ঢাবি’র আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে সেই হৃদয়
প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০১৮, ২১:৩৩
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের পছন্দের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেন সারাদেশে আলোচিত সেই হৃদয় সরকার।
২৮ নভেম্বর (বুধবার) এই বিভাগে ভর্তির বিষয় নির্ধারিত হওয়ার পর তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হতে পেরে আমি ভীষণ খুশি। কেননা এই বিভাগেই আমি পড়তে চেয়েছিলেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে দেশবাসীর কাছে দোয়াও চেয়েছেন এই শিক্ষার্থী।
উল্লেখ্য, 'সেরিব্রাল পালসি'তে আক্রান্ত ছেলে হৃদয় সরকারকে নিয়ে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন মা সীমা সরকার। প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্ম নিলেও হৃদয়ের চলার সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে যাচ্ছেন মা। ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর স্বপ্ন দেখা মা সীমা সরকার গত গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'খ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে হৃদয়কে কোলে করে নিয়ে আসেন কেন্দ্রে। মা-ছেলের যুদ্ধের সেই ছবি মুহুর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পরিচয় খুঁজতে গিয়ে জানা গেলো, নেত্রকোনার ছেলে হৃদয়কে এভাবেই কোলে করে নিয়ে স্কুল-কলেজের গন্ডি পার করিয়েছেন অদম্য এক মা।
ঢাবি ভর্তি পরীক্ষার 'খ' ইউনিটের রেজাল্ট দিলে দেখা যায়, বাংলা অংশে ৯ দশমিক ৩০, ইংরেজি অংশে ১৪ দশমিক ৪০ ও সাধারণ জ্ঞান অংশে ২৭ দশমিক ৯০ নম্বরসহ মোট ১২০ দশমিক ৯৬ নম্বর পেয়ে ৩ হাজার ৭৪০তম হন হৃদয় সরকার। প্রতিবন্ধী কোটায় ভর্তির আবেদন করেছিলেন হৃদয়। কিন্তু ভর্তি হতে গিয়ে আবারও বিপত্তিতে পড়েন হৃদয়ের পরিবার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিতে প্রতিবন্ধী কোটায় শুধু দৃষ্টি, শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী-এই তিন ধরণের প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা থাকায় ডাক পড়েনি হৃদয়ের। ভেঙে পড়েন মা-ছেলে। আবারও আলোচনায় আসে হৃদয়ের বিষয়টি। প্রতিবন্ধী হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি পেলেও ঢাবিতে ডাক পড়ছে না তার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবারও এ নিয়ে শুরু হয় আলোচন। অবশেষে মিটিং ডেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী কোটার বিধিমালায় সংস্কার আনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ তৈরি হয় হৃদয় সরকারের।
এদিকে, ছেলে আর মায়ের এমন অদম্য গাঁথা যখন সবার মুখে মুখে তখন বিশ্বের ১০০ অনুপ্রেরণাদায়ী মায়ের তালিকায় আসন করে নেন হৃদয়ের মা সীমা সরকার। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি-এর করা এ তালিকায় সীমা সরকার রয়েছেন ৮১তম স্থানে।
ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে সীমা সরকার বলেন, প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, তারপর পছন্দের বিষয়ে সুযোগ পাওয়ায় আজ আমার এতদিনের সব কষ্ট দূর হয়ে গেল।