স্কুল শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের ‘স্কুল উৎসব’
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১১:৫৪
‘শৈশব হোক আনন্দময়, শিক্ষা হোক সবার’ স্লোগানকে সামনে রেখে বিভিন্ন স্কুল শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাজধানীতে দিনব্যাপী ‘স্কুল উৎসব’ করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। ১০ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) রাজধানীর তেজগাঁও আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা মহানগর সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত হয় স্কুল উৎসব-২০১৭। সকাল সাড়ে এগারটায় প্রায় অর্ধশত স্কুলের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত এ স্কুল উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট লেখক হায়দার আকবর খান রনো।
জাতীয় সঙ্গীত ও ছাত্র ইউনিয়নের সংগঠন সঙ্গীতের সাথে জাতীয় পতাকা ও সংগঠন পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। দিনব্যাপী এ আয়োজনে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কুইজ, বিতর্ক, নৃত্য, অভিনয়, মোরগ লড়াইসহ মোট ৮টি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। দিনশেষে বিজয়ীদের মধ্য উপহারস্বরূপ বই ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়।
দিনের শুরুতে ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি অনিক রায়ের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি লাকী আক্তার, স্কুল উৎসব প্রস্ততি পরিষদের চেয়ারম্যান দীপক শীল এবং ঢাকা মহানগর সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক জহর লাল রায়। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা মহানগর সংসদের সহকারি সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় হায়দার আকবর খান রনো বলেন, ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে আয়োজিত আজকের এই স্কুল উৎসবে শিশু-কিশোরদের এ মিলনমেলা দেখা আমি অত্যন্ত আনন্দিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজধানীতে স্কুল রক্ষায় ছাত্র ইউনিয়নের আন্দোলনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, শিক্ষার অধিকার আদায়ে ছাত্র ইউনিয়নই সবচেয়ে আস্থার সংগঠন।
হায়দার আকবর খান রনো ক্ষোভ ব্যক্ত করে বলেন, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে শিশুদের জন্য খেলার মাঠ নেই, আবার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীতই গাওয়া হয় না। আগত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তোমাদের বয়েসী অনেক শিশু-কিশোর আছে যারা এ সমাজব্যবস্থার বৈষম্যের শিকার হয়ে আজ স্কুলে যেতে পারছে না, যাদেরকে এ অল্প বয়সেই রুটি-রুজির জন্য কঠিন কাজ করতে হচ্ছে। তোমরা তাদের কথা ভুলে গেলে চলবে না। সকল শিশুর জন্য শিক্ষার সমান অধিকারের জন্যও তোমাদের লড়াই করতে হবে।
সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি লাকী আক্তার বলেন, একের পর এক পাবলিক পরীক্ষা আর সেইসঙ্গে কোচিং-গাইড বইয়ের চাপে শিশুদের সুন্দর শৈশব আজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন ফাঁসের প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, তোমরা কি চাও পরীক্ষার আগের দিন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাক। এসময়ে উপস্থিত শিশু-কিশোররা সমস্বরে ‘না’ বলে উঠে। গাইবান্ধায় রাতের আঁধারে স্কুল পুড়িয়ে দেয়া ও সিলেটে বই উৎসবের সময় মৌলবাদী চক্রের হামলার কথা উল্লেখ করে শিক্ষার উপর বিভিন্ন মহলের আগ্রাসনের নিন্দা জানান লাকী। এছাড়াও ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে পাঠ্যবই থেকে লেখকদের রচনা বাদ দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
স্কুল উৎসব প্রস্ততি পরিষদের চেয়ারম্যান দীপক শীল তাঁর বক্তৃতায় ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা মহানগর কর্তৃক আয়োজিত এ স্কুল উৎসবকে সফল করতে সংগঠনের সকল নেতা-কর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
সমাবেশে জহর লাল রায় একই ধারার, বিজ্ঞানভিত্তিক, সর্বজনীন শিক্ষার দাবি জানান।
সভাপতির বক্তব্যে অনিক রায় বলেন, অন্তত একদিনের জন্য হলেও শিশুদেরকে তাদের শৈশবের অনাবিল আনন্দে ভরিয়ে দিতে আমরা দ্বিতীয়বারের মত এ স্কুল উৎসব আয়োজন করেছি। ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে স্কুল উৎসব আয়োজনের সংকল্প ব্যক্ত করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিপিবি’র কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল্লাহ আল ক্বাফী, ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জিএম জিলানী শুভ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন সেন গুপ্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি তুহিন কান্তি দাস, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি আল আমিন ও ঢাকা মহানগর সংসদের বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ।