শীতে শিশুর অ্যালার্জি সমস্যা
প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬, ১০:৫১
রেসপিরেটরি ট্রাক্ট এবং ত্বক। এই দুই জায়গাতেই সাধারণত শীতের সময়ে অ্যালার্জির প্রকোপ হতে পারে। রেসপিরেটরি ট্রাক্টে অ্যালার্জি হলে সর্দি-কাশি, চোখ ও নাক দিয়ে পানি পড়া, কাশলে ঘড়-ঘড় শব্দ হওয়া, হাঁচির মতো লক্ষণগুলো দেখা যায়। ত্বকের ক্ষেত্রে আবার নানা ধরনের র্যা শ দেখা যায়। শীতে কীভাবে শিশুকে অ্যালার্জি থেকে দূরে রাখতে পাবরেন তা জেনে নিন।
স্কিন অ্যালার্জি
জন্মের পর থেকে এক বছর বয়স পর্যন্ত যেরকম র্যা শের সমস্যা হতে পারে, সেরকম টিনএজারদেরও অ্যালার্জি থেকে র্যা শ দেখা যেতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো অ্যাপোটিক ডার্মাটাইটিস। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মুখে, স্ক্যাল্পে ও শরীরের লোমশ অংশে বেশি র্যা শ দেখা যায়। লোমশ অংশ মানে ভ্রু-এর উপরে চুলের সামনে এসব জায়গায় র্যা শ হলে তাকে বলা হয় সেবোরিক ডার্মাটাইটিস। এর সঙ্গে স্ক্যাল্পে খুশকিও দেখা যায়।
বাচ্চাদের মধ্যে এ ধরনের ডার্মাটাইটিস হওয়ার প্রবণতা বেশি। অ্যাপোটিক ডার্মাটাইটিসের বৈশিষ্ট্য হল এটা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে, বেড়ে যায়। এর থেকে সেকেন্ডারি ইনফেকশনও হতে পারে। তার ফলে পুঁজ হয়, খোসা উঠতে শুরু করে।
আর এই সময়ে চিকেন পক্স হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। তাই চিকেন পক্সের সঙ্গে র্যাশ হলে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এছাড়া একটু বেশি বয়সী বাচ্চা বিশেষ করে টিনএজারদের মধ্যে শীতে ফ্লেকচারস দেখা যায়। মানে শরীরের বিভিন্ন ভাঁজে র্যাশ হয়।
লক্ষণ ও চিকিৎসা
অ্যাপোটিক ডার্মাটাইটিসে চুল, স্ক্যাল্প, মুখ, চোখের চারপাশ, চোখের ওপরে এবং শরীরের বিভিন্ন ভাঁজের অংশে র্যা শ দেখা যায়। সারা শরীর খসখসে হয়ে যায়। চোখের চারপাশে চামড়ায় ভাঁজ দেখা যায় এবং চোখের নিচের অংশে একটু ভেজাভেজা ভাব দেখা যায়, খোসা উঠতে শুরু করে। আর এর সঙ্গে চুলকানি শুরু হয়।
এই অবস্থা প্রতিরোধ করার জন্য ক্রিম ও ময়েশ্চারাইজার লাগানো দরকার। এছাড়া স্টরয়েড ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তা সীমাবদ্ধভাবে ব্যবহার করা উচিত হবে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় নারিকেল তেলের ব্যবহার। গোসলের ১৫ মিনিট আগে বাচ্চাকে নারিকেল তেল মাখাতে পারেন। সাবান বা সাবানের সাবস্টিটিউট বেরিয়েছে, সেগুলোও ব্যবহার করতে পারেন।
ব্রঙ্কিয়াল হাইপার রিঅ্যাক্টিভিটি
অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস যাদের থাকে, তাদের সাধারণত অ্যাজমার সমস্যাও থাকে। দুটোই এক ধরনের জেনেটিক ডিজিস। শীতকালে সর্দি-কাশি তো লেগেই থাকে। আর বাচ্চাদের মধ্যে ছোটবেলায় যে অ্যাজমা দেখা যায়, সেটাকে বলা হয় ব্রঙ্কিয়াল হাইপাররিঅ্যাক্টিভিটি। শ্বাসনালী, ব্রঙ্কাস, অ্যালগিওলাস... এগুলো প্রতিক্রিয়াশীল, তাই তাপমাত্রার পরিবর্তন হলে শোঁ শোঁ আওয়াজ হয়।
অনেকসময় কাশির সঙ্গে বমিও হয়। বমিতে কফ বেরিয়ে আসে। এর সঙ্গে জ্বরও থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে। সবশেষে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়। যেটা রাতে ও ভোরের দিকে বেশি হয়। সাধারণত নাক দিয়ে পানি পড়ার মাধ্যমে শুরু হয় এবং এর পরেই সর্দি বুকে বসে যায়। তবে সর্দি শুরু হলে নাক ও চোখ দিয়ে পানি পড়ে, ঘনঘন হাঁচি, তার সঙ্গে শুকনো কাশি থাকে। যা বাচ্চার জন্য বেশ অস্বস্তিকর।
প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ফিডিং করানো দরকার। এছাড়া অ্যালার্জি ট্রিগারগুলো যেমন- ঠাণ্ডা বাতাস, সিগারেটের ধোঁয়া, বাড়িতে পোষ্য প্রাণী, ফার এলিমেন্ট, ধোঁয়া, পলিউশন এবং ধুলা এড়িয়ে চলতে হবে। এগুলো এড়িয়ে চললেই অনেকটাই প্রতিরোধ সম্ভব।
এছাড়া চিকিৎসার জন্য এন্টিবায়োটিক এবং কফ সিরাপ তো রয়েছেই। কিন্তু এ ধরনের অ্যালার্জির প্রধান লক্ষণ ঘনঘন অ্যাটাক হওয়া। তাই নিয়মিত ডাক্তারের কাছে গিয়ে চেকআপ করানো দরকার। ট্রিটমেন্টের মধ্যে পড়বে নেবুলাইজার, ইনহেলার ও স্টেরয়েড। ইনহেলার নেয়া মানে খারাপ কিছু নয় বরং সঠিক পরিমাপে নিলে এর সাইড ইফেক্ট অনেক কম।