করোনা প্রতিরোধের সেবা বনাম আমাদের অবিবেচকতা
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২০, ০০:২৩
বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। এই ভাইরাসের আক্রমণের ভয়াবহতা এতোই বেশী যে পুরো বিশ্ব একযোগেই একরকম স্থবির হয়ে আছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান প্রদেশে এই ভাইরাসটি প্রথম মানবদেহে সংক্রমণ ঘটায়। সম্পূর্ণ অচেনা, অজানা এই ভাইরাসটিকে বুঝে উঠার আগেই তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো পৃথিবীতে। পৃথিবীব্যাপী এই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৩৭ হাজারের কিছু কম।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে মার্চের ৭ তারিখ। উহানে করোনা ভাইরাস ধরা পড়ার পর থেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকার ও সচেতন মহল। এই ভাইরাসটির কোন প্রতিষেধক আবিস্কার না হওয়ায় ইহার সংক্রমণ প্রতিরোধই সর্বোত্তম পন্থা। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস এর আগমন ঘটে প্রবাসীদের মাধ্যমে। চীনের উহান প্রদেশে যখন করোনা ভাইরাস প্রথম ধরা পড়ে তখন সেখানে অনেক ছাত্রছাত্রী আটকে পড়ে এবং সরকার উদ্যোগী হয়ে তাদেরকে দেশে ফেরত আনে এবং আশকোনা হজ্বক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইন রাখে। সেখানে কারও করোনা ধরা না পড়লেও বিপত্তি বাধে ইউরোপ তথা ইতালিতে ব্যাপক করোনা সংক্রমনের পর। ইতালি সহ বিভিন্ন দেশ থেকে দলে দলে প্রবাসীরা দেশে ফিরতে শুরু করে যাদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে এবং হোম কোয়ারেন্টাইনে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু তখনই মূলত করোনা বাংলাদেশে বিস্তার করা শুরু করে।
করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয় আইইডিসিআর। যেহেতু করোনা প্রচন্ড ছোয়াচে তাই এই রোগের পরীক্ষা সহ বিভিন্ন সহায়তা টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে দেওয়ার ব্যবস্থা করে সরকার এবং কারও মাঝে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ ধরা পড়লে সে যাতে যথাযথ কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে পারে সেই জন্য খোলা হয় হটলাইন। হটলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে আইইডিসিআর থেকে লোক গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
কিন্তু এই চমৎকার ব্যবস্থাপনাটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এবং কেউ কেউ নিছকই মজা করার জন্য হটলাইন নাম্বারগুলোতে অবাঞ্চিত কল করে মূল লাইন ব্যস্ত রাখে। যার ফলে প্রকৃতই যারা সেবার জন্য যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন তারা প্রায়ই ব্যস্ত পান হটলাইন নাম্বারগুলো কিংবা সংযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হন। একই রকম ঘটনা দেশে যখন জরুরী সেবা নম্বর ৯৯৯ চালু হয়। বিভিন্ন উৎকট কথা কিংবা নিছক মজা নেওয়া অথবা অতি উৎসাহী হয়ে আসলেই কাজ করে কিনা জানার জন্য আসতে পারে একের পর এক অবাঞ্চিত কল। ঠিক সেরকমই ঘটে করোনা আক্রান্তদের সেবায় খোলা ৩৩৩ ও ১৬২৬৩ নাম্বার সহ আইইডিসিআর এর হটলাইন নম্বর সমূহে। করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত তথ্য ও সেবা প্রদানে বিদ্যমান হটলাইন নম্বরে বিগত এক সপ্তাহে অসংখ্য অবাঞ্চিত কল এসেছে।
সংশ্লিষ্ট হটলাইন নম্বরে সেবাপ্রদানকারী কয়েকজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, এতে সেবা প্রদানে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন চিকিৎসকরা। আইইডিসিআর-এর হটলাইনের পাশাপাশি আরো দু’টি হটলাইন ৩৩৩ ও ১৬২৬৩ নম্বরের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে নানা তথ্য ও সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত এসব হটলাইনে চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রায় ৬ লক্ষাধিক ফোন কল এসেছে। তবে কিছু অনাকাঙ্খিত কলের মাধ্যমে একটি মহল হটলাইন নম্বরগুলো ব্যস্ত রাখছে এবং অবাঞ্চিত কথাবার্তা বলছেন। এতে প্রকৃত রোগীরা তাৎক্ষণিক সেবা পেতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী চিকিৎসক বলেছেন, তিনি কল রিসিভ করার পর তাকে বিভিন্ন অশালীন কথাবার্তা বলেন এবং তাঁকে উদ্দেশ্য করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। অন্যদিকে বিএসএমএমইউ-এর একজন চিকিৎসক বলেন, দেশের বাইরে থেকে একটি গ্রুপ অসংখ্যবার কল করে নানাভাবে বিরক্ত করছে। অসুস্থতা কিংবা চিকিৎসা সম্পর্কিত প্রশ্ন না করে নানা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে থাকেন।
এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এইসব কলের নম্বরসমূহ এবং পুরো কথোপোকথন সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এইসব কলারদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে। ভবিষ্যতেও একই প্রক্রিয়ায় সকল অবাঞ্চিত কলারদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। এছাড়া করোনা ভাইরাস সম্পর্কে অহেতুক আতঙ্কিত না হয়ে বরং তা প্রতিরোধে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
করোনাভাইরাস সংক্রান্ত যেকোন তথ্য পেতে ওয়েবসাইট (www.corona.gov.bd) ভিজিট করুন। এছাড়া যেকোন তথ্য জানতে এবং চিকিৎসা সেবা পেতে কলসেন্টার ৩৩৩ এ যোগাযোগ করার জন্য সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।