অধ্যাপক রিয়াজুলের শাস্তি প্রত্যাহার এর আবেদন
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০১৭, ০০:৩৩
ক্লাসে ‘অশ্লীল চিত্র’ দেখানোর অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সাময়িক বরখাস্ত অধ্যাপক রিয়াজুল হক এর শাস্তি প্রত্যাহার এর দাবি জানিয়েছেন উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের ১০ শিক্ষক।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে দেওয়া এক চিঠিতে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রিয়াজুলের বরখাস্তের আদেশ স্থগিতের অনুরোধের সঙ্গে আরও ছয়টি সুপারিশ করেছেন তারা।
শিক্ষকদের চিঠিতে বলা হয়, “সাময়িক বরখাস্তের পরিবর্তে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে এক্ষেত্রে কোর্সটি পড়ানো থেকে ওই শিক্ষককে বিরত রাখা হোক।”
এছাড়া তার বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কনটেন্ট ও স্লাইডগুলো পর্যালোচনার জন্য একটি নারী ও জেন্ডার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করার সুপারিশও করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, “যে স্লাইডগুলোকে ‘আপত্তিকর’ বলা হয়েছে সেগুলো কোনও জেন্ডার বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে যাচাই করা উচিত ছিল”।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষকের জন্য জেন্ডার বিষয়ক একটি প্রাথমিক ধারণামূলক আয়োজনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন এই শিক্ষকরা।
তারা বলেন, “সংশ্লিষ্ট শিক্ষক গত কয়েক বছর যাবৎ কোর্সটি পড়িয়ে আসছেন। কিন্তু এতদিন পর শুধুমাত্র কতিপয় শিক্ষার্থীর অভিযোগ এবং এই অভিযোগ ঠিক কোন কোন স্লাইডের ভিত্তিতে করা হল, তা নারী ও জেন্ডার বিষয়ক কোনও বিশেষজ্ঞ দ্বারা যাচাই না করেই সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্তটি আমাদের কাছে যথাযথ মনে হয়নি।”
চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের শিক্ষক তানিয়া হক বলেন, “ওই ঘটনার পর আমাদের নিজেদের আশঙ্কার জায়গা থেকে আমরা উপাচার্য মহোদয়ের কাছে কিছু সুপারিশ দিয়েছি। তিনিও আমাদের বলেছেন, সব দিক বিবেচনায় নিয়ে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্তে আসবে।”
তিনি বলেন, “জেন্ডার বিষয়ক কোর্স পড়ানোর সময় প্রজনন স্বাস্থ্য, যৌনতা, জনসংখ্যা বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয় চলে আসে। যেখানে এমন কিছু শব্দ বা আলোচ্য সূচি চলে আসে, যা হঠাৎ করে অনেকের জন্য বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হতে পারে। তবে সেগুলোকে আপত্তিকর বলার আগে, কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখছি সেটা গুরুত্বপূর্ণ।”
চিঠিদাতাদের আরেকজন আয়েশা বানু বলেন, “ওনার কনটেন্ট ও নিউজ পেপারে সংবাদ দেখে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এটা আপত্তিকর নয়। বিষয়ের প্রয়োজনে এ রকমের কনটেন্ট আসতেই পারে। এ কারণে যদি তার সাময়িক বহিষ্কার হয়ে যায়, তাহলে আমরা সেটার জন্য শঙ্কিত বোধ করেছি ব্যক্তিগতভাবে। এটা বিভাগের অবস্থান না অথবা বিভাগের পক্ষ থেকে না। আমাদের কয়েকজনের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে এ জন্য যে, আমরা যা পড়াই, সেটার বিষয়বস্তুও এই রকমই।”
তিনি বলেন, “১০ জনে মিলে আমরা সুপারিশ করেছি, যেন তার ন্যায়বিচারটা হয়, স্বচ্ছতার সঙ্গে হয়, বিশেষজ্ঞভিত্তিক তদন্ত যেন হয়। এবং এ বিষয়টা না বুঝতে পেরে, বা ভুল বুঝে আপত্তিকর মনে করতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে উপাচার্যের কাছে যাই।”
তবে উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. শাইখ ইমতিয়াজ বলেন, “শিক্ষকরা মতামত জানাতেই পারেন। কিন্তু বিভাগের একাডেমিক কমিটিতে আলোচনা ছাড়া এভাবে বিভাগীয় প্যাডে চিঠি যাওয়ার কথা না। আমরা বিষয়টি নিয়ে বিভাগের একাডেমিক কমিটিতে আলোচনা করে দেখব।”
অধ্যাপক রিয়াজুলের বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, “আমার ব্যক্তিগত অবস্থান হচ্ছে, আমাদের এভাবে ধৈর্যহারা হলে চলবে না। পুরো বিষয়টা কী হয়েছে তার জন্য শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত। আবার শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের স্বাধীন মতামত প্রকাশের বিষয়টিও আমাদের দেখতে হবে।”
উল্লেখ্য, শ্রেণীকক্ষে ‘অশ্লীল চিত্রের’ মাধ্যমে পাঠদানের অভিযোগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. মো. রিয়াজুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এই সিদ্ধান্তের পর এ নিয়ে সামাজিক গণমাধ্যমে সমালোচনা করেন অনেকেই।
পরে অভিযুক্ত সেই শিক্ষকের পাঠদানের স্লাইডগুলো সংগ্রহ করে তা নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় জাগরণীয়ায়, যেখানে দেখা যায় স্লাইডগুলোতে ধর্ষণ, নারী আন্দোলন, হিজড়া, যৌনকর্মী ও সমকামীদের কথা উঠে এসেছে যা এই বিষয়ে পাঠদানের জন্য তৈরি।