এ সময়ের রোগ সর্দিকাশি

প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০১৬, ১৯:১০

ডা. সমীরণ কুমার সাহা

সর্দিকাশি বা কম কোল্ড হচ্ছে একদল রোগের সমষ্টি যা পাঁচটি ভাইরাস পরিবারের সদস্য দিয়ে হয়ে থাকে। এই পরিবারের ভাইরাসদের সুস্পষ্ট জৈব রাসায়নিক ধর্ম আছে, যা তাদের দ্বারা সংঘঠিত বিবিধ অসুস্থতার নিয়ামক। কমন কোল্ড হচ্ছে মৃদু আত্মনিয়ন্ত্রিত শেস্নষ্মাজনিত সিনড্রোম যা তাৎক্ষণিক রুগ্নতার কারণ। খুব অল্প সংখ্যক রোগী সাইনাস এবং মধ্যকর্ণের জীবাণু সংক্রমণের শিকার হন।

লক্ষণসমূহ

বিভিন্ন ধরণের ভাইরাসের সুপ্তিকাল বিভিন্ন রকমের। সাধারণত এর ব্যাপ্তি ৪৮-৭২ ঘন্টা। এর প্রধান লক্ষণসমূহ হচ্ছে-অনবরত নাসিকা থেকে নি:সরণ, নাকের অবরোধ, হাঁচি, গলা ব্যথা এবং কাশি। স্বল্পমাত্রায় জ্বরও থাকতে পারে। শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের জ্বরের মাত্রা সাধারণত বেশি থাকে।

প্রাথমিক লক্ষণসমূহ হতে পারে গা, হাত-পা ব্যথা, খারাপ লাগা এবং নাকের সমস্যা। এছাড়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে চোখ জ্বালা করতে পারে। যদি সংক্রমণটি এডিনোভাইরাস এবং এন্টেরোভাইরাস দিয়ে হয়ে থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে কনজাংটিভাইটিস হতে পারে। এর সাথে জিহ্বার স্বাদ নষ্ট হয়ে যাওয়া, নাকে গন্ধ না পাওয়া, কানে চাপ অনুভব করা, যার কারণ হচ্ছে শৈস্নষ্মিক ঝিলিস্নর স্ফীতি। স্বর পরিবর্তন হতে পারে। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা এবং রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস সংক্রমণের কারণে ভাইরাস নিউমোনিয়া, ক্রুপ এবং ব্রংকিওলাইটিস হতে পারে। বয়স্কদের বেলায় শুধু সর্দি কাশি হতে পারে।

চিকিৎসা

এ রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষায় বলা যায়, 'চিকিৎসা নিলে রোগ সারবে সাত দিনে, আর না নিলে সারবে এক সপ্তাহে'।

- জটিলতাহীন সাধারণ সর্দিকাশিতে শুধুমাত্র লক্ষণগুলোর চিকিৎসাই যথেষ্ট। গলা এবং নাকের সমস্যা নিরসনই মূল লক্ষ্য
- ০.৫% অথবা ০.২৫% ফিনাইলেফ্রিন অথবা ১% ইফিড্রিন ড্রপ শৈস্নষ্মিক ঝিলিস্নর স্ফীতি রোগ করতে সক্ষম
- সম্প্রতি এ রোগে প্যারাসিমপ্যাথোলাইটিক ইপ্রাট্রোপয়ামের উপকারিতা লক্ষ্য করা গেছে
- গলাব্যথার ও জন্য ঈষদুষ্ণ লবণ পানির গড়গড়া উপকারী
- কাশি দমনে কোডিনসমৃদ্ধ সিরাপই গড়গড়া উপকারী
- মাথ্যব্যথা ও জ্বর অ্যাসপিরিন উপকারী কিন্তু ১২ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের অ্যাসপিরিন দেয়া উচিত নয়

সাধারণত সর্দিকাশিতে এন্টিবায়োটিকের কোন ভূমিকা নেই। নাকের নিঃসরণ কমাতে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খুব একটা কার্যকর নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে এ অসুখে ভিটামিন-সি এর উপকারিতা দেখা গেছে

সারা বিশ্বের প্রেক্ষাপটে যখন দেখা যাচ্ছে, কমনকোল্ড জনিত সংক্রমণের হার কমে যাচ্ছে, তখন উন্নয়নশীল দেশসমূহে, ঘন বসতিপূর্ণ স্থানে, নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও পরিবেশ দূষণের কারণে এই নিম্নহার দৃশ্যমান নয়। আমাদের দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ এ রোগের জন্য কারণে অকারণে ভূরি ভূরি ওষুধ সেবন করছেন। কিন্তু কমন কোল্ড জনিত প্রদাহে সঠিকভাবে জীবাণু নির্ধারণ করা কঠিন হওয়ায় সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার প্রদান একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। তাই এন্টিভাইরাল ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করার চাইতে টিকা দিয়ে একে প্রতিরোধ করারই সঠিক ব্যবস্থা।

0Shares
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত