মেনোপজের লক্ষণ ও করণীয়
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০১৯, ২০:২৩
মেনোপজ বা ঋতুস্রাব একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়া নারী শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বয়স হলে সব নারী দেহেই এই প্রাকৃতিক বিষয়টি ঘটে। তবে এতে ঘাবড়ে না গিয়ে কিছু বিষয় মেনে চললে এই সময়টিকে অতিক্রম করে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করা সম্ভব। সাধারণত বয়স ৪০ পেরোলেই মেনোপজের জন্য কিছুটা আগাম মানসিক প্রস্তুতি রাখা প্রয়োজন। ৪৫ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে মেনোপজ হতে পারে। অধিকাংশ নারীদের ৫১ বছরের দিকে মেনোপজ শুরু হয়। এই সময় শারীরিক ও মানসিক কিছু পরিবর্তন হয়।
পরিবর্তনগুলো জানিয়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলদি ফুড টিম প্রকাশ করেছে একটি প্রতিবেদন।
১. ওজন বেড়ে যাওয়া
ওজন বেড়ে যাওয়া মেনোপজের পর একটি প্রচলিত সমস্যা। তবে এটি হঠাৎ করে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই ওজন বাড়া স্তন ক্যানসার, বিষণ্ণতা ও টাইপ টু ডায়াবেটিস তৈরি করতে পারে। এ থেকে রেহাই পেতে ব্যায়াম করতে হবে এবং খেতে হবে স্বাস্থ্যকর খাবার।
২. ঘুমের অসুবিধা
মেনোপজের পর হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে ঘুমের অসুবিধা হয়। এ সমস্যা সমাধানে ঘুমের ২০ থেকে ৩০ মিনিট আগে উষ্ণ পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন। এতে সমস্যার কিছুটা সমাধান হতে পারে।
৩. হঠাৎ হঠাৎ মেজাজ ওঠানামা
হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে এই সময়টায় মুডসুয়িং, প্রায় সব নারীরই এটা হয়। হঠাৎ করেই কোনো কারণ ছাড়াই মন-মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আবার এমনিতেই ভালোও হয়ে যায় হঠাৎ হঠাৎ মেজাজ ওঠানামার সমস্যা হয়। বিষণ্ণতা, অস্থিরতাবোধ তৈরি হতে পারে। গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম, ধ্যান, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ভালো ঘুম, পারিবারিক সহচার্য পারে এ থেকে উত্তরণ ঘটাতে।
৪. হাড় ক্ষয়
মেনোপজের পর নারীদের হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপরোসিস একটি প্রচলিত সমস্যা। এমনকি ৩৫ বছরের পর থেকে ধীরে ধীরে এই সমস্যা শুরু হয়। অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধে ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খান।
৫. হট ফ্লাস
শরীরের তাপ হঠাৎ ওঠানামা করা হট ফ্লাসের লক্ষণ। খুব গরম লাগে, ঘেমে যায়, কাজ করতে পারে না, অনেকে রান্নাঘরে ঢুকতে পারছেন না, হঠাৎ করে ভিজে একদম ঘেমে যাচ্ছেন—এ রকম সমস্যা হয়।
মেনোপজের সময় করণীয় সম্পর্কে শিকদার মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান ডা. জিনাত আরা নাসরিন।
তিনি বলেন, প্রথমে তাকে মানতে হবে এটা প্রাকৃতিক একটি বিষয়। এতে দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এই জীবন চর্চায় আমি যেন ফিট থাকতে পারি, সে জন্য কাজ করতে হবে। কেননা, যত বয়স বাড়বে, অন্য অসুখগুলো তো আসবে, মেনোপজ তো একা নয়। আশপাশে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস সকলেই এসে উঁকি দিতে পারে।
এটা মনে রাখতে হবে, বিষয়টি প্রাকৃতিক। এতে কোনো অপকার নেই; বয়সকালে হবেই। এটাকে মেনে নিতে হবে, এক। দ্বিতীয়ত, আমাদের খাদ্যাভ্যাস একটু পরিবর্তন করতে হবে। আগে যেমন বেশি খেতাম, এখন খাওয়াটা কমিয়ে দিতে হবে। একটু ওজন কমিয়ে চলতে পারলে মেনোপজটা খুব সুন্দরভাবে উপভোগ করা যাবে। পাশাপাশি একটু ক্যালসিয়াম, একটু সয়া প্রোটিন—এগুলো বেশি খেতে হবে। আর ব্যায়াম খুবই প্রয়োজন এ সময়ে। এবং যদি সমস্যা হয়, আমরা চিকিৎসকের কাছে যাবো। গেলে চমৎকার ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, হরমোনের ওষুধ রয়েছে, সেগুলো দেবে। এতে ভেঙে পড়ার কিছু নেই; বরং এটা সুন্দর সময়, নারীরা একটি পরিণত বয়সে এসেছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা দিয়ে এই সময়টুকু সমাজের কাছে, দেশের কাজে লাগাতে পারেন।
তাঁদের কোনো ভয় নেই। বাচ্চারা বড় হয়ে যায়, তাঁদের কোনো পিছুটান নেই, বাচ্চা হওয়ার ঝুঁকি নেই। এখন তাঁরা সম্পূর্ণ মুক্ত। নিজেদের জন্য সময় দিতে পারেন। তেমনি তাঁর সময়টুকু সমাজের কাজে লাগিয়ে দিতে পারেন। খুব সহজেই চাইলে এ সময়ে তাঁরা ফিট থাকতে পারেন।আমাদের দেশের নারীরা অত্যন্ত সহিষ্ণু। তাঁরা ভেবেই নেন যে আমার মেনোপজ হয়েছে, এগুলো আমার হবেই। আমার এর জন্য কোনো প্রতিকার নেই। আপন মনে, নিভৃত মনে তাঁরা কষ্ট করেন। এবং তাঁরা জানেনও না, এর প্রতিকার রয়েছে। সুতরাং মেনোপজ নিয়ে সমস্যায় রোগী আমরা খুব একটা পাই না। যখন অন্য অসুখ নিয়ে আসে, প্রশ্ন করি, তখন বুঝতে পারি মেনোপজ তাকে কী চরমভাবে আক্রান্ত করেছে। তাই সব নারীর জানা উচিত, এসব সমস্যার প্রতিকার রয়েছে। তবে হ্যাঁ, যদি সুন্দরভাবে বিষয়টির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন, সেটা ভিন্ন জিনিস।
দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সামান্য পরিবর্তন নিয়ে এলেই মেনোপজের উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তবে তারপরও যদি তার কষ্ট হয়, হাড়ে ব্যথা থাকে, হাড় ক্ষয় হয়ে গিয়ে অস্টিয়পোরোসিস হয়, তখন চিকিৎসকের পরামর্শে ক্যালসিয়াম গ্রহণ এবং হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেয়া যেতে পারে।
সূত্র: এনডিটিভি