ফ্রোজেন শোল্ডারের চিকিৎসা
প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৬:০০
ফ্রোজেন শোল্ডার বা অ্যাডহেসিভ ক্যাপসুলাইটিস হলো কাঁধ শক্ত হয়ে যাওয়া, ব্যাথা হওয়া ও কাঁধের নড়াচড়া সীমিত হয়ে পড়া। ইনজুরির কারণে, কাঁধের বেশি ব্যবহারের কারণে কিংবা কোনো রোগ, যেমন ডায়াবেটিস বা স্ট্রোক থেকে এটি হতে পারে। অস্থিসন্ধির চার পাশের টিস্যু শক্ত হয়ে যায়, স্কার টিস্যু গঠিত হয় এবং কাঁধের নড়াচড়া কঠিন ও যন্ত্রণাদায়ক হয়ে পড়ে। এ অবস্থা সাধারণত ধীরে ধীরে হয়, এরপর প্রায় বছরখানেক পর, অথবা আরো পরে ধীরে ধীরে চলে যায় সমস্যাটি।
ফ্রোজেন শোল্ডারের কারণসমূহ:
সাধারণত কাঁধে ব্যাথা, আঘাত ও দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন ডায়াবেটিস বা স্ট্রোকের কারণে অস্থিসন্ধির ব্যবহার বন্ধ করে দিলে ফ্রোজেন শোল্ডার হতে পারে। কাঁধের যেকোনো সমস্যা থেকেই ফ্রোজেন শোল্ডার দেখা দিতে পারে, যদি কাঁধ পুরো মাত্রায় নড়াচড়া করানো না হয়।
ফ্রোজেন শোল্ডার ঘটে যেসব কারণে:
- কাঁধে অপারেশনের পরে কিংবা কাঁধে কোনো আঘাত পাওয়ার পরে।
- বেশির ভাগ ৪০ থেকে ৭০ বছরবয়সী লোকজনের।
- পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের, বিশেষ করে মেনোপজ-পরবর্তী মহিলাদের।
- দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত বেশির ভাগ লোকের।
কীভাবে ফ্রোজেন শোল্ডার নির্ণয় করা যায়:
প্রথমে আপনার কাঁধের পরীক্ষা করে যদি চিকিৎসক আপনার কাঁধের নড়াচড়া সীমিত দেখেন, তাহলে তিনি সেটাকে ফ্রোজেন শোল্ডার হিসেবে সন্দেহ করতে পারেন। এ সময়ে একটি এক্স-রে করে দেখা হয় যে আপনার কাঁধের উপসর্গ অন্য কোনো সমস্যা থেকে উদ্ভুত হয়ছে কি না, যেমন আর্থ্রাইটিস কিংবা ভেঙ্গে যাওয়া হাড়।
কী চিকিৎসা করা হয়:
সাধারণত ব্যাথানাশক ওষুধ দিয়ে ফ্রোজেন শোল্ডারের চিকিৎসা শুরু করা হয়। এ ক্ষেত্রে এনএসএআইডি ব্যবহার করা হয়। আক্রান্ত স্থানে গরম সেক দেয়া হয়, হাল্কাভাবে স্ট্রেচিং করা হয়। ব্যাথা ও ফোলা কমানোর জন্য বরফ দেয়া হয়, কর্টিকো স্টেরয়েড ইনজেকশন দেয়া হয়। আপনার কাঁধের নড়াচড়ার পরিধি বাড়ানোর জন্য ফিজিক্যাল থেরাপির সাহায্য নিতে পারেন। ফ্রোজেন শোল্ডার ভালো হতে এক বছর বা তার বেশি সময় নিতে পারে। যদি চিকিৎসায় কাজ না হয় তাহলে কখনো কখনো সার্জারি করার প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে কাঁধের চার পাশের শক্ত টিস্যুগুলো ঢিলে করে দেয়া হয়। সচরাচর দুই ধরণের সার্জারি করা হয়ে থাকে। একটি হলো রোগীকে অ্যানেস্থেশিয়া দিয়ে হাত দিয়ে কাঁধ ঠিক করা। এ ক্ষেত্রে রোগীকে ঘুম পাড়িয়ে বাহুটাকে টেনে ঠিক জায়গায় আনা হয়। শক্ত টিস্যুগুলোকে টেনে ঢিলা করা হয়। অন্য সার্জারিটি হলো আর্থ্রোস্কপ ব্যবহার করে শক্ত ও স্কার টিস্যুগুলো কেটে ফেলা। এসব সার্জারি একই সময়ে করা যেতে পারে।
ফ্রোজেন শোল্ডার প্রতিরোধ করা যায়:
কাঁধে অপারেশন বা আঘাতের পরে হাল্কা ব্যায়াম ও স্ট্রেচিংয়ের মাধ্যমে ফ্রোজেন শোল্ডার প্রতিরোধ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরতে হবে এবং চিকিৎসকের উপদেশ মেনে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে, সময়ের সাথে সাথে ফ্রোজেন শোল্ডার ক্রমেই ভালো হতে থাকে।