যে খাবারগুলো ওষুধের বিকল্প
প্রকাশ : ২২ জুন ২০১৭, ২১:১০
অসুস্থতা আমাদের কাম্য নয়। আমরা অসুস্থ হলেই বিভিন্ন ওষুধ গ্রহণ করি দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য। তবে আমরা কি জানি, কিছু খাবার আছে যা ওষুধের মতোই কাজ করে!
ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসাতত্ত্ব মতে, খাবার ও ওষুধের উৎস একই। অর্থাৎ আমরা প্রতিনিয়ত যে খাবার খাই, তার অধিকাংশের মধ্যেই রয়েছে ঔষধি গুণ। এসব খাবার খেলে আমাদের ক্ষুধাও মিটবে, আবার শরীরে ওষুধের কাজও করবে। আপনি যখন অসুস্থ হন, তখন নির্দিষ্ট খাবারটি খেলে আপনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।
শুরুতেই বলি চকলেটের কথা। চকলেটের, বিশেষ করে ডার্ক চকলেটের পুষ্টিগুণ আছে। তবে এর থেকে বাদাম মিশ্রিত চকলেটগুলোর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। এ ধরনের চকলেট মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে এক্ষেত্রে মূল কাজটি করে চকলেটের সঙ্গে মিশ্রিত বাদাম, যা চাইলে আপনি শুধু শুধুও খেতে পারেন। বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, যা মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। চিকিৎসকরা বলেন, এই ধরনের চকলেট বা বাদাম বিষণ্নতা দূর করতেও সাহায্য করে।
সবজি এমনিতেই আমাদের জন্য উপকারী। সবুজ শাকসবজির ঔষধি গুণ সম্পর্কেও আমরা অনেকেই জানি। নিয়মিত সবুজ শাকসবজি খেলে আপনার চোখ বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রেহাই পাবে বলে আশা করা যায়। সবুজ শাকসবজি শরীরে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সৃষ্টি করে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখকে ভাইরাস থেকে বাঁচায়। সুতরাং প্রতিদিন কিছু সবুজ শাকসবজি খান।
আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। বাঙালি তো বটেই, চীনারাও মাছ খুব পছন্দ করে। মাছ ফুসফুসের জন্য ওষুধের মতোই কাজ করে। যাদের অ্যাজমার সমস্যা আছে, তারা নিয়মিত মাছ খেয়ে দেখতে পারেন। উপকার পাবেন। মাছের মধ্যে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা ফুসফুসের জন্য ভালো। এখানে বলে রাখা যায় যে, অ্যাজমা রোগীর চিকিৎসায় ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
কমলার মতো দেখতে মুসাম্বিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। এটি রয়েছে কমলালেবু আর মালটাতেও। যাদের মাড়িতে ঘা হয়েছে তারা মুসাম্বি বা কমলালেবু খেতে পারেন। ঘা ভালো হয়ে যাবে। আসলে মাড়ির ঘা হয় ভিটামিন সি এর অভাবে। লেবু ও কিউই ফলেও রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। আর আপনি যদি নিয়মিত এ ধরনের খাবার খান, তবে মাড়ির ঘা-এ আক্রান্ত হবার আশঙ্কাও কমে যাবে।
পানির অপর নাম জীবন। এই পানিও কিন্তু আমাদের জন্য ওষুধের মতো কাজ করে। পানি শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের মুখ থেকেই কথা বলার সময় দুর্গন্ধ ছড়ায়। এটা খুবই বিরক্তিকর একটা ব্যাপার। বিশেষ করে যার মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয় তার জন্য। চীনা চিকিৎসকরা মনে করেন মুখের দুর্গন্ধের সঙ্গে পেটের সমস্যার সম্পর্ক আছে। তাই তারা প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়া পর্যাপ্ত পানি পানে সুস্থ থাকে কিডনি। দূর হয় কোষ্ঠকাঠিন্য।
কলা আমার কে না খাই? কলারও রয়েছে অনেক গুণ। প্রতিদিন শরীরচর্চার পর কলা খেলে আপনি বিশেষ উপকার পাবেন। আমরা জানি শরীরচর্চা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজন। তবে শরীরচর্চার সময় শরীরে যে ঘাম হয়, তখন ঘামের সঙ্গে পটাসিয়াম ও সোডিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান বের হয়ে যায়। তাই শরীরচর্চার পর পটাসিয়াম ও সোডিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া ভালো। আর কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম ও সোডিয়াম। তাই শরীরচর্চার পর কলা খাওয়া ভালো।
এবার টমেটোর কথা বলতে হচ্ছে। যদি কেউ প্রচুর পরিমাণে মদ্যপান করে ফেলেন, তখন তার চিকিৎসায় টমেটোর জুস উপকারী। বেশি মদ খেলে শরীরে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও সোডিয়ামের অভাব দেখা দেয়। অথচ এগুলোর অভাব দ্রুত পূরণ না হলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। এ অবস্থায় টমেটোর জুস তাৎক্ষণিকভাবে আপনার উপকার করবে। কেননা টমেটোর জুসে প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে।
যারা নিয়মিত সবজি খান, তাদের আথ্রাইটিস বা বাত সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। একটি জরিপের ফল অনুসারে, যারা নিয়মিত সবজি খান তাদের বাত সমস্যায় আক্রান্ত হবার আশঙ্কা, যারা নিয়মিত সবজি খান না তাদের চেয়ে ৭৫ শতাংশ কম। এছাড়া আমাদের খাদ্য তালিকার বিভিন্ন খাবারে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ঔষধি গুণ। যার মধ্যে বিভিন্ন ফলমূল এবং শাকসবজি অন্যতম।
আমরা যদি একটু খেয়াল করে এই খাবারগুলো নিয়মিত গ্রহণ করি, তাহলে বলা যায় ওষুধের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার প্রয়োজনই পড়বে না আমাদের।