জন্মের পর থেকে প্রতিক্ষণই যন্ত্রণায় শিশু ফাতেমা
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৯:৫০
শিশু ফাতেমা। মাত্র ১৯ মাস চলছে তার। অর্থাৎ দেড় বছরের এই শিশু হাসি-খুশি আর প্রফুল্ল থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আর চেষ্টা করবে বাবা-মা ডাক শিখতে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসের কারণে এসব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ফাতেমা।
জন্মের আধ ঘণ্টা পর থেকেই ফাতেমার প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে যন্ত্রণায়। এক জটিল রোগ বাসা বেঁধেছে তার শরীরে। চিকিৎসা করতে গিয়ে মা-বাবা এখন অনেকটাই নিঃস্ব। বর্তমানে বিনা চিকিৎসায় কাতরাচ্ছে শিশুটি। এদিকে রোগের কারণে মানসিক ও দৈহিক কোন বিকাশ ঘটছে না তার।
ফাতেমা টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার নল্লা আকন্দবাড়ি গ্রামের মো. নজরুল ইসলাম ও হামিদা বেগমের সন্তান এবং জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি থানার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. আব্দুল হামিদের নাতনী। এই দম্পতির এক ছেলে জন্মের ১৫ বছর পর ফাতেমার জন্ম হয়। জন্মের আগেই চিকিৎসক আগাম বার্তা দেন শিশুটির মাথা তুলনামূলকভাবে বড়। ভূমিষ্ট হওয়ার পর এর কারণ জানা যাবে।
ফাতেমার মা জানান, জন্মের আগেই আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে জানা যায়, শিশুটির মাথার আকৃতি তুলনামূলকভাবে বড়। তবে চিকিৎসক তখন কারণ জানাতে পারেনি। নির্ধারিত সময়ে জামালপুর আমেনা ক্লিনিকে সিজার অপারেশনের মাধ্যমে ফাতেমার জন্ম হয়। তখন সিজার করেন ওই ক্লিনিকের গাইনি ও সার্জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. ফাতরিয়া। জন্মের পর শিশুটি একটু অস্বাভাবিক দেখে চিকিৎসক তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. তাইজুল ইসলাম দু’দিন চিকিৎসা করে অবস্থার অবনতি দেখে শিশুটিকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
সেখানে চিকিৎসক ড. তোফাজ্জল হোসেন সিদ্দিকী, ডা. জয় ও ডা. সাইফুল ইসলাম শিশু ফাতেমাকে চিকিৎসার দায়িত্ব পান। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক নিশ্চিত হন শিশুটির ব্রেইনে পানি জমা আছে। গর্ভাবস্থায় মায়ের ঠান্ডা লাগা থেকেই শিশুটির এই অবস্থা হয়েছে।
অন্যদিকে, শিশুটির পিঠে ফোসকাও পড়েছে। যা মেরুদণ্ড পর্যন্ত ছড়িয়েছে। পরে চিকিৎসক শিশু ফাতেমাকে দুটি অপারেশন করেন। মস্তিস্ক থেকে পানি বের হওয়ার জন্য অপারেশনের পর একটি অস্থায়ী নল লাগিয়ে দেন। কয়েক দিনের মধ্যে ফাতেমার অবস্থা স্বাভাবিক হতে থাকে। টানা দেড় মাস চিকিৎসা শেষে ফাতেমা নিয়ে তার পরিবার বাড়ি ফিরে আসে।
বাড়ি ফেরার পর থেকে পুনরায় এই ভালো এই মন্দভাবে কাটলো দেড় বছর। এর মধ্যে একটি মুহূর্তও স্বাভাবিক জীবন কাটেনি। সম্প্রতি ফাতেমার মাথার আকৃতি ক্রমশ বড় হচ্ছে। এই মুহূর্তে সুচিকিৎসা না হলে শিশুটির ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন চিকিৎসকরা।
ফাতেমার বাবা নজরুল ইসলাম জানান, মেয়েকে সুস্থ করতে তিনি তার সব সম্বল হারিয়েছেন। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে তিনি দুটি গাভী পালন করে কোন রকমে সংসার চালাচ্ছেন ঠিকই কিন্তু মেয়েকে বাঁচাতে চিকিৎসা খরচ কোনভাবেই জোগাড় করতে পারছেন না।
শিশু ফাতেমাকে বাঁচাতে চিকিৎসার সহযোগিতার জন্য বিত্তবানদের প্রতি জোর দাবি জানান নজরুল ইসলাম।