এক ছবিতে তোলপাড়, প্রশ্নের মুখে বন বিভাগ
প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৮:১৪
একটি ছবিকে ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। একাত্তর টিভির সিনিয়র রিপোর্টার হোসেন সোহেল এর পোস্ট করা ঐ ছবির ফলে প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশের বন বিভাগ এবং বিশ্বব্যাংক এর ভূমিকা নিয়ে।
বুধবার দিবাগত রাতে নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে একটি ছবি পোস্ট করেন হোসেন সোহেল। ছবিতে বন বিভাগের কর্মকর্তা ও বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তাদের একটি হাতির দাঁত হাতে নিয়ে হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ছবিটি পোস্ট করে তার ক্যাপশনে হোসেন সোহেল লিখেন,
"বছরের সেরা ছবিতে__বনবিভাগের সেরা অপকর্ম !!
নিজেদের আইন নিজেরা ভেঙ্গে দাঁত কেলিয়ে হাসছে ...
বিশাল আকৃতির হাতির দাঁত শুধু তেলবাজি করতে বিশ্ব ব্যাংক কর্মকর্তার হাতে তুলে দিয়েছে বনবিভাগের কতিপয় লোক। অথচ বন আইন কি বলে...
বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২
আইনের ৬ ধারা মোতাবেক এই আইনের তফসিলে উল্লেখিত বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী শিকার বা বন্যপ্রাণী, মাংস, ট্রফি, অসম্পূর্ণ ট্রফি, বন্যপ্রাণীর অংশবিশেষ অথবা এসব হতে উৎপন্ন দ্রব্য দান, বিক্রয় বা কোনো প্রকারে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা অন্য কারো নিকট হস্তান্তর করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আইনের ৪১ ধারা মোতাবেক আরো উল্লেখ রয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহায়তা করলে বা উক্ত অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা প্রদান করে থাকলে এবং উক্ত সহায়তা বা প্ররোচনার ফলে অপরাধটি সংঘটিত হলে, উক্ত সহায়তাকারী বা প্ররোচনাকারী তাহার সহায়তা বা প্ররোচনা দ্বারা সংঘটিত অপরাধের জন্য নির্ধারিত দন্ডে দন্ডিত হইবেন।[১]"
তার এই পোস্টের পর থেকেই এই ছবি নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয় ফেসবুকে। এই ধরণের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে মন্তব্য করেন অনেকেই। পোস্টটি শেয়ারও করেছেন প্রায় শ'খানেক মানুষ।
তবে বানক্রক লিমিটেড নামে বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুশতাক আহমেদ ঐ পোস্টে মন্তব্য করেন, "আপনি কি নিশ্চিত এটা বিশ্ব ব্যাংক এর কর্মকর্তাকে উপহার দেয়া হয়েছিল? কখন ঘটেছিল এই ঘটনা? আমি যতদূর জানি, এটা বন্যপ্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ইউনিট এর ফরেনসিক ল্যাব এর উদ্বোধন এর সময় একটা ফটোসেশন ছিল আর তারা ছবি তোলার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন"।
মুশতাক আহমেদ আরো বলেন, যদি হোসেন সোহেল এর বক্তব্য সঠিক হয়ে থাকে তবে এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক এর সেই কর্মকর্তা নিশ্চয়ই তার চাকরী হারাবেন কারণ এটা জাতিসংঘের আচরণবিধির লঙ্ঘন। একই সাথে তিনি এটাও বলেন যে, যদি এটা শুধুমাত্র সাধারণ একটা ফটোসেশন হয়ে থাকে তাহলে এই ছবি পোস্ট করার কারণে তিনি হলুদ সাংবাদিকতার অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন।
এর উত্তরে হোসেন সোহেল বলেন, আপনার পর্যবেক্ষণের জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু আমি যতদূর জানি, সাইটিস এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ অনুসারে জব্দকৃত বন্যপ্রাণীর অংশবিশেষ যেমন চামড়া, শিং, দাঁত, কঙ্কাল ইত্যাদি কিভাবে পরিচালনা করতে হবে তা সুস্পষ্টভাবে বলা আছে।
এদিকে হোসেন সোহেল এর সেই পোস্টে বাংলাদেশ বন বিভাগ এর ভেটেরিনারি সার্জন সৈয়দ হোসেন মন্তব্য করেন, গত ৩১ অক্টোবর বিশ্বব্যাংক এর সহায়তায় স্থাপিত বন্যপ্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ইউনিট ও এর ফরেনসিক ল্যাব পরিদর্শনে বিশ্বব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এখানে আসেন। আমরা তাদেরকে এই ট্রফি, বন্যপ্রাণীর বিভিন্ন অংশ ও আরো অনেক কিছু দেখাই যা আমাদের ইউনিট বাজেয়াপ্ত করেছিল। আমি আমার ফেসবুক দেয়ালে সেসব ছবি পোস্টও করেছিলাম। কিন্তু হোসেন সোহেল এই ছবিকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে উপস্থাপন করেছেন। সাইটিস এর যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া কেউ কাউকে কোন বন্যপ্রাণীর ট্রফি উপহার দিতে পারে না। আমি অনুরোধ করবো হোসেন সোহেল এই ছবিটি মুছে দিবেন।
এই ব্যাপারে হোসেন সোহেল জানান, এই ছবি পোস্ট করার পর থেকে বন বিভাগ থেকে তাকে ক্রমাগত ফোন করে এই পোস্টটি মুছে ফেলার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। তবে সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া তিনি তা মুছবেন না বলেও জানান।