ঢাবির ভিসি প্যানেল স্থগিত
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০১৭, ১৭:৪১
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য নিয়োগে তিন সদস্যের ভিসি প্যানেলের কার্যক্রম স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে ভিসি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান ভিসি তার দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়া আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এ সংক্রান্ত জারি করা রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ ৩ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) এ আদেশ দেন।
আদেশে আপিল বিভাগ বলেছেন, রিট আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য তাঁর দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
আদালত বলেছেন, কোনো ধরণের মুলতবি ছাড়াই হাইকোর্টে রিট আবেদনের ওপর শুনানি করতে হবে। রিটের বিবাদীপক্ষ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) এক সপ্তাহের মধ্যে রুলের বিষয়ে হলফনামা আকারে বক্তব্য দেব। আর তিন দিনের মধ্যে রিট আবেদনকারী পক্ষ জবাব দেব।
আদালতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আবদুল মতিন খসরু। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্বাচনে তিন সদস্যের প্যানেল মনোনীত করতে গত ২৯ জুলাই সিনেটের বিশেষ সভা ডাকা হয়। ওই বিশেষ সভার জন্য গত ১৬ জুলাই সিনেট সদস্যদের চিঠি পাঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার।
সিনেটের বিশেষ সভার নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন শিক্ষকসহ ১৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট রিট আবেদন করেন। রিটের ওপর গত ২৪ জুলাই শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ নোটিশের কার্যকারিতা স্থগিত করেন।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করেন। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ জুলাই চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। একই সঙ্গে আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন।
উপাচার্য নির্বাচনে তিন সদস্যের প্যানেল মনোনীত করতে গত ২৯ জুলাই সিনেটের বিশেষ সভা যথারীতি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় তিনজনের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা হয়। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এই প্যানেলে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দীন ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আবদুল আজিজ রয়েছেন। তাদের মধ্যে আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের তৃতীয় মেয়াদে উপাচার্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট পূর্ণাঙ্গ না করে অর্ধেকের কম সদস্য নিয়ে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করায় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধিদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলেই রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধিসহ অন্যান্য শ্রেণির প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারত। কিন্তু প্রশাসন সেই পথে না গিয়ে অনেকটা একতরফাভাবে তিনজনের প্যানেল নির্বাচন করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সিনেটের মোট সদস্য ১০৫ জন। কিন্তু কয়েকটি শ্রেণির নির্বাচন না হওয়ায় বর্তমান সিনেটে ৫০টি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট ২৫ জন, ৫ জন গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধি, ৫ জন অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজের অধ্যক্ষদের প্রতিনিধি, একাডেমিক পরিষদের মনোনীত ১০ জন ও ৫ জন ছাত্র প্রতিনিধির পদ শূন্য।
এর বাইরে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দলের দুজন শিক্ষক প্রতিনিধি সিনেটের বিশেষ অধিবেশন বর্জন করেন। অনুপস্থিত ছিলেন আরও ৬ জন। বাকি ৪৭ জন সদস্যের উপস্থিতিতে তিনজনের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা হয়।