'তর্কের আমন্ত্রণে সাড়া না দিয়ে আক্রমন করে ছাত্রলীগ'
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২২:০৪
রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্রের পক্ষে উন্মুক্ত বিতর্কের আহ্বান জানানো হলেও তা উপেক্ষা করে বাঁচাও সুন্দরবন সাইকেল মিছিলে আগতদের উপর ছাত্রলীগ নেতারা আক্রমন করে বলে অভিযোগ করেছেন সাইকেল মিছিল এর আয়োজকরা।
বাঁচাও সুন্দরবন সাইকেল মিছিল এ সমন্বয়ক সামান্তা শারমিন এর স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এই অভিযোগ করা হয়।
বার্তায় বলা হয়, আজ শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সুন্দরবন বাঁচানোর জন্য স্বতঃস্ফূর্ত মানুষের উদ্যোগে আয়োজিত পূর্ব ঘোষিত 'বাঁচাও সুন্দরবন' সাইকেল মিছিলে দফায় দফায় ছাত্রলীগ ও পুলিশ হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় আহত হয়েছেন অর্ধ শতাধিক। বর্তমানে তিন জন ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি আছেন, এর মধ্যে একজন ঢাবির ইসলামের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হাসিব মোহাম্মদ আশিক। যার ডান হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। দুজনকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়েছে।
আহত হাসিব মোহাম্মদ আশিক ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য বলে জানিয়েছেন ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় নেতারা।
সাইকেল মিছিলের আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, সকাল ৯টা থেকে যখন শত শত সাইকেলিস্ট শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে জড়ো হয়। তারা সাইকেল মিছিল শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এসময় পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই 'ছাত্রলীগের গুন্ডা বাহিনী' শহীদ মিনারে এসে সাইকেল মিছিলে আগত সকলকে মানববন্ধন করার নাম করে পুরো শহীদ মিনারকেই অবরুদ্ধ করে ফেলে। সেই সাথে বিভিন্ন হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়ে জোর করে শহীদ মিনারে নিয়ে এসে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে প্ল্যকার্ড বহন ও স্লোগান দিতে বাধ্য করে। শুধু তাই নয় তারা সাইকেল মিছিলে আগত সাধারণ মানুষকে হুমকি ধামকি ও নানা রকম হয়রানি করতে শুরু করে। তারা সাইকেল মিছিলে আগত কাউকেই শহীদ মিনার থেকে বের হতে কিংবা বাইরে থেকে আরও যারা মিছিলে যোগ দিতে শহীদ মিনারে এসেছিলেন তাদেরকে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ঢুকতে দেয় নি। এমনকি ওষুধ, পানি সহ জীবন রক্ষাকারী জিনিসপত্র পর্যন্ত তারা শহীদ মিনারে ঢুকাতে দেয়নি।
আয়োজকদের অভিযোগ, কোন রকম উস্কানি ছাড়াই যখন শান্তিপুর্ণ ভাবে সাইকেল মিছিলটি অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ও শিল্পী কফিল আহমেদের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করার জন্য শহীদ মিনার প্রাঙ্গন থেকে নামার চেষ্টা করলে সাইকেল মিছিলকারীদের সামনে ঢাল হিসেবে সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিশেষ করে মেয়েদের সামনে দাঁড় করিয়ে পেছন থেকে ছাত্রলীগের নেতারা বাধা দিতে থাকে। তারা সাইকেল মিছিলে আগত নারী শিশু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। সাইকেল মিছিলটি বিভিন্ন সময়ে আরও ৫ বার শহীদ মিনার থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কাউকে বের হতে দেয় নি বলে অভিযোগ করেন আয়োজকরা।
বার্তায় বলা হয়, একপর্যায়ে সাইকেল মিছিল থেকে তাদেরকে ঘিরে রাখা রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে স্লোগানকারীদের রামপালের পক্ষে উন্মুক্ত বিতর্কের জন্য আমন্ত্রণ করা হলেও তারা কাপুরুষোচিত ভাবে সেই আহবানে সাড়া না দিয়ে কোন যুক্তি ছাড়াই সাইকেল মিছিলকারীদের অবরুদ্ধ করে রাখে।
একই সময়ে শাহবাগ, ধানমন্ডি, নীলখেত, পলাশী, কাকরাইল সহ বিভিন্ন জায়গায় সাইকেল মিছিলে জন্য আগত সাইক্লিস্টদের পুলিশ আটকে দেয় বলে বার্তায় দাবি করা হয়। শুধু তাই নয় ঢাকা কলেজের সামনে সাইকেল মিছিলে আসছে শুনে ছাত্রলীগের গুন্ডারা একজন সাইক্লিস্টকে প্রহার করে এবং তার সাইকেল ভেঙ্গে দেয়, এমনকি শহীদ মিনার থেকে সাইকেল ছিনিয়ে নেয়া হয় বলে দাবি অভিযোগ করেন আয়োজকবৃন্দ।
বার্তায় বলা হয়, বিভিন্ন জায়গায় থেকে সাইকেল আরোহীরা একত্রিত হয়ে স্লোগান দিতে দিতে শহীদ মিনারে অবরুদ্ধ সাইকেল আরোহীদের পাশে দাঁড়াতে গেলে ছাত্রলীদের নেতাদের সাথে সাইকেল মিছিলে আগতদের পুনরায় ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে ব্যরিকেড ভেঙ্গে সাইকেল মিছিলকারীরা প্রেসক্লাবের দিকে সাইকেল মিছিল শুরু করে, তখনি দোয়েল চত্বর থেকে পুলিশ অতর্কিতে নিরীহ সাইক্লিস্টদের উপরে ব্যপক হারে জল কামান নিক্ষেপ করে সাইকেল মিছিলটি ছত্র ভঙ্গ করে দেয়। পরে ছত্র ভঙ্গ হয়ে যাওয়া মিছিলকারীদের একটি অংশ প্রেসক্লাবের সামনে এসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
বিক্ষোভ সমাবেশে তেল-গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন 'সাইকেল মিছিলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের দফায় দফায় হামলায় এটাই প্রমান হয়েছে যে, সরকার ভয় পেয়েছে এবং সরকারের নৈতিক পরাজয় ঘটেছে'।
প্রেসক্লাবের সামনের এই সংক্ষিপ্ত বিক্ষোভ সমাবেশেও পুলিশ দফায় দফায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ সাইকেল মিছিল আয়োজকদের।
প্রেসক্লাবের সামনে সকল সাইকেল মিছিলকারীরা একযোগে রামপাল বিদ্যুৎকে লাল কার্ড দেখান। তেল-গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি, প্রগতিশীল ছাত্রজোট, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য, গণঅধিকার সংগ্রাম কমিটি, সর্বপ্রাণ সাংস্কৃতিক শক্তি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শান্তিপূর্ন সাইকেল মিছিলের উপরে এই ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।