'আমরাও জলির মৃত্যুর দায় এড়াতে পারি না'
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২১:২৩
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহান জলির স্মরণে শোকসভা করেছেন তার সহকর্মী ও বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিভাগের ১২৩ নম্বর কক্ষে অন্ধকারের ভেতর যখন পর্দায় ভেসে উঠে জলির হাসিমাখা মুখের ছবি তখন পিনপতন নিঃস্তব্ধতা ভেঙে শোনা যায় কান্নার শব্দ। পেছনে বাজতে থাকে রবিঠাকুরের ‘তুমি রবে নীরবে...’ গানের সুর।
রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় আকতার জাহানের স্মরণে বিভাগের সামনে থেকে শোক র্যালি বের করা হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কালোব্যাজ ধারণ করে র্যালিতে অংশ নেন। ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে পুনরায় বিভাগের সামনে এসে র্যালি শেষ হয়। বেলা একটার দিকে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আকতার জাহানকে নিয়ে নির্মিত একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ সময় উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সবার চোখই ভিজে ওঠে। এসময় স্মৃতিচারণার পাশাপাশি প্রিয় শিক্ষকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি তোলেন শিক্ষার্থীরা।
প্রিয় সহকর্মীর অকাল প্রয়াণ নিয়ে বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক মশিহুর রহমান। বলেন, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি যখন দ্বিতীয় বর্ষে তখন জলি (আকতার জাহান) প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। রাজশাহীতে এসে সহকর্মী হওয়ার পর প্রতিদিন আমার খোঁজ নিতেন। সবার সঙ্গেই পেশার বাইরেও ব্যক্তি-সম্পর্ক রেখে গেছেন জলি"।
আরেক সহকর্মী সেলিম রেজা বলেন, "কী পরিস্থিতি তৈরি হলে একটা মানুষ আত্মহত্যা করতে পারে, তা আমাদের বিবেচনায় আনতে হবে। আমরাও জলির মৃত্যুর দায় এড়াতে পারি না"।
বিভাগের সভাপতি প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, "জলি আপার মৃত্যু আমাকে দুইভাবে বিধ্বস্ত করেছে, ব্যক্তি হিসেবে, সহকর্মী হিসেবে ও বিভাগের সভাপতি হিসেবে। দায়টা আমার একটু বেশি"।
মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাহবুবা কানিজ বলেন, "আকতার জাহান এত একাকী ছিলেন, এতটা সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন বুঝতে দেননি। এখন আমার মনে হয়, কেন আমি তাকে বুঝলাম না, আর একটু সময় দিলাম না। এই দায়টা আমি এড়াতে পারছি না"।
আকতার জাহানের এক সময়ের প্রতিবেশী ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি গোলাম সাব্বির সাত্তার এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে বলেন, "এখন আমাদের সবার দায়িত্ব সেই মামলার যথাযথ দেখভাল করা। যাতে প্রকৃত সত্য সবার সামনে উন্মোচিত হয়"।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ্ আজম বলেন, "আমরা কেন আকতার জাহানের অভিমান বুঝতে পারিনি, এটা আমাদের সামগ্রিক ব্যর্থতা। এ মৃত্যুতে যদি কোনো প্ররোচনাকারী থাকে, তার বিচার চাই। তিনি শুধু আকতার জাহানকে হত্যা করেনি, সবার স্বপ্নকে হত্যা করেছে"।
আকতার জাহানের ছোট ভাই কামরুল হাসান বলেন, "আমার বোন মারা গেছেন, তাকে আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তার মৃত্যুর কারণ, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সঠিক যে চিত্র; সেটা সবার সামনে আসবে, এটাই আমি আশা করছি"।
এছাড়াও সভায় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ফয়জার রহমান, শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম, জোবায়দা শিরিন, আতিকুর রহমান, হুসাইন মিঠু প্রমুখ বক্তব্য দেন।