যে ১০ রোগের নিরাময় নেই
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৪:০৮
প্রতিদিনই এগিয়ে চলেছে চিকিৎসা বিজ্ঞান। সব ধরনের রোগের আরো কার্যকর চিকিৎসাব্যবস্থাও বের করার চেষ্টা করছেন গবেষকরা। সর্বাধুনিক চিকিৎসার এই যুগেও এমন অনেক রোগ রয়েছে যাদের নিরাময় পুরোপুরি বের করা যায়নি। এগুলো সবই মারাত্মক রোগ। আবার এমন মারাত্মক সব রোগ রয়েছে যা পুরোপুরি পৃথিবী থেকে দূর করা হয়েছে। এখানে জেনে এমনই ১০টি রোগের কথা। যাদের নিরাময় আজও সম্ভব হয়নি।
১. আলঝেইমার্স ডিজিস
সবাই কম-বেশি এ রোগ সম্পকে শুনেছেন। আলঝেইমার্স অ্যাসোসিয়েশ জানায়, এটা ডেমেনশিয়ার সবচেয়ে সাধারণ অবস্থা। স্মৃতিশক্তি ধরে রাখার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়ে এ রোগে। চিন্তা-ভাবনা এবং কারণ বের করতেও পারেন না রোগীরা। সাধারণত বয়সস্কালে এ রোগ দেখা দেয়। তার মানে এই নয় যে ৬৫ বা তার বেশি বয়স হলে আলঝেইমার্স হবে। চল্লিশের কোঠাতেও এই রোগ দেখা দিতে পারে। আর এ রোগের কার্যকর নিরাময়ব্যবস্থা এখনো আবিষ্কার হয়নি। অবশ্য কিছু চিকিৎসা তো রয়েছেই। এতে বেশ উপকার মেলে।
২. ডায়াবেটিস
গোটা বিশ্বে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। দেহে ইনসুলিন হরমোন উৎপাদনের অভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। এটা বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যায় এবং ডায়াবেটিস দেখা দেয়। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের মতে, কম বয়সীদের টাইপ ১ ডায়াবেটিস দেখা দেয়। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে টাইপ ২ ডায়াবেটিস দেখা দেয়। এ রোগ হলে ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না। ওষুধ ও জীবযাপনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু নিরাময় নেই।
৩. এইডস
যৌনবাহিত রোগের মধ্যে এটি গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রাণঘাতী এইচআইভি ভাইরাসের কারণে এই রোগ দেখা দেয়। অনিরাপদ যৌনতা কিংবা রক্তের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। এ রোগ ভালো করার মতো কোনো চিকিৎসা আজও মেলেনি।
৪. পারকিনসন্স ডিজিস
এ রোগ মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করে। প্রাণঘাতী এক রোগ। আমেরিকান ন্যাশনাল পারকিনসন্স ফাউন্ডেশন জানায়, মস্তিষ্কের ডোপামাইন উৎপাদনের প্রক্রিয়া, স্নায়বিক অংশের সঙ্গে জড়িত নিউরোট্রান্সমিটার, মোটোর স্কিল এবং মস্তিষ্কের অন্যান্য কার্যপ্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে আক্রান্ত রোগীর নড়াচড়া, আচরণ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। এ রোগের কোনো চিকিৎসাই নেই যার মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব।
৫. মাল্টিপল স্কেলেরোসিস
এই রোগ ঘিরে অনেক রহস্য বিরাজ করে। যিনি আক্রান্ত হন, তার সমস্যা বুঝতেও অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। এ রোগের কারণে রোগ প্রতিরোধীব্যবস্থা দেহের স্নায়বিক অংশকে আক্রমণ করে। কোনো একটি কারণে এ রোগ হয় না। বরং রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা, জেনেটিক অবস্থা এবং পরিবেশ এর জন্য দায়ী থাকে। চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে, কিন্তু তা পুরোপুরি সারায় না।
৬. লুপুস
অনেক মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। কিন্তু এর নিরাময় পদ্ধতি এখনো আবিষ্কার সম্ভব হয়নি। লুপুস ফাউন্ডেশন অব আমেরিকা একে এক ক্রনিক ডিজিস হিসাবে ব্যাখ্যা করেছে। এর কারণে দেহের রোগ প্রতিরোধীব্যবস্থা এমন অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করে যা একই দেহের স্বাস্থ্যকর কোষগুলোকে আক্রমণ করে। দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গে সমস্যা সৃষ্টি করে এই রোগ। একে সারানো যায় না।
৭. পোলিও
ভ্যাক্সিনের জন্য বিজ্ঞানকে ধন্যবাদ। পৃথিবীতে পোলিও তাড়াতে এদের ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু এখনো এমন দেশ আছে যেখানে এ রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। পোলিওভাইরাসের কারণে এ রোগের আবির্ভাব। এটি মানুষ সারাজীবনের জন্য বিকলাঙ্গ করে দেয় কিংবা মৃত্যু ঘটায়। এমনকি আমেরিকাতেও প্রতিবছর ১৫ হাজার মানুষ পোলিও-তে আক্রান্ত হয়। এ রোগ হলে আর সারানোর পথ নেই।
৮. অ্যাজমা
যারা এ রোগে আক্রান্ত তারা চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। কিন্তু নিরাময়ের কোনো ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নেই। এর কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাপক সমস্যা হয়। কাশি, বুকে আওয়াজ এবং শ্বাস নিতে বাতাসের অভাব বোধ হয়।
৯. সিজোফ্রেনিয়া
এ রোগের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত নয় বিজ্ঞান। আর এর কোনো নিরাময় পদ্ধতিও জানা নেই কারো। তবে চিকিৎসা নিতে হয়। একজন মানুষ কিভাবে চিন্তা করে, তার আচরণ এবং অনুভূতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে সিজোফ্রেনিয়া। এ রোগে আক্রান্তদের হেলুসিনেশন দেখা দিতে পারে। অনেকে তার আবেগ সামলাতে পারেন না। স্মৃতিশক্তিও হারিয়ে যায় অনেক সময়।
১০. ক্যান্সার
প্রাণঘাতী রোগ হিসাবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ক্যান্সার। কিছু অস্বাস্থ্যকর কোষ গজাতে থাকে দেহে। এগুলো ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেহে। দেহের অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রত্যঙ্গে ক্ষয় ঘটায়। এমনকি রক্তেও ছড়ায়। কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন এবং সার্জারির মাধ্যমে নিরাময়ের চেষ্টা করা হয়। এসব প্রয়োগে অনেক দিন বেঁচে থাকার পথ মেলে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরোপুরি ভালো হয় না।
সূত্র: ইন্টারনেট