সুরের মূর্ছনায় দর্শকদের বিমোহিত করলেন পূরবী ও অমিতাভ
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০১৭, ০১:৪৩
লোক ও গণসঙ্গীতের সুরমূর্ছনায় দর্শক-শ্রোতাদের বিমোহিত করলেন দুই ভারতীয় শিল্পী পূরবী মুখোপাধ্যায় ও অমিতাভ মুখোপাধ্যায়।
৩০ মার্চ সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এই দুই গুণী শিল্পীর যুগল সঙ্গীত সন্ধ্যা।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত “অষ্টম সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা-২০১৭”এর তৃতীয় ও শেষ দিনে এ আয়োজন করা হয়। সঙ্গীত সন্ধ্যার শুরুতে দুই শিল্পীকে উদীচী’র পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানান উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ড. সফিউদ্দিন আহমদ। উত্তরীয় পরিয়ে দেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি শিবাণী ভট্টাচার্য্য ও সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম। ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের দুই সহ-সভাপতি বদিউর রহমান ও কাজী মোহাম্মদ শীশ। আর উদীচী’র পক্ষ থেকে কয়েকটি প্রকাশনা তুলে দেন দুই সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের দুই সহ-সভাপতি হাবিবুল আলম ও প্রবীর সরদার। এরপর দুই গুণী শিল্পীর সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি বেলায়েত হোসেন। অন্যদিকে, উদীচী’র সভাপতি ড. সফিউদ্দিন আহমদ-এর হাতে হেমাঙ্গ বিশ্বাস-এর উপর রচনা এবং নিজের গাওয়া গানের কয়েকটি সিডি তুলে দেন শিল্পী পূরবী মুখোপাধ্যায়। সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী পর্ব শেষে শুরু হয় পূরবী মুখোপাধ্যায় ও অমিতাভ মুখোপাধ্যায়-এর যুগল পরিবেশনা। তাঁরা একে একে পরিবেশন করেন লোক, গণসঙ্গীত, রবীন্দ্র, নজরুল, রজনীকান্ত সেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এবং অতুল প্রসাদের গানের বৈচিত্র্যপূর্ণ সুরের বেশ কয়েকটি গান। গানের পাশাপাশি কথা ও আলোচনায় উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করেন দুই শিল্পী। পরিবেশন করেন হেমাঙ্গ বিশ্বাস-এর গান। এই দুই শিল্পীই প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক এবং ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ-আইপিটিএ’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সুনীল মুখোপাধ্যায়-এর সন্তান।
এর আগে, গত ২৮ মার্চ মঙ্গলবার বিকাল পাঁচটায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে তিন দিনব্যাপী এ উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট লোক ও গণসঙ্গীত শিল্পী এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম কণ্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায়। উদ্বোধনী পর্বে প্রকাশ করা হয় উদীচী’র প্রতিষ্ঠাতা সত্যেন সেন রচিত গণসঙ্গীতের অ্যালবাম।
সত্যেন সেন রচিত ১১টি গণসঙ্গীত স্থান পেয়েছে এ অ্যালবামে। এছাড়াও, সন্ধ্যায় ছিল দেশের খ্যাতনামা গণসঙ্গীত দল ও একক শিল্পীদের পরিবেশনা। আর, উৎসবের দ্বিতীয় দিন গত ২৯ মার্চ বিকালে উৎসবের দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানমালা শুরু হয় ‘সুর-অসুরের দ্বন্দ্ব ও গণসঙ্গীত’ শিরোনামে গণসঙ্গীত বিষয়ক প্রবন্ধের উপর আলোচনা ও সেমিনার দিয়ে। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক, লেখক দীপঙ্কর গৌতম।
উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ড. সফিউদ্দিন আহমদ-এর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য অধ্যাপক মতলুব আলী, সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম, প্রবীর সরদার, উদীচী’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম সিদ্দিক রানা, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সম্পাদকম-লী সদস্য প্রদীপ ঘোষ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সায়েম রানা।
সেমিনার শেষে জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্যায়ে বিজয়ীদের হাতে সনদপত্র ও স্মারক তুলে দেয়া হয়। পরে, মঞ্চে পরিবেশনা নিয়ে আসে আদিবাসী যুবকদের গানের দল ‘মাদল’ এবং দেশবরেণ্য গানের দল ‘জলের গান’।
দেশের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে গণসঙ্গীতকে ছড়িয়ে দেওয়া, গণসঙ্গীতের প্রচার ও প্রসার এবং গণসঙ্গীতকে সঙ্গীতের একটি স্বতন্ত্র ধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উদীচী’র প্রতিষ্ঠাতা সত্যেন সেনের জন্মদিবস উপলক্ষে প্রতিবছর এই উৎসব আয়োজন করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এবার অষ্টমবারের মতো আয়োজিত হচ্ছে এ উৎসব ও প্রতিযোগিতা। এবারের উৎসবের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে “আমার লড়াই, আমার গান, উঠবে জেগে সর্বপ্রাণ”।