অটিজম শিশু বিকাশের প্রতিবন্ধকতা
প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০১৭, ০১:১৭
অটিজম শিশু সার্বিক বিকাশের প্রতিবন্ধকতা যা শিশু জন্মের তিন বছরের মধ্যেই প্রকাশ পায়। অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত যোগাযোগ ও সামাজিক আচরণে বয়সের তুলনায় অনেক পিছিয়ে থাকে।
তিনটি প্রধান সমস্যা সব অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তির ভিতর থাকে।
১। মৌখিক ও অমৌখিক যোগাযোগে সমস্যা।
২। সামাজিক আচরণে সমস্যা।
৩। পূনরাবৃত্তিমূলক আচরণ সমস্যা।
১। মৌখিক ও অমৌখিক যোগাযোগে সমস্যা:
অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তির ভাব প্রকাশের মত কথা বলা দেরীতে শুরু হয়-বা একেবারেই অনুপস্থিত থাকে। তাছাড়া ভাব প্রকাশের বিকল্প উপায় এদের বিকাশ পায় না।
অনেকেই কথা গুছিয়ে বলতে পারে না। কথায় কোন হৃদম থাকে না। কেমন জানি যান্ত্রিক মনে হয়।
একই শব্দ বা বাক্য বার বার বলার প্রবণতা থাকতে পারে।
এরা কারও চোখের দিকে থাকায় না। সেক্ষেত্রে অন্যের মুখভঙ্গী বা অঙ্গভঙ্গীর মাধ্যমে প্রকাশিত ভাব তারা বুঝতে পারে না।
অনেকেই অর্থহীন কথা বলে।
নিজেকে প্রকাশের জন্য যথাযথ ভাষার ব্যবহার এরা জানে না বা অন্যের ভাষা বোঝার ক্ষমতাও এদের থাকে না।
এদের কথায় সর্বনামের উল্টো ব্যবহার দেখা যায়। যেমন: ‘তুমি’-এর স্থলে আমি, ‘আমি’-এর স্থলে তুমি ব্যবহার করে।
কথার তীব্রতা, স্বরের উঠানামা এ ব্যাপারগুলো ওরা বোঝেনা।
২। সামাজিক আচরণে সমস্যা:
সামাজিকতার অভাবে সামাজিকতার প্রতি অটিস্টিক শিশুর আগ্রহ থাকেনা। স্বাভাবিক সামাজিক আচরণে এরা অনেক পিছিয়ে থাকে। তাই এরা কাউকে সালাম দেয়া, টা-টা দেয়া, বিদায় জানানো, সমবয়সীদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন কিংবা দলগত খেলায় অংশগ্রহণ করা ইত্যাদিতে পিছিয়ে থাকে।
স্বাভাবিক সামাজিক আচরণগুলো বুঝতে বা বোঝাতে না পারার ফলে অটিজমে আক্রান্ত শিশু কিশোরদের মধ্যে ধ্বংসাত্বক ও আক্রমনাত্বক আচরণও পরিলক্ষিত হয়। যেমন: জিনিস ভাংচুর করা, অন্যকে আঘাত করা কিংবা নিজেকে আঘাত করা।
এরা কম হাসে।অন্যের দিকে তাকায় না। নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয় না। কারও চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে না।স্বেচ্ছায় কারো সাথে মেশে না, কথা বলে না। তবে তারা যে একা থাকতে পছন্দ করে এমন নয়। কারো সাথে বন্ধুত্ব করা এবং বন্ধুত্ব বজায় রাখা তাদের জন্য কঠিন।
৩। পূনরাবৃত্তিমূলক আচরণ সমস্যা:
একই কাজ বার বার করার প্রবণতা দেখা যায়। এটি বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে পারে। যেমন: অনবরত দুই হাত নাড়ানো, শরীর দোলানো, আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে হাটা, অনবরত জিনিস ঘোরানো বা নিজে ঘোরা ইত্যাদি। এছাড়া কোন নির্দ্দিষ্ট টিভি অনুষ্ঠান দেখা, একই বইয়ের পৃষ্ঠা বার বার উল্টানো ইত্যাদি।
অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তির চিন্তাভাবনা খুবই অনড় থাকে। এবং কোন পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করা এদের জন্য কঠিন। সবকিছু এরা এক জায়গায় ও এক ভাবে দেখতে পছন্দ করে। যেমন: ঘরের প্রতিটা জিনিস নির্দ্দিষ্ট জায়গায় দেখতে পছন্দ করে।
এরা অন্যের সাথে বা খেলনা দিয়ে কল্পনা যুক্ত খেলা খেলতে পারে না।
সমগ্র বিষয়ের চেয়ে কোন একটি অংশ বিশেষের প্রতি এদের আকর্ষণ বেশী থাকে। যেমন-পুরো গাড়ির চেয়ে গাড়ীর চাকার প্রতি আগ্রহ থাকে।
এছাড়াও অটিজমে আক্রান্ত শিশু কিশোররা পঞ্চ ইন্দ্রিয় যথা-দেখা, শোনা, স্পর্শ, স্বাদ, গন্ধ এই অনুভূতিগুলো সামজ্ঞস্যপূর্ণ হয় না ফলে তাদের মানসিক বিকাশ ঠিক মত ঘটে না ফলে তাদের অস্বাভাবিক আচরণও বেড়ে যায়।
এদিক ওদিক ঘোরানো, শরীর মোচড়ানো, খাবার থালা নিয়ে অনবরত ঘোরানো ইত্যাদি।
জিনিসপত্র বিশেষ নিয়মে বারবার গুছিয়ে রাখা।
আসবাব ও ব্যবহার্য সামগ্রী যথাস্থানে রাখার চেষ্টা; পরিবর্তনে অনীহা।