আম্মু আমাদের সমর্পণের আশ্রয়

প্রকাশ : ০৭ মে ২০১৬, ১৪:০২

সঙ্গীতা ইমাম

আমি একজন অত্যন্ত ভাগ্যবান ও গর্বিত সন্তান যে খুব সুস্থ সুন্দর এক পারিবারিক পরিবেশে বাবা মা দাদী, চাচা, ফুপুর আদরে বেড়ে উঠেছি। সবাই তো ছিলেন কিন্তু সবাইকে এক সূত্রে গেঁথে রাখতেন যিনি, তিনি আমার আম্মু তাঁর কথা বলবো আজ।

আজ মা দিবস, তবে আমাদের ভাই বোনদের জীবনে আম্মুর স্নেহের পরশ প্রতি পলের। শুধু আমরা নয় আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের বেলায় ও তাই। আমি তাঁর প্রথম সন্তান নিশ্চয়ই অনেক কাঙ্খিত ও আদরের। আজ পর্যন্ত কোন কাজ আম্মু ছাড়া হয় না। যেখানে আটকে যাই সেখানেই এখনো আম্মু। আমার সন্তানরাও তাই যেখানে যে সমস্যা ওদের 'আন' আশ্রয়। ছোট বোন থাকে কানাডায়, ওখান থেকে ওর সব অভাব অভিযোগে আনন্দে, আম্মু। আমাদের ভাইটি অনেক স্বনির্ভর, সেও আম্মুর কাছে সেই ছোট্টটি আজও। আমরা ছাড়াও আম্মুর আরো ছেলে মেয়ে ছড়িয়ে আছে নাচ আর অভিনয় অঙ্গণেও।

ছোটবেলা থেকে মানুষ হবার শিক্ষা দেয়া, মানুষকে ভালোবাসতে শেখানো, দেশকে, সংস্কৃতিকে ধারণ করতে শিখেছি বাবা মায়ের ছায়ায়। যেকোন বিপদে বিভিন্ন অঙ্গণের মানুষকে বাড়িতে ছুটে আসতে দেখেছি পরম নির্ভরতায়। তাই আর আলাদা করে শেখাতে হয়নি মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয় মানুষকেই।

আমার জন্মের সময় আমার মা বিএ পড়তেন। প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী এবং যৌথ সংসারের প্রথম পুত্রবধু। বিস্তৃত কাজের মধ্যেও আমার প্রতিদিনের ছবি যেভাবে গুছানো, আমার ছোটবেলার জামা কাপড়, প্রথম বই, প্রথম লেখা সব আজো গুছানো আছে। যা আমার সন্তানরাও দেখেছে। কাপড় আমার ছেলেরাও পরেছে। একোটা গুছানো সংসারী আমার মা। আজো নিজ হাতে রান্না করেন। নাচের দল চালান। অভিনয় করেন। নিজে প্রতিদিন শুটিং এ ব্যস্ত থাকেন সকাল থেকে রাত। তারপরেও নিজেই কাপড় মেলছেন, ভাঁজ করে জায়গায় রাখছেন। এক মুহূর্ত বিরাম নেই কাজের।

আমার জন্ম হলি ফ্যামেলি হাসপাতালে। ইংরেজ ডাক্তার যখন আমাকে একটা গোলাপি জামা পরিয়ে আম্মুকে প্রথম দেখান, আম্মুর প্রথম যে শব্দটি মনে হয তা নাকি ছিল, কুমরো পটাস। আজও সেই কুমড়ো পটাসই রয়ে গেলাম। কিছুই করতে পারিনি আব্বু আম্মুর জন্য।

আজ আমার আম্মু উনসত্তর বছরেও নাচ করছেন, অভিনয় করছেন, আমাদের দেখে রাখছেন। সকলে আমার আম্মুর জন্য শুভ কামনা রাখবেন। আমাদের আম্মু যেন এভাবেই আমাদের সমর্পণের আশ্রয় হয়ে থাকেন নিরন্তর।

ভালোবাসি আম্মু তোমাকে।

সঙ্গীতা ইমাম এর ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত