বিবাহ বিচ্ছেদের বেলায় গোঁসাইগিরি ছাড়েন

প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০১৭, ০১:০৪

গ্রামীণ একটা প্রবাদ আছে ‘ভাত দেওনের মুরোদ নাই, কিল মারনের গোসাই।’ প্রবাদটির সত্যতা আমাদের সমাজে বিদ্যমান। মানে পাওয়ার এক্সারসাইজ, অধিকারবলে অধস্থনকে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশলকে চ্যালেঞ্জ করাই হলো এ প্রবাদের নারকেল কথা।

সাম্প্রতিক সময়ে একটা বিবাহবিচ্ছেদের প্রেক্ষিতে সমাজে নানা শ্রেণির মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। সবাই এ বিবাহ বিচ্ছেদের বিপক্ষে। তাদের মতামতকে ডিনায়েল এটিচ্যুডে মোকাবেলা করছেন।

আহ কি সুন্দর জুটি, আইডল ছিলো, মিডিয়ার সব মেয়েরাই এমন, বাচ্চাটার কি হবে? ইস ভাবতেই পারিনি। মিথিলার ক্যারিয়ারের কি দরকার! সংসারটা করবে কেমনে, রুপালী পর্দার মোহ ইত্যাদি। লক্ষ্য করলে দেখবেন তারা খুব স্মার্টলি ডিল করেছে। যৌথভাবে এনাউন্স করেছে। কিন্তু সমবেদনা না করে ট্রলও করেছেন অনেকে। অবাক হচ্ছি যে, মানুষের একান্ত সম্পর্কের ইচ্ছা অনিচ্ছাও বন্ধক রাখতে হবে? এটা আসলো কোনো সভ্যতার মধ্যে পড়ে না। এ অনুপ্রবেশের অধিকার খুবই জঘন্য।

গত দশ বছর ধরে আমি একটা বিষয় বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করছি। তা হলো বিবাহ বিচ্ছদের কারন। কেন হচ্ছে, কেনো করছে, কোন এলাকায় হচ্ছে। তার কারনগুলো নানা জায়গায় নানা রকম। হওয়াই স্বাভাবিক এবং ফলাফলে নারীর জন্য তৈরি হয় কতোগুলো নতুন যন্ত্রনার ইস্যু। করুণা, অবহেলা, কু-দৃষ্টিতে আরো অসহায়ের জীবন হয়ে উঠে। সংসার ধরে রাখতে না পারার ব্যর্থতা মেয়েটি একা নয় তার পরিবারও বহন করে। তাই যতো দূর্বিসহ জীবনই হোক না কেনো, বাবা মা বলেন, মানিয়ে নাও, আমাদের মুখে চুনকালি দিও না। এসব সহ্য করতে না পেরে কতশত নারী মরে গেছে তাও আমরা জানি। কথা একটাই ঘর টেকানোর সুনিপুল কৌশল তোমাকেই জানতে হবে নারী। অবস্থার অনেক পরির্বতন হয়েছে, আমার বন্ধুরা দাবীও করেন। আমিও অনেকাংশে একমত। কিন্তু গুটিকয় বিবেচনা তো সমাজের সকলের চিত্রকে বদলের কথা বলেনা। মেয়েদের কে পার্টনার হিসেবে ভাবার মধ্যেও পরিবর্তন এসেছে।

যাক সেসব বিস্তর আলোচনার দাবী রাখে। আমার কথা হলো, বন্ধুরা আপনারা কি জানেন, সাম্প্রতিক সময়ে নারীরা বিবাহ বিচ্ছদের আবেদন করছে ভয়ংকরভাবে! ঢাকা সিটি করপোরেশনে এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীর দুটি অঞ্চলে গতবছরের মোট তালাকের আবেদনের ৬৮ দশমিক ১৯ শতাংশ স্ত্রী এবং ৩৩ দশমিক ০৪ শতাংশ স্বামীরা। 

গত ছয় বছরে দুই সিটিতে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে ৩০ হাজার ৮৫৫টি। অর্থাৎ দৈনিক ১৫টা বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। দুটি সিটির দশটি অঞ্চলের এ চিত্র দেখে, এ শহরের নাগরিক কয়েকজনের সাথে কথা বলেছিলাম। তারা উচ্চ শিক্ষিত, সচেতন ও র্কমজীবী। তারা মোটাদাগে যেটা বলেছেন তা হলো নারীরা এখন শিক্ষিত হচ্ছে, আয় রোজগার করছে, নিজের স্বাধীনতা বুঝতে শিখছে। তাই পরিবারের জিইয়ে রাখা র্দীঘদিনের সংস্কৃতি নারীকে অধস্থনের করে দেখা, তাকে অধিকার বলে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল কাজে আসছে না। কারন অর্থনৈতিক মুক্তি। নিজেরে মূল্যবান ভাবা। অন্যায় আচরণের সাথে আপোষ না করার ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠা।’

পোষাক শ্রমিক কর্মীদের সাথেও কথা বলছিলাম, একজন বললেন আপা, দুজনই চাকরি করতাম। কিন্তু তার স্বভাব খারাপ, আমার সব বেতন সে নিয়ে নেয়, আমার বাবা, মাকে তো দিতে পারি না। এমনকি নিজের কসমেটিক কিনলেও তার কাছে চাইতে হয়। কিছু হলেই গায়ে হাত দেয়। তো কি দরকার তার সাথে থেকে? এমন একজন পুরুষের সাথেও কথা বলছিলাম, সে জানালো শহরে এস তার স্ত্রী বদলে গেছে, ফেসবুকে, হুয়াটসএপে, ইমুতে কথা কয়। টাকা কামায় দেখে আমারে মানুষ মনে করে না। তার আক্ষেপের কাছে আমার মন বলছে, হুম গোসাই তোমাদের দিন শেষ।

যে হারে নারীরা তাদের স্বরুপ উন্মোচনে তৈরি হয়েছে, কিংবা প্রস্তুত করেছে সে হারে পুরুষরা কিন্তু নিজেদের বদলানোর সুযোগটি নেয়নি, তাই নারীকে মানুষ মনে না করে তারা গোসাই হয়েই থাকছেন বা থাকতে স্বচ্ছন্দ্য বা গৌরবের মনে করছেন। তাই ভাত দেবার মুরোধ থাকার পরও গোসাইদের স্বভাবের কাছে নারী আর নত হতে চান না। প্রবাদটির যথার্থতা রয়েছে বৈকি! আর যাদের মুরোদ নেই তারা তো পারবেন না।

বাংলাদেশের বিবাহ প্রথা নিয়ে ব্যাপক মতবিরোধ রয়েছে। অনেক অসভ্য শর্তও রয়েছে। তারপরও আমার ব্যাক্তিগত মতামত পরিবার খুব সুন্দর, পরিবারে শিশুরা অনেক মানবিক গুণ নিয়ে নিরাপদে বেড়ে উঠে। সমবায়ের খাবার খায়, স্নেহ ভালোবাসা পায়। যা তাকে স্বার্থপর হতে শেখায় না। সহযোগিতার মানসিকতা গড়ে উঠে। আর একাজটি নারীরাই বেশি করে। তাই নারীর প্রতি আপনার দৃষ্টিকোন হবে শ্রদ্ধার, ভালোবাসার, সহমর্মিতার।

পুরুষেরা এক এক করে চারটি বিবাহ করার পরও নারীরা সংসার করতো, শত নির্যাতনেও কুলুপ এঁটে থাকতো। কারন জীবন ধারনের নূন্যতম উপায় নারীর সামনে থাকতো না। সেই নারীরা ঘর ভাংছে সেটা কি কেবল তার অর্থনৈতিক স্বাধীনতায় নাকি গোসাইগিরির প্রতিবাদ?

গোসাইগিরি ছাড়েন, অর্থ উপার্জনের মুরোদ থাকুক বা না থাকুক সংসারে প্রয়োজন পারস্পরিক শ্রদ্ধার আর ভালোবাসার সর্ম্পক। যদি তা না থাকে তো আলাদা থাকাই উচিত।

খুজিস্তা বেগম জোনাকির ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত