জেনে নিন টিআইএ বা সাময়িক ব্রেইন স্ট্রোক কী?

প্রকাশ : ২০ জুন ২০১৭, ০০:০৮

জাগরণীয়া ডেস্ক

খুব সহজ বাংলায় বলতে গেলে টি,আই,এ (transient ischemic attack) হলো সাময়িক ব্রেইন স্ট্রোক (brain stroke)। ব্রেইন স্ট্রোক হলে যে উপসর্গগুলো মাসের পর মাস কিংবা কোন কোন ক্ষেত্রে সারা জীবনের জন্য স্থায়ী হয়ে যায়, টি,আই,এ হলে তার উপস্থিতি থাকে মিনিটখানেকের জন্য, কখনো সখনো হয়তোবা পুরো একদিন। কারো টি,আই,এ হলে তিনি হঠাৎ করে সাময়িক ভাবে দৃষ্টি হারিয়ে ফেলতে পারেন এমনকি কিছু সময়ের জন্য ভারসাম্য হারিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়াটাও এর আওতার মধ্যেই পড়ে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হঠাৎ দৃষ্টি হারিয়ে ফেলা, কথা জড়িয়ে যাওয়া, শরীরের একপাশ অবশ বা দুর্বল হয়ে যাওয়া, জিহবা (tongue) ভারী ভারী লাগা এসব লক্ষনের মধ্যে টি,আই,এ সীমাবদ্ধ থাকে। রোগী এই মুহুর্তগুলোর পর আবার স্বতঃস্ফুর্তভাবেই স্বাভাবিক হয়ে উঠেন।

সাধারণত যাদের অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ (Hypertension), ডায়াবেটিস (diabetes) থাকে, কিংবা যারা নিয়মিত ধূমপান করেন, যাদের পরিবারে স্ট্রোকের ইতিহাস আছে এমন লোকজনই টি,আই,এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তবে পুরুষদের বয়স ৫৫ এর বেশি হলে এ রোগের প্রবণতার হার বেড়ে যেতে পারে।

যে সকল কারণে ব্রেইন স্ট্রোক হয় তার সবগুলোই টি,আই,এ হওয়ার কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে মস্তিস্কের রক্তনালী সরু হয়ে যাওয়া হলো এর প্রধান কারণ। ধূমপান, উচ্চরক্তচাপ, রক্তে চর্বির (Lipid) পরিমান বেড়ে যাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত ক্রনিক ডায়াবেটিস, অপরিমিত শারীরিক/কায়িক পরিশ্রম ইত্যাদি কারণেই সাধারণত মস্তিষ্ক, হৃদপিন্ড অথবা শরীরের অন্য কোন স্থানের রক্তনালী সরু হয়ে যেতে পারে। এই অসুস্থ রক্তনালীর কোন অংশ থেকে ছুটে আসা কোন ক্ষুদ্র দূষিত অংশ (embolus) ছুটে এসে যদি ব্রেইন এর ধমনী/রক্তনালীতে আটকে যায় তাহলেই টি,আই,এ হয়। তবে হৃদপিন্ডের অনিয়মিত স্পন্দন জনিত রোগ (arrhythmia, atrial fibrillation) এর কারনেও টি,আই,এ হতে পারে।

এমন রোগে আক্রান্ত হলে সাথে সাথেই একজন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ বা নিউরোলজিস্ট (neurologist) এর শরণাপন্ন হওয়া উচিত। রোগীর ইতিহাস জেনে এবং কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তিনি নিশ্চিত হতে পারেন রোগটি টি,আই,এ কিনা। তবে এর কারণ অনুসন্ধানের জন্য এবং ভবিষ্যতে এর প্রকোপ থেকে মুক্তির জন্য ব্রেইন এর সিটি স্ক্যান (CT scan), এম,আর,আই (MRI), ই,সি,জি (ECG), ইকোকার্ডিওগ্রাম (Echocardiogram), রক্তে চর্বির পরিমাণ জানা (Lipid profile) অন্যান্য পরীক্ষাও করানো হয়ে থাকে। টি,আই,এ হলে প্রথমেই রোগীর উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তের চর্বির পরিমাণ খুব দ্রুত নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে হয়। সেই সাথে রোগীকে রক্ত পাতলা রাখার প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধও প্রদান করা হয়। তবে এ সবকিছুই একজন নিউরোলজিস্টের এখতিয়ারে পড়ে, তিনিই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। তবে কোনো ক্ষেত্রে বার বার টি,আই,এ/স্ট্রোক হবার ঝুঁকি থাকলে মস্তিস্কের রক্তপ্রবাহের ধমনীর (carotic artery) অপারেশন (carotid endarterectomy) ও করানোর প্রয়োজন হতে পারে।

একটা কথা মনে রাখা খুব জরুরী তা হলো টি,আই,এ ব্রেইন স্ট্রোক হবার একটি চূড়ান্ত পূর্বাভাস। যাদের একবার টি,আই,এ হয় তাদের এক তৃতীয়াংশের আবার টি,আই,এ হবার সম্ভাবনা থাকে এবং ১০% রোগীর ব্রেইন স্ট্রোক হবার সম্ভাবনা ব্যাপক। তাই চিকিৎসা নেয়ার পাশাপাশি রোগীকে অবশ্যই জীবন যাপন পদ্ধতিতে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে, চিরতরে ধূমপান ত্যাগ করা, উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখা, নিয়মিত হাল্কা পরিশ্রম করা, খাদ্যে পরিমিত লবণ খাওয়া, ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা ইত্যাদি সু অভ্যাস গঠন টি,আই,এ হবার হার কমিয়ে আনার জন্য যথেষ্ট সহায়ক। তাই এই ঝুঁকির মানুষগুলো এসব ব্যাপারে যত্নবান হলে পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে অন্যের বোঝা হওয়ার হাত থেকে সহজেই নিজেকে বাঁচাতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত