মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজ জিম্মি
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০১৬, ১৭:২৪
আমার জন্মভূমিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজ জিম্মি। যে চার মূলনীতির ভিত্তিতে এদেশ প্রতিষ্ঠিত তার অন্যতম অসাম্প্রদায়িকতা আজ সংবিধান থেকে নির্বাসিত। তারই ফলশ্রুতি আজকের এই উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থান।
আমার এদেশ লালনের, হাছনের, বিজয় সরকার, নজরুল রবীন্দ্রনাথের। এদেশের মানুষ রক্তে বহন করে অসাম্প্রদায়িকতা, মানবতা আর দেশপ্রেম। তবে কোন অপশক্তি আমাদের এই আউল বাউল ফকিরের হাসি গানের দেশে রক্তের হোলি খেলা শুরু করলো? আমরা নিজেদের প্রশ্ন করি, আমরা কি আমাদের পিতা-প্রপিতার ঐতিহ্যের সেই বাংলা চাই না! এই সব শ্বাপদের চারণভূমিতে পরিণত করতে চাই প্রাণের স্বদেশ!
আমদেরই অসচেতনতায আমাদের মগজে ধর্মের আফিমের নেশা ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে খুব সন্তর্পণে, কৌশলে। এ সময় সংস্কৃতিকর্মীদের দায়িত্ব অনেক বেশি। সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছাড়া উত্তরণের কোন পথ নেই। সাধারণ সহজ সরল খেটে খাওয়া মানুষকে শোষনের জন্য পরকালের লোভ দেখিযে ধর্মের আফিমে বুঁদ করে রাখা হচ্ছে। এই বাস্তবায় সে চরমভাবে নিগৃহীত হচ্ছে। মানবেতর জীবন যাপন করছে। ভাইয়ের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরছে, কুপিয়ে মারছে বহুদিনের বন্ধু, প্রতিবেশী ভাইকে ধর্মের নামে।
মায়ের জাত নারীকে অপমান অবহেলায় আবার অন্তঃপুর বাসিনী করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে, ধর্মেরই দোহাই দিয়ে। নারীকে শুধু দেহ হিসাবে গণ্য করছে এই ধর্মের ধ্বজাধারীরা। একটা সমাজের অর্ধেককে যদি এভাবে দাবিয়ে রাখা হয় তবে সে সমাজ এগিয়ে যাবে কি করে! নারীর সমস্ত যোগ্যতা থাকা সত্বেও তাকে ঘরে বসিয়ে রাখা হবে, তার ইচ্ছা অনিচ্ছার তোয়াক্কা না করেই! হিজাবে ঢাকা হয় তাকে। কিন্তু খোলা পড়ে থাকে সে চোখ যে চোখ তাকে লেহন করে কুদৃষ্টিতে।
আমার দেশ, দেশের মানুষ ক্রমশ এই ধর্ম ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ সাংস্কৃতিক আন্দোলন। সাংস্কৃতিক আন্দোলের মাধ্যমেই মানুষের চেতনায় ঘা দিয়ে আফিমের ঘোর কাটিয়ে জাগিয়ে তুলতে হবে তাদের। এ সত্যটা যেমন বুঝতে হবে সংস্কৃতিকর্মীর তেমনি রাজনৈতিক নেতাদের। বুঝতে হবে সংস্কৃতিকর্মীর দায়িত্ব শুধু জনসভার আগে গান গেয়ে লোক জমানো নয়। জনগণের মনন গঠনের যে গুরু দায়িত্ব সংস্কৃতির তা কার্যকর করে তুলবেন সংস্কৃতিকর্মীরাই। আবহমান কাল ধরে বাংলার সংস্কৃতির যে ধারা তাকে মানুষের জীবন যাপনে মেধায মননে চেতনায় জাগ্রত রাখতে হলে আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছাড়া গত্যন্তর নাই।
সাহিত্যে, গানে, কবিতায়, আবৃত্তিতে,নাটকে,নৃত্যে,যাত্রা পালায় অসাম্প্রদায়িকতা, মানবতাকে পৌঁছে দিতে হবে সাধারণ মানুষের অন্তরে। শহরের বড় বড় প্রর্দশন গৃহে নয়,যেতে হবে প্রত্যন্ত গ্রামে, জনপদে, বাজারে। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় লোকায়ত বিষয় গুলো নিয়ে শীতকালে যাত্রা পালার আয়োজন করতে হবে গ্রাম গঞ্জে। ধর্ম ব্যবসায়ীদের সাধারণ মানুষের মগজ ধোলাই আর জঙ্গীদের জবাব দেবো আমরা বাংলার সংস্কৃতির হাতিয়ারে।
জয় বাংলা। জয় মানবতা।
সঙ্গীতা ইমাম এর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে