কারিগরি শিক্ষায় ছাত্রী ভর্তির হার কমেছে
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০১৬, ১৩:৫৭
কারিগরি স্তরে ছাত্রী ভর্তির সংখ্যা কমেছে। ২০১৫ সালে এই বিভাগে ছাত্রী ভর্তির হার ছিল শতকরা ২৪ ভাগ। ২০১৪ সালে এ সংখ্যা ছিল ২৭ শতাংশ। বর্তমানে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় মোট ৮ লাখ ৭২ হাজার ৬৫৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ২ লাখ ৮ হাজার ৮৭০। সরকারের জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদনে (২০১৬-১৭) এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।
সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোও (ব্যানবেইস) বলছে, ২০১৪ সালে কারিগরি ও ভোকেশনালে ছাত্রী ভর্তির হার ছিল ২৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ২০১৫ সালে তা হয় ২৪ শতাংশ।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অশোক কুমার বিশ্বাসও জানালেন, সামাজিক প্রেক্ষাপটে সার্বিকভাবেই কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। বর্তমানে মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১৩ শতাংশ কারিগরিতে পড়ছে।
সরকারের লক্ষ্য হলো ২০২০ সালের মধ্যে দেশের মোট শিক্ষার্থীর ২০ শতাংশকে কারিগরি শিক্ষায় নিয়ে আসা। তাঁর হিসাবে, কারিগরিতে বর্তমানে ২৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ বা ২৫ শতাংশ ছাত্রী। সরকারি ১১৯টি প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের জন্য ২০ শতাংশ কোটা আছে। তবে সব ক্ষেত্রে এ কোটা পূরণ হচ্ছে না।
অশোক কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা প্রচারের বিষয়টাতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। ছেলেমেয়েদের কারিগরিতে পড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে সারা দেশে ২০ থেকে ২৫ হাজার পোস্টার লাগানো হয়েছে। হেল্প ডেস্ক স্থাপন, এলাকায় মাইকিং করাসহ বিভিন্ন তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
সরকারি পলিটেকনিক্যালের আসন ছিল ৩১ হাজার ৭৮০টি। বর্তমানে আসনসংখ্যা বাড়িয়ে তা হয়েছে ৫৭ হাজার ৫০০টি। সব মিলে আমরা আশাবাদী ২০২০ সালের মধ্যে ২০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী কারিগরিতে পড়বে। আর একই সঙ্গে মেয়েদের সংখ্যাও বাড়বে।’
পরিসংখ্যানগতভাবে ছাত্রীসংখ্যা কমে যাওয়া প্রসঙ্গে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, দক্ষ মানবসম্পদের চাহিদা বাড়ছে।
মানুষের মধ্যে সচেতনতাও তৈরি হয়েছে। তারপরও সংখ্যা কমতে থাকা মানে হলো অগ্রগতির ধারায় ছেদ পড়া। সংখ্যা কমার পেছনে ছাত্রীদের আবাসন ও যাতায়াত সমস্যা একটি কারণ হতে পারে।
মুন্সিগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম চৌধুরী টেলিফোনে বলেন, ছেলেমেয়েদের সংখ্যা সমান হয়নি, তবে সংখ্যা কমছে, তাও বলা যাবে না। সংখ্যাটা বরং বাড়ছেই। বর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠানে ৪০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৭৫ জন মেয়ে শিক্ষার্থী।
মেয়েদের জন্য শতভাগ বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, মফস্বল এলাকা বলে এইচএসসি পাসের পর বেশির ভাগ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। ফলে তাদের বেশির ভাগই আর চাকরিক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে না।
বর্তমানে দেশে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ৭ হাজার ৭৭০টি। এর মধ্যে ১১৯টি সরকারি। সরকারিভাবে ছাত্রীদের জন্য ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও খুলনায় চারটি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট আছে। ছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য আরও তিনটি ইনস্টিটিউট ও প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে মেয়েদের টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়ন ও সম্প্রসারণে স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট ২০১০ সাল থেকে বাস্তবায়িত হচ্ছে। চলতি বছরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পের কাজ সন্তোষজনক হওয়ায় বিশ্বব্যাংক নতুন করে ১০ কোটি মার্কিন ডলার দিয়েছে। প্রকল্পটি আগামী ২০১৯ সাল পর্যন্ত চলবে।
এ প্রকল্পের যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, প্রকল্পের আওতায় সরকারি ৪৯টি প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১৬৩টি প্রতিষ্ঠানের সব নারী শিক্ষার্থীকে মাসে ৮০০ টাকা করে মাসিক বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।
নারী এবং পিছিয়ে পড়া এলাকার মানুষকে স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে যোগদানের জন্য দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে।
জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে যে সুপারিশ, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর ‘ক্যারিয়ার অ্যাডভাইস ডেস্ক’ স্থাপন করা প্রয়োজন।
এ ডেস্কের মাধ্যমে নারী শিক্ষার্থীরা কর্মসংস্থানের সুযোগ ও সম্ভাবনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে।