মশা তাড়াতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনছেন না তো?
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০১৭, ২৩:৪৮
প্রতিবছর মশাবাহিত রোগে লাখো মানুষ আক্রান্ত হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে প্রতি গ্রীষ্ম-বর্ষায় নিয়মিত ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। ইদানীং নতুন যোগ হয়েছে আরেক অসুখ—চিকুনগুনিয়া। পাহাড়ি এলাকায় বেড়াতে গিয়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার নজিরও কম নয়। মোট কথা, মশা আমাদের একটা বড় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে।
মশা তাড়ানোর জন্য আমরা নানা পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকি। যেমন মশার কয়েল, স্প্রে, ত্বকে লাগানোর লোশন ইত্যাদি। এগুলো ব্যবহার করতে গিয়ে আমরা আবার নতুন কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছি না তো?
কয়েল: ১০০ বছর ধরে এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে মশা তাড়ানোর কয়েল। এটি থেকে যে ধোঁয়া বেরোয়, তাতে বিদ্যমান রাসায়নিক উপাদান মশা তাড়াতে সাহায্য করে। কিন্তু এই ধোঁয়ায় ফরমালডিহাইড, হাইড্রোকার্বনসহ আরও কিছু উপাদান থাকে, যেগুলো মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। হাঁপানি রোগীদের জন্য এই ধোঁয়া খারাপ। শিশুদের ধারে-কাছে কয়েল না জ্বালানোই ভালো।
স্প্রে: মশা তাড়াতে ব্যবহৃত বেশির ভাগ অ্যারোসল স্প্রেতে পাইরিথোয়েড নামের রাসায়নিক উপাদান থাকে। এটা বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে মেশে ও মশা তাড়ায়। এমনিতে এর খুব ক্ষতিকর প্রভাব না থাকলেও একাধিক গবেষণায় দেখা যায়, এ ধরনের স্প্রের ব্যবহার হাঁপানি, ব্রংকাইটিস রোগীদের শ্বাসকষ্ট বাড়াতে পারে, শ্বাসনালির ইরিটেশন তৈরি করে, কখনো চোখ জ্বালা করতে পারে, কারও কারও মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারও অ্যালার্জি হয়, সর্দিকাশি দেখা দেয়।
ক্রিম: মশা তাড়ানোর অধিকাংশ ক্রিম বা লোশনে ডিট নামের একধরনের টলুঅ্যামাইড থাকে। অনেকের ত্বকে এ থেকে ফুসকুড়ি বা র্যাশ, চুলকানি, অ্যালার্জি ও চোখে সমস্যা হতে পারে।
তাহলে কী করবেন
মশার হাত থেকে বাঁচার কোনো না কোনো পদ্ধতি অবলম্বন ছাড়া উপায় নেই। তাতে খানিকটা ঝুঁকি থাকলেও মশাবাহিত জটিল অসুখ-বিসুখ থেকে তো রেহাই মিলবে। এ বিষয়ে কয়েকটি পরামর্শ:
১. ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে স্প্রে করুন এবং ঘর থেকে বেরিয়ে যান। স্প্রে করার সময় এবং পরপরই ঘরে শিশুদের থাকতে দেবেন না। অন্তত দু-এক ঘণ্টা পর ঘরে প্রবেশ করুন এবং ফ্যানের হাওয়ায় ভাসমান কণাগুলোকে বেরিয়ে যেতে দিন।
২. কখনোই কাটা-ছেঁড়া বা অ্যালার্জিক ত্বকে ক্রিম লাগাবেন না। নির্দিষ্ট সময় পর ভালো করে সাবান পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলবেন। মুখমণ্ডল ও চোখের কাছে লাগাবেন না।
৩. সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি হলো নিজেকে ও বাড়ির পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখা। মশারি টানিয়ে শোবেন। সাদা বা হালকা রঙের পোশাক পরুন।
লেখক: মেডিসিন বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ