিয়ম অনাচারের বিহীত করতে। সেই অন্যায়কে ন্যায় এ রূপ দিতে তারা দ্বারে দ্বারে ঘোরে ... মিনতি করে, কখনো হিংস্র হয় কখনো তার শত্রুকে শিক্ষা দেয় আজীবনের মতো। স্বর্গ বা মর্তলোক তাদের গ্রহণ করে না .. তারা এর মাঝামাঝি জায়গায় বিচরণ করতে থাকে একটি অমিমাংসিত প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ... হয়ার ডু আই বিলং??

গোটা মর্তলোকে প্রেতাত্মার কষ্ট যদি কেউ খানিকটা বুঝতে পারে, তো তারা হলো সেই জনগোষ্ঠী যারা অস্তিত্বের জন্য, পরিচয়ের জন্য, স্বীকৃতির জন্য, ভূখন্ডের জন্য লড়াই করে যায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম, একটি মাত্র প্রশ্নকে সামনে রেখে - হয়ার ডু আই বিলং? এবং একটি মাত্র উত্তর কে প্রতিষ্ঠা করতে - দিস ইস মাই ন্যাশনালিটি ..!

মাওয়াবাদী, বিচ্ছিন্নতাবাদী তামিল টাইগার কিংবা গাজার যুদ্ধ এলাকায় জন্ম নেয়া শিশুরা বুলেটের খোসা দিয়ে খেলা করে, এ কে ৪৭ এর বাঁট দিয়ে গরুর পিঠে বাড়ি দেয়। বাবা, দাদা, পরদাদার মতো সেও ভোগে আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে .. সেও লেগো খেলার বয়সে বুঝে যায় রাজনীতি ... শিখে যায় সারভাইব্যাল ব্যাসিক। আবার তাকিয়ে দেখুন রোহিঙ্গা মুসলমানদের দিকে ... অবৈধ অনুপ্রবেশ করে একটি পাসপোর্ট এর আশায় ... কেননা তার জন্ম ভূখন্ড তার কোনো দায় দায়িত্ব নিতে নারাজ। আমরা গাল দেই, ফিরিয়ে দেই ... কখনো ঠাই দেই মানবেতর কোনো শরণার্থী শিবিরে .... তবুও তারা আসতে থাকে ... ভাসতে থাকে ... পরিচয়ের আশায় ... শুধুমাত্র একটি প্রশ্নকে সামনে রেখে 

- হয়ার ডু আই বিলং? এবং একটি মাত্র উত্তর কে প্রতিষ্ঠা করতে - দিস ইস মাই ন্যাশনালিটি ..!

রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয়ের ভিডিওতে ছেয়ে গেছে ফেসবুক। প্রতিটা মানুষের চোখে ভয় আতঙ্ক অস্থিরতা বিষাদ অনুনয় সব কাটিয়ে আমার চোখে যেটা সবার আগে ধরা পড়ে, তা হচ্ছে আইডেন্টিটি ক্রাইসিস! গতকাল সিএনএন এর একটা রিপোর্টেও বলা হচ্ছিলো রোহিঙ্গা, আ ডিনাইড এথনিসিটি দ্যাট ডাস নট এক্সিস্ট !

ড্রয়ারে রাখা আমার সবুজ রঙের পাসপোর্টটার দিকে অপলক থাকিয়ে ছিলাম কিছুক্ষণ। এই ছোট্ট সবুজ বইটি আছে বলেই আমার সামনে অস্তিত্বের সংকটে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাওয়া রক্তাক্ত সেই প্রশ্নটি নেই - হয়ার ডু আই বিলং? পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে আমাকে স্বীকৃতি দিতে, আমাকে চিনিয়ে দিতে এই ছোট্ট বইটিই যথেষ্ট। আর এ বইটি আমার হাতে এসেছে আক্ষরিক অর্থে এক নদী রক্ত পেরিয়ে!

তিরিশ লক্ষ মানুষ একজনের উপর একজন দাঁড়ালে মাউন্ট এভারেস্ট তৈরী হয় ... তিরিশ লক্ষ মানুষের রক্ত বইলে তৈরী হয় অতলান্তিক বা প্রশান্তের চেয়ে বড় কোনো জলাধার .. ২ লক্ষ মা বোনের সুতীব্র চিৎকার জগতের সবচেয়ে বড় মহাকাশযানের উড়ে যাওয়ার শব্দের চেয়েও বিভীষণ ... !

আমি একবার, বারবার, লক্ষবার মাথা নত করি অমর শহীদদের স্মরণে।

মা বাবার জন্য এই পৃথিবীতে আমি এক্সিস্ট করি - স্বশরীরে আর ওনাদের জন্য কাগজে কলমে দলিল দস্তাবেজে!

লেখক: প্রকৌশলী ও প্রবাসী বাঙালি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত