র্যাগিং এর নামে 'নির্যাতন', প্রতিবাদ করায় হুমকি
প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০১৬, ০২:১৯
দেশের অন্যতম নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং এর নামে নতুন শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে নির্যাতন এর অভিযোগ উঠেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ৪৫ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী জান্নাতুন নাঈম প্রীতি জাগরণীয়ার দপ্তরে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই অভিযোগের কথা জানান।
প্রীতি বলেন, "নির্যাতনটা এখানে একটি ট্রাডিশান। একটি ব্যাচ অন্য ব্যাচের ওপর করে থাকে। তাদের এই অন্যায় আবদার মেনে না নিলে সম্মিলিতভাবে টিজিং তথা উত্যক্ত হবার শিকার হতে হয়। শুধু আমিই না, আরও অনেকের সাথে এটা ঘটেছে এবং ঘটে চলেছে"।
প্রীতি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হলে নানাভাবে 'কতিপয় সিনিয়র শিক্ষার্থী' দ্বারা তিনি অপমানিত হয়েছেন। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে বিষন্নতা সহ নানা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন তিনি। তার হল সুপার দুজনেই এই মানসিক সমস্যার দরুন তার অজ্ঞান হওয়া সহ নানান অসুস্থতার সাক্ষী বলে জানান তিনি।
প্রীতি জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রীতিলতা হলের ডাইনিং রুমে হলের প্রভোস্ট সহ অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে নিয়ে এই ব্যাপারে একটি সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক শামীম রেজাও উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতেই প্রীতি তার মানসিক সঙ্কটের কথা তুলে ধরেন। এসময় হলের প্রভোস্ট এই র্যাগিং নামক নির্যাতনের সমালোচনা করে এই ব্যাপারে অভিযুক্ত পক্ষ ও প্রীতির মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে মীমাংসার চেষ্টা করেন।
প্রীতি জানান, রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত এই সভা শেষ করে ফেরার পর হলের ছাত্রলীগের সভাপতি স্বপ্না (৪০ তম ব্যাচ, ভূগোল বিভাগ) তিনতলায় গণরুমের পাশের কক্ষে তাকে ডেকে নিয়ে যান। সেসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন তার বান্ধবী এশা।
প্রীতি বলেন, "আমাকে তারা নানারকম ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন এবং র্যাগিংয়ের প্রতিবাদ করায় আমাকে নানাভাবে হুমকি দেন। এশা আমাকে বলেন, প্রতিবাদ করে কোনো লাভ হবেনা। উল্টো আমাকে হল ছেড়ে যেতে হবে। এমনকি আমার হলের সহপাঠীরাও আমাকে তাদের ভয়ে সাহায্য করবে না বলেও আমাকে শাসানো হয়। রাত দেড়টা পর্যন্ত আমাকে তাদের রুমে রেখে নানা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ভয়ভীতি দেখানো হয়। তাদের কথায় আমি নিরুপায় হয়ে বিষয়টি কয়েকজন সিনিয়রকে জানাই। তারা নৈতিক সমর্থন দিলেও আমাকে সাহায্য করতে অপারগ বলে জানান।"
এসকল অবস্থায় 'ভীতসন্ত্রস্ত' হয়ে ভোর ৫টার দিকে এক সিনিয়র আপুকে ফোন করে ঘটনার বিস্তারিত জানান প্রীতি। প্রীতি ধারণা করছেন এই সময়ের মধ্যে তার সহপাঠীদের সম্ভবতঃ ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয় যার ফলশ্রুতিতে বুধবার সকাল থেকেই রুমমেট সহ আশেপাশের সবাই তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেন। পরে সকাল ৯টা ৪৫ এর দিকে তিনি ক্লাসের জন্য হল থেকে বেরিয়ে ডিপার্টমেন্টে চলে যান। কিন্তু সেখান থেকে হলে ফেরার সময় তিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র এর কাছ থেকে জানতে পারেন যে আজো হলে সকল ব্যাচকে একসাথে সিটিং নামক সেই বিভীষিকাময় র্যাগিং করানো হবে। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে সেদিন আর হলে ফিরে না গিয়ে অন্য এক হলে পরিচিত একজনের সাথে রাতে থেকে যান তিনি।
প্রীতি বলেন, "এতোদিন বলতে গিয়েও বলিনি- আমার সঙ্গে অন্যায় ঘটছে, অবিচার ঘটছে। পাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নাম হয়! এর ফলাফলগুলি আমার মানসিক চিকিৎসক এবং পরিবারের মানুষেরা জানেন। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ছয়মাসের প্রতিবাদহীনতা শেষে মনে হয়েছে- আগামীতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার যেসব ছোটো ভাইবোন আসবে তাদেরও এটির শিকার হতে হবে, তখন সমস্ত দ্বিধা সংকোচ ঝেড়ে দাঁড়িয়েছি। কারণ আমি চাইনা আমার মতন একটি দিনও কারো মানসিক অশান্তিতে কাটুক। কারো একটি দিনও অহেতুক দুশ্চিন্তায়, ভয়ে কাটুক"।
প্রীতি আরো বলেন, "জীবনে কখনই অন্যায় মেনে নেইনি, ভবিষ্যতেও নেবো না। জীবনটা আমার কাছে দৌড় প্রতিযোগিতা নয়, আমার কাছে ভ্রমণ। অন্য কারোর জন্য আমার মূল্যবান ভ্রমণটি আমি নষ্ট করবো না"।