'মেধাবীরা যেন বিপথে না যায়'
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০১৭, ১৬:৪১
দেশের মেধাবী তরুণদের ধর্মান্ধ হয়ে বিপথে গিয়ে জঙ্গি না হতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জঙ্গিবাদের থাবা থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত রাখতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের আরও উদ্যোগী হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার নিজ কার্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থীদের ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক ২০১৩ ও ২০১৪’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। জঙ্গিবাদের পাশাপাশি মাদকাসক্তি থেকে ‘ছেলেমেয়েদের’ রক্ষা করতে অভিভাবক, শিক্ষকসহ সবাইকেই আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
অনুষ্ঠানে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ পাওয়া ২৩৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৬ জনের হাতে পদক তুলে দেন শেখ হাসিনা।
সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামের নামে জঙ্গিবাদের প্রসারের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, "কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এখানে কথা হচ্ছে, কারা এদের হাতে অস্ত্র দিচ্ছে? কারা এদের টাকা দিচ্ছে? কারা এদের উৎসাহিত করছে?”
শেখ হাসিনা বলেন, “অনেক উন্নত দেশ, সেখানে পড়াশোনা করতে গিয়ে উল্টো এ ধরনের জঙ্গিবাদের পথে চলে যাচ্ছে। আমাদের দেশেও কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। সত্যিই আমি অবাক হয়ে যাই, মেধাবী, শিক্ষিত, উচ্চবিত্ত (পরিবারের) ছেলেমেয়েরা কীভাবে ধর্মান্ধ হয়ে যায়, আর কীভাবে জঙ্গিবাদের পথে যায়। এটা আমার কাছে বোধগম্য নয়।”
ইসলামকে ‘শান্তির ধর্ম’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখানে কখনোই বলা হয়নি যে, নিরীহ মানুষ হত্যা কর। আর নিরীহ মানুষ হত্যা করলে বেহেস্তে চলে যাবে- এটা কি করে হয়?”
জঙ্গিদের আত্মঘাতি হামলার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমাদের ইসলাম ধর্মে আত্মহত্যা মহাপাপ। সেই মহাপাপের পথে কি করে যায় ধর্মের নামে?"
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ছেলেমেয়েরা কি করছে, কোথায় যাচ্ছে, ক্লাসে অনুপস্থিত থাকছে কি না- সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে তারা বিপথে যেতে না পারে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা বাংলাদেশের মানুষ। আমরা ধর্মে বিশ্বাস করি, ধর্ম পালন করি, আমরা ধর্মভীরু, কিন্তু ধর্মান্ধ নই। আর আমাদের বাংলাদেশে, এই ভূখণ্ডে সকলে যার যার ধর্ম পালন করবে স্বাধীনভাবে। সেই অসাম্প্রদায়িক একটা চেতনা নিয়েই বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “এই অঞ্চলে আমরা সবসময় একটা সম্প্রীতি নিয়ে চলি। কিন্তু সেই জায়গায় উগ্রবাদ যে ধ্বংস এনে দেয়, বা আমাদের পবিত্র ধর্ম ইসলামের যে বদনাম করে দিচ্ছে- সেটা তারা (জঙ্গি) বোঝে কি না তা জানি না।”
এসব মোকাবিলায় তার সরকার এর উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "এই সরকার শিক্ষার প্রসার ঘটানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ক্রীড়া ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। যেন মেধাগুলো বিপথে গিয়ে তাদের জীবনটাকে নষ্ট করে না দেয়। ওরকম আত্মহননের চিন্তা যেন তাদের মধ্যে না থাকে। আত্মঘাতমূলক কাজ যেন তারা না করে বা তারা যেন ধর্মান্ধ হয়ে না যায়। ধর্ম মানতে হবে, কিন্তু ধর্মান্ধ যেন না হয়- সেদিকে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।”