কোভিড- ১৯: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ভিটিএম কিট হস্তান্তর করেছে ডিআরআইসিএম
প্রকাশ : ২৮ মে ২০২০, ০০:৩১
মহামারী করোনাভাইরাসে (সার্স কোভ-২) আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহের জন্য অনেক কম খরচে ভিটিএম বা ভাইরাল ট্রান্সপোর্ট মিডিয়া কিট তৈরি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে হস্তান্তর করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সংস্থা বিসিএসআইআরে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার ‘ডেজিগনেটেড রেফারেন্স ইন্সটিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস’ (ডিআরআইসিএম)।
ভিটিএম কী?
ভিটিএম হচ্ছে লবন, প্রোটিন এবং অ্যান্টিবায়োটিকের সমন্বয়ে তৈরি এক বিশেষ ধরণের সল্যুশন বা দ্রবন যার মাধ্যমে ভাইরাস সংগ্রহ, ট্রান্সপোর্ট এবং দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করা যায়। সার্স কোভ-২-এর নমুনা সংগ্রহের জন্য বিশেষ ধরণের ভিটিএম তৈরির গাইডলাইন দিয়েছে সেন্টার ফর ডিসিজ কন্ট্রোল (সিডিসি, ইউএসএ) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
এদিকে, গত ২৬ মে (মঙ্গলবার) ডিআরআইসিএম পরিচালক ডক্টর মালা খান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার নাসিমা সুলতানার নিকট ৫০০০ (পাঁচ হাজার) করোনা টেস্টের নমুনা সংগ্রহের জন্য ভিটিএম কিট উপহার হিসেবে হস্তান্তর করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিআরআইসিএমের পরিচালক ড.মালা খান বলেন, সার্স কোভ-২-এর নমুনা সংগ্রহের জন্য সেন্টার ফর ডিসিজ কন্ট্রোল (সিডিসি, ইউএসএ) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করে দেশেই অনেক কম খরচে ভাইরাল ট্রান্সপোর্ট মিডিয়া কিট তৈরি করেছে ডিআরআইসিএম। দেশে তৈরি সঠিক মানের এই ভিটিএম কিট করোনার টেস্টের ক্ষেত্রে আমদানি নির্ভরতা যেমন কমাবে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ও সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, করোনার RT-PCR টেস্টে ভিটিএম কিটের অপর্যাপ্ততা একটি বড় বাধা। তা সত্ত্বেও মাঠ পর্যায়ে, অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে, স্যাম্পল কালেকশন করে যাচ্ছেন আমাদের টেকনেশিয়ানরা। সেই সাথে আছে অনেক নতুন প্রশিক্ষণার্থী যারা এই এই দুর্যোগে দেশের কাজে এগিয়ে এসেছেন। খুব স্বল্প সময়ে ট্রেনিং নিয়ে স্বতঃস্ফুর্তভাবে তারা মাঠে নেমে পড়েছেন। যথাযথ উপায়ে ও দ্রুততম সময়ে নমুনা সংগ্রহ ও দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ- এসবকিছু বিবেচনা করে ডিআরআইসিএম ‘কোভিড-১৯’ পরীক্ষা করার জন্য একটি আদর্শ ভিটিএম কিট প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। বিশেষ করে, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে জেলা বা বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত টেস্টিং ল্যাবরেটরীতে ট্রান্সপোর্টেশনের দীর্ঘ সময় নমুনা সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে, ‘ডিআরআইসিএম’ কর্তৃক তৈরিকৃত ভিটিএমে সংগৃহীত নমুনা ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সহজেই তিনদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এক্ষেত্রে, সঠিকভাবে সংরক্ষণের অভাবে স্যাম্পল বাতিল হওয়া, বা বাতিলের কারণে একই নমুনা একাধিকবার সংগ্রহ ও টেস্ট করার দীর্ঘ প্রক্রিয়াটি এড়ানো সম্ভব হবে।
কিটটির বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে ডিআরআইসিএমের পরিচালক ডক্টর মালা খান বলেন, ‘ডিআরআইসিএম’ গবেষক দল ল্যাবরেটরিতে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি, ইউএসএ)’র গাইডলাইন অনুযায়ি ভিটিএম কিট তৈরি করেছে। কিটটিতে সল্যুশন রাখার জন্য টিউব নির্বাচন করা হয় বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে। দায়িত্বরত টেকনেশিয়ান অথবা ল্যাবরেটরীতে কার্যরত গবেষকদের হ্যান্ডলিং করার সময় কোনভাবেই যেন ক্রস-কন্টামিনেশন না হয়, সে বিষয় বিবেচনা করেই সল্যুশন রাখার টিউব নির্বাচন করা হয়েছে। টিউবটি হালকা , সহজে এক হাতে ধরা যায় এবং এতে রবার স্টপার্স সংবলিত মুখ থাকায় চুইয়ে পড়ার কোন সম্ভাবনা নাই।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি, ইউএসএ) অথবা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র গাইডলাইন অনুযায়ি ‘কোভিড-১৯’ রোগীর নমুনা সংগ্রহ করতে হয় মূলত তিনটি স্থান থেকে। নাকের দুটি ছিদ্র ও গলা। নাকের মধ্যে একটি নমুনা হচ্ছে ন্যাজাল সোয়াব এবং অপরটি হচ্ছে নাকের শেষ প্রান্তে গিয়ে গলার পিছনের দেয়াল থেকে Nasopharyngeal সোয়াব। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হচ্ছে Nasopharyngeal নমুনা সংগ্রহ পদ্ধতি। Nasopharyngeal নমুনা সংগ্রহের পদ্ধতি একটু জটিল। তাই এই পদ্ধতিটিকে সহজ করার জন্য কিটটিতে স্যাম্পল কালেকশনের উপযুক্ত সোয়াব স্টিক দেয়া হয়েছে। এছাড়া গলার Oropharyngeal স্যাম্পল কালেকশন করার ক্ষেত্রে রোগীকে যেন দীর্ঘক্ষণ মুখ খোলা রাখতে না হয়, সেজন্য কিটটিতে রয়েছে একটি ‘টাং হোল্ডার’ যা ব্যবহার করে সহজেই ডিপ থ্রট থেকে নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব। এছাড়া কিটটিতে সিডিসি’র গাইডলাইন অনুযায়ী ছবিযুক্ত একটি নির্দেশনালিপি দেয়া হয়েছে যা খুব সহজেই ফলো করতে পারবেন মাঠপর্যায়ের একজন কর্মী।
উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ সংক্রমনের শুরু থেকেই ভাইরাসটির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য গবেষণামূলক কাজ করে যাচ্ছে ডিআরআইসিএম। ইতিমধ্যে, যৌথভাবে নভেল করোনা ভাইরাসের Amplicon based Next Generation Sequencing এর মাধ্যমে পাঁচটি ভাইরাসের পুরো জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন করে আন্তর্জাতিক জীন ব্যাংকের ডাটা বেইজ GISAID এ জমা প্রদান করেছেন বিসিএসআইআরে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার ডিআরআইসিএম, ডিএনএ সল্যুশন লিঃ এবং কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল।