হলুদ কেন খাবেন?
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০১৮, ২১:৪৫
বাঙালি রান্নার এক অনন্য উপকরণ হলুদ। একই সঙ্গে ঘরোয়া নানা চিকিৎসায় চমৎকার কাজ করে হলুদ। হলুদের মধ্যে থাকা কারকুমিন বিভিন্ন অসুখ বিসুখের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক অন্যতম হাতিয়ার।
হলুদ আসলে এক ধরনের গুল্ম জাতীয় অর্থাৎ নরম কান্ডের গাছ। আর এর কন্দ বা মূলটি হল হলুদ। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে কারকুমিন নামে এক ধরনের জৈব যৌগ, যা এক বিশেষ ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। কারকুমিন ছাড়াও হলুদে আছে যথেষ্ট পরিমাণ ফোলেট (ফলিক অ্যাসিডের মূল উপাদান), নিয়াসিন, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, ভিটামিন কে, ভিটামিন ই, প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট। এখানেই শেষ নয়, কাঁচা হলুদে আছে ভিটামিন সি।
তবে ভেজাল মেশানো গুঁড়ো হলুদ শরীরের উপকারের বদলে ক্ষতিই করে। তাই ভাল কোম্পানির নায্য মূল্যের হলুদ ব্যবহার করাই বাঞ্ছনীয়। কম দামি হলুদে থাকা মেটালিন ইয়লো কারসিনোজেনিক অর্থাৎ ক্যানসার উদ্দীপক। এই ব্যাপারটা ভুললে চলবে না।
হলুদে থাকা কারকুমিন গলব্লাডার অর্থাৎ পিত্তথলিকে উদ্দীপ্ত করে পিত্ত প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। ফলে হজম ক্ষমতা বাড়ে।
সমীক্ষায় জানা গেছে ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম, আলসারেটিভ কোলাইটিস, ক্রোনস ডিজিজ ইত্যাদি পেটের রোগ প্রতিরোধে হলুদ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়।
অস্টিও আর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস সহ জয়েন্ট পেন কমাতে পারে হলুদ। এই প্রসঙ্গে জেনে রাখা ভাল অনেকের ধারণা শুধুমাত্র কাঁচা হলুদই বোধহয় স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। শুকনো হলুদ বা গুঁড়ো হলুদ যদি খাঁটি হয়, তাও সমান উপকারি। কাঁচা হলুদে ভিটামিন সি থাকে যা, গুঁড়ো হলুদে থাকে না। এটাই গুঁড়ো হলুদের সঙ্গে কাঁচা হলুদের প্রধান পার্থক্য।
আমাদের দেশের এক অন্যতম সমস্যা ডায়াবেটিস। সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ খেলে প্যানক্রিয়াস উদ্দীপিত হয় ও সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে। তাই হলুদ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও উপকারী।
হার্টের অসুখ প্রতিরোধ করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় হলুদের কারকুমিন।
ত্বকের যেকোন সমস্যা দূর করতে পারে হলুদ। রোদে পোড়া ত্বকের উজ্জ্বল রং ফিরিয়ে আনা থেকে শুরু করে কাটা ছেঁড়া দ্রুত সারিয়ে দাগ মেলাতে সাহায্য করে কারকুমিন।
বার্ধক্যের এক সমস্যা অ্যালঝাইমার ডিজিজ ও ডিমেনশিয়া বা ভুলে যাওয়া। রোজ হলুদ দেওয়া রান্না খেলে মস্তিষ্কের কোষ উজ্জিবীত থাকে। তাছাড়া অস্টিওআর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস সহ গাটের ব্যথা কমাতে হলুদ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়।
নার্ভের অসুখ প্রতিরোধের পাশাপাশি মন খারাপ ও ডিপ্রেশন কমায় এই ম্যাজিক মশলা।
টিপস: মনে রাখবেন হলুদ দিয়ে রান্নার সময় তা যেন পুড়ে না যায়। অনেকে রিচ রান্নার সময় কষতে গিয়ে হলুদ প্রায় পুড়িয়ে কালচে করে তোলেন। এটা কিন্তু আমাদের শরীরের অনেক ক্ষতি করতে পারে। রান্নার হলুদ যেন হলুদ রঙেরই থাকে, খয়েরি বা কালচে হয়ে না যায়।
ভেজাল হলুদ খাবেন না, এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
হলুদ খান ভাল থাকুন।
সূত্র: আনন্দবাজার