অ্যাসিডিটি থেকে সহজেই মুক্তির উপায়
প্রকাশ : ২২ জুন ২০১৬, ১৮:৪০
অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি পেতে অ্যান্টাসিড খেতে খেতে আপনি ক্লান্ত? কিংবা এত বেশি ওষুধ নির্ভর হতে চাইছেন না? তাহলে আপনার জন্যই চমৎকার কিছু পরিত্রাণের উপায় বলে দিচ্ছি। ঘরোয়া এসব উপায়ে সহজেই অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারেন আপনি।
এসব পদ্ধতির কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তো নেই-ই উল্টো গ্যাসের জন্য তৈরি হওয়া অস্বস্তিও দূর হয়ে যাবে। কমাবে বুকের জ্বালাপোড়া।
পদ্ধতি ১ : কলা
কলা কীভাবে সাহায্য করে? কলা পটাসিয়ামের চমৎকার একটি উৎস। কলা খাওয়ার ফলে আপনার পাকস্থলির অ্যাসিড উৎপাদনের মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসে। এই ফলে থাকা কিছু উপাদান অ্যাসিড থেকে পাকস্থলিকে রক্ষা করে। এর উচ্চ মাত্রার ফাইবার হজমে সহায়তা করে এবং অ্যাসিডিটি কমায়।
তাই অ্যাসিডিটি থেকে ঝটপট মুক্তি পেতে একটি পাকা কলা খেয়ে ফেলুন। খুব বেশি সমস্যা হলে অতিরিক্ত পাকা কলা খান। বেশি পাকা কলায় বেশি মাত্রায় পটাসিয়াম থাকায় এটি খুব ভালো অম্লতানাশক হিসেবে কাজ করে।
পদ্ধতি ২ : তুলসি
তুলসি পাতা পাকস্থলিকে বেশি পরিমাণ শ্লেষ্মা উৎপাদনে সাহায্য করে। এই পাতা অ্যাসিডের প্রভাব কমায়। যখন আপনি অনেক বেশি অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভুগবেন তখন পাঁচ থেকে ছয়টি তুলসি পাতা চিবিয়ে খেয়ে ফেলুন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আরাম বোধ করবেন।
পদ্ধতি ৩ : ঠাণ্ডা দুধ
দুধে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। এই ক্যালসিয়াম অ্যাসিড তৈরি হতে বাধা দেয় এবং অতিরিক্ত অ্যাসিড শুষে নেয়। সেইসাথে অ্যাসিডিটির উপসর্গও দূর করে।
অ্যাসিডিটির সময় বুকে যে অস্বাভাবিক জ্বালাপোড়া অনুভূত হয় তা দ্রুত কমিয়ে দিতে পারে ঠাণ্ডা দুধ। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন দুধটি পর্যাপ্ত পরিমাণ ঠাণ্ডা হয় এবং এতে কোনো চিনি মেশানো না থাকে। আরো কার্যকর করতে এই দুধে আপনি এক চামচ ঘিও মিশিয়ে নিতে পারেন।
পদ্ধতি ৪ : মৌরী
মৌরীতে উচ্চমাত্রার ক্ষতবিরোধী উপাদান আছে। এটা হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্টকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়। মৌরীর ভেতরে থাকা উপাদানগুলো পাকস্থলিকে ঠাণ্ডা রাখে এবং অ্যাসিডিটির সময় ভেতরের জ্বালাপোড়া কমায়। ঝটপট অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি চাইলে কিছু মৌরী নিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলুন। আর যদি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান চান তাহলে, কিছু মৌরী নিয়ে পানিতে ফোটান। এই পানি রেখে দিন রাতভর। এরপর সারাদিনে যখনই অ্যাসিডিটির সমস্যা হবে পানিটুকু খেয়ে ফেলুন।
পদ্ধতি ৫ : জিরা
জিরায় এমন কিছু উপাদান থাকে যা লালা তৈরি করে। আর এই লালা হজমে সহায়তা করে ও গ্যাসের সমস্যা কমায়। আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা বলেন, জিরা পাকস্থলিকে ঠাণ্ডা রাখে এবং আলসার সারায়।অ্যাসিডিটির সমস্যা সমাধানে কিছু জিরা চিবিয়ে খান। অথবা পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি ঠাণ্ডা করে খান।
পদ্ধতি ৬ : লবঙ্গ
লবঙ্গ হজমে সাহায্য করে এবং অ্যাসিডিটির লক্ষণগুলোর সাথে লড়াই করে।যদি আপনি অ্যাসিডিটির সমস্যায় আক্রান্ত হন তাহলে একটি লবঙ্গ নিয়ে কামড় দিন। পুরো রসটুকু বের করে নিয়ে লবঙ্গটি মুখে রাখুন। এই লবঙ্গের রস অ্যাসিডের মাত্রা কমিয়ে আপনাকে তাৎক্ষণিক আরাম দেবে।
পদ্ধতি ৭ : এলাচ
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের বর্ণনা মতে, এলাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এটি হজমে সহায়তা করে। পাকস্থলির ভেতরের আচ্ছাদনকে প্রশমিত করে এবং অতিরিক্ত অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ করে।দুটি এলাচ নিন। এর ভেতরের দানাগুলো গুঁড়ো করে পানিতে ফুটিয়ে নিন। এই পানি ঠাণ্ডা করে পান করুন। অ্যাসিডিটি সমস্যায় ঝটপট সমাধান দেবে এই পানীয়।
পদ্ধতি ৮ : পুদিনা পাতা
পুদিনা পাতাও হজমে সাহায্য করে এবং পাকস্থলিতে অ্যাসিড নিঃসরণ কমায়। এর ঠাণ্ডা অনুভূতি অ্যাসিডিটির কারণে তৈরি জ্বালা কমায়।কিছু পুদিনা পাতা কুঁচি করে নিন। এই পাতা পানিতে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে রাখনু। যখনই আপনার মনে হবে এখন অ্যাসিডিটি আক্রমণ করবে তখনই এটা পান করুন। এই পানীয় বদহজম দূর করতেও সহায়তা করে।
পদ্ধতি ৯ : আদা
এই মশলাটি হজমে সহায়তা করে। পাকস্থলি থেকে শ্লেষ্মার নিঃসরণ ঘটিয়ে আদা পাকস্থলির ভেতরের ক্ষত সারায়।অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি পেতে ছোট এক টুকরা আদা নিয়ে চিবিয়ে খান। এটা খেতে খারাপ লাগলে পানিতে ফুটিয়ে খান। এ ছাড়া আদা থেতো করে এর রসটুকুও পান করতে পারেন দ্রুত উপকারের জন্য।
পদ্ধতি ১০ : আমলকি
আমলকি ভিটামিন সি-এর আধার। এই ভিটামিন সি পাকস্থলির অভ্যন্তরীণ ক্ষত সারায়।অ্যাসিডিটির সমস্যা সমাধানে রোজ দুই চামচ করে আমলকির গুঁড়ো খান। এখন থেকে অ্যান্টাসিডের বোতল খালি করার আগে এসব পদ্ধতি চেষ্টা করে দেখুন। কোনো রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই মুক্তি পাবেন অ্যাসিডিটি থেকে।