ঝুলন গোস্বামী: ৩০০ উইকেট নেয়া প্রথম নারী ক্রিকেটার
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০১:৫৮
নারীদের ক্রিকেট ইতিহাসে বর্তমানে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিদের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছেন ভারতের ঝুলন গোস্বামী। শ্রীলঙ্কা নারী ক্রিকেট দলের বিপক্ষে চলা চলমান সিরিজে ২ উইকেট নিয়ে ৩০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়ে পুরুষ বিভাগকে চমকে দিয়েছেন ৩৫ বছর বয়সী এই পেসার। ভারতীয় নারী দলের অধিনায়ক মিতালি রাজও গড়েন আরেক রেকর্ড। একই দিনে অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ সংখ্যায় ওয়ানডে ম্যাচ নেতৃত্ব দিয়েছেন মিতালি রাজ। তার নেতৃত্ব দেয়া ম্যাচের সংখ্যা ১১৮।
এদিকে, একমাত্র নারী ক্রিকেটার হিসেবে রেকর্ড গড়া ঝুলন গোস্বামীর ঝুলিতেই রয়েছে ওয়ানডেতে ২০০ উইকেট নেয়ার বিরল কৃতিত্ব। অনন্য এই নারী ক্রিকেটারের ৩০০ উইকেটের মধ্যে আছে টেস্টে ৪০ উইকেট, একদিনের ক্রিকেটে ২০৫ উইকেট ও টি-টোয়েন্টিতে ৫৬ উইকেট। শুধু বাঙালি হিসেবেই নয়, পুরো ভারতজুড়ে তিনিই প্রথম নারী ক্রিকেটার যিনি ডি লিট উপাধি লাভ করেছেন।
এক নজরে ঝুলন গোস্বামী
প্রথম জীবন: ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নদিয়া জেলার চাকদহ গ্রামে ১৯৮২ সালের ২৫শে নভেম্বর ঝুলন গোস্বামী জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নিশীথ গোস্বামী এয়ার ইন্ডিয়ার একজন ক্যান্টিন কর্মী ছিলেন। তার মাতা ঝর্ণা গোস্বামী গৃহবধূ। ঝুলনের এক ভাই ও এক বোন কুনাল ও ঝুম্পা।
ক্রিকেট জীবন: ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটপ্রেমী ঝুলন চাকদহ থেকে ভোরের ট্রেনে কলকাতায় এসে বিবেকানন্দ পার্কে নিয়মিত প্র্যাকটিস শুরু করেন। বোলার হিসেবে খেলা শুরু করার পরামর্শ দেন কোচ স্বপন সাধু। এছাড়া তিনি নিয়মিত খেলতে থাকেন স্থানীয় ফ্রেন্ডস ক্লাব এবং নবারুণ সমিতিতে।
২০০২ সালের ৬ই জানুয়ারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একদিনের ক্রিকেটে ঝুলনের আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল। ভারতীয় গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাতকারে উইকেটের এই বিশাল ভান্ডারে কোন উইকেটটিকে তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, একজন বোলারই জানে, প্রত্যেকটা উইকেট তুলতে তাকে কতটা কষ্ট করতে হয়। সেই কারণে প্রত্যেকটা উইকেটই আমার কাছে মূল্যবান হয়ে থাকবে।
তবে যদি একটি উইকেট বেছে নিতে হয় আমি বলবো, প্রথম উইকেটটা। কারণ, ভারতের হয়ে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামার সময় শুধু একটাই কথা ভাবছিলাম। অন্তত একটা উইকেট আমাকে পেতেই হবে। তা না হলে যদি আর কখনও ভারতের হয়ে খেলার সুযোগ না পাই, আমার নামের পাশটা ফাঁকা থেকে যাবে। নামের পাশে কোনও উইকেটই তো লেখা থাকবে না। প্রার্থনা করে যাচ্ছিলাম, অন্তত একটা উইকেট যেন পাই। পিছন ফিরে তাকালে অভিষেক ম্যাচের সেই আকুতিটা মনে পড়লে প্রথম উইকেটটাকে খুব দামি মনে হচ্ছে।
বর্তমানে নারী ক্রিকেটে অন্যতম দ্রুততম বোলার হিসেবে বিবেচনা করা হয় ঝুলন গোস্বামীকে। ক্যারিয়ারে তার সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ৩১ রানে ৬ উইকেট। ২০০৫ এবং ২০১৭ এই দুইবছর বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে ভারতীয় নারী ক্রিকেট দলকে পৌঁছানোর পেছনে অনন্য অবদান রাখেন ঝুলন গোস্বামী। ২০১৭ বিশ্বকাপ ফাইনালে ১০ ওভারে, ৩টে মেডেন ওভার সহ ২৩ রান দিনে ৩ উইকেট পান ঝুলন। তবে দুইবার বিশ্বকাপ ফাইনালে পৌঁছালেও বিশ্বকাপ জয় এখনও অধরা ভারতীয় নারী ক্রিকেট দলের।
সম্মাননা: ২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন ঝুলন। প্রথম টেস্ট ম্যাচে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে ব্যাট করতে নেমে অর্ধশত রান করেন। প্রথম ইনিংসে ৩৩ রান দিয়ে ৫ উইকেট এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৫ রান দিয়ে ৫ উইকেট দখল করেন ঝুলন। ভারত এই টেস্ট সিরিজটি জয়লাভ করার পর মুম্বাইতে ক্যাস্ট্রল অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয় ঝুলন গোস্বামীকে।
২০০৭ সালে প্রথম ভারতীয় নারী ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসি বর্ষসেরা নারী ক্রিকেটার পুরষ্কার পান ঝুলন গোস্বামী।
২০১০ সালের ২৯ অগাস্ট ক্রীড়া ক্ষেত্রের সর্বোচ্চ সরকারি সম্মান পান অর্জুন পুরস্কার লাভ করেন ঝুলন গোস্বামী।
২০১২ সালে ক্রীড়া ক্ষেত্রের বিশেষ অবদানের জন্য ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান পদ্মশ্রী পুরষ্কার লাভ করেন ঝুলন গোস্বামী।
২০১৭ সালে কল্যানী বিশ্ববিদ্যালয় ডি লিট সন্মান দিয়ে সন্মানিত করে প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক এবং বর্তমানে একদিনের ম্যাচে বিশ্বে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক ঝুলন গোস্বামীকে।