শিল্পকলায় উদীচী’র যুগল অনুনাটক “দাফন” ও “হত্যার শিল্পকলা”
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০১৬, ১৩:৫৫
আগামি ১৪ আগস্ট রবিবার বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় নাটক বিভাগ পরিবেশন করতে যাচ্ছে যুগল অনুনাটক “দাফন” ও “হত্যার শিল্পকলা”। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে ১৪ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হবে নাটক দু’টির প্রদর্শনী।
১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মের অপব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লেটার বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে উদীচী। একইসাথে একটি অসাম্প্রদায়িক, মৌলবাদমুক্ত এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাংলাদেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করেছেন উদীচী’র শিল্পী-কর্মীরা। এরই ধারাবাহিকতায় উদীচী কেন্দ্রীয় নাটক বিভাগ মঞ্চে আনতে যাচ্ছে যুগল অনুনাটক “দাফন” ও “হত্যার শিল্পকলা”। এ দু’টি অনুনাটকের মাধ্যমে মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও দৃপ্ত কণ্ঠে প্রতিরোধের আহবান জানাচ্ছে উদীচী।
উদীচী কেন্দ্রীয় নাটক বিভাগের অনুনাটক “হত্যার শিল্পকলা” মূলত তৈরি হয়েছে বর্তমান সময়ে ধর্মের নামে যেভাবে একদল সন্ত্রাসী একের পর এক নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে সেই প্রেক্ষাপটকে ঘিরে। এইসব নরপশুর হিংস্র থাবার হাত থেকে রেহাই পায়নি কোমলমতি শিশু থেকে শুরু করে অশীতিপর বৃদ্ধ পর্যন্ত কেউই। তাদের হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে দেশি-বিদেশি নাগরিক, শিক্ষক-ছাত্র-ব্লগার-মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত, বৌদ্ধ ভিক্ষু, পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী, মুদি দোকানদার থেকে শুরু করে সমাজের প্রায় সব বয়সের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। তাদের করাল থাবা ধীরে ধীরে পুরো বাংলাদেশকে গ্রাস করে নেয়ার আস্ফালন দেখাচ্ছে। তারা যে রাজনৈতিক বা মতাদর্শ বিশ্বাস করে তার সাথেই যেন জুড়ে দেয়া আছে হত্যার নীলনক্সা। এসব দিকভ্রান্ত মানুষ অন্ধ বিশ্বাসে নিজেই একের পর এক রচনা করতে থাকে হত্যার চিত্রনাট্য। ধর্ম কিংবা বিপ্লবের নামে এসব মানবঘাতী কর্মকাণ্ড বন্ধ করে মানুষকে ভালোবাসায় বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে নেয়ার আহবান জানানো হয়েছে এই নাটকে। মলয় ভৌমিক রচিত নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন আসলাম অরণ্য।
দ্বিতীয় অনুনাটক “দাফন”-এর গল্প আবর্তিত হয়েছে খরায় পোড়া শস্যভূমির এক নিভৃত ক্লান্ত গ্রামে অনাকাঙ্খিত একটি মেয়ের লাশের সংবাদের মাধ্যমে একদল মানুষের ঠুনকো অনুভূতিতে ব্যাকুলতা তৈরি করাকে ঘিরে। মেয়েটির অস্বাভাবিক মৃত্যুকে গ্রামের অতি স্বাভাবিক এবং দোজখ গমণে শংকিত মানুষের কাছে কৌশলে কিংবা ক্ষমতার আচ্ছাদনে তুলে দেয়া হয় পাপপূণ্য পরিমাপক যন্ত্রে। যার ফলে, বাবা, স্নেহময়ী মা, প্রতিবেশীসহ যাদের নিবিড় মায়ার ঘেরাটোপে মেয়েটি কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা ফেলেছিল, তাদের উপস্থিতিতে মুহূর্তেই সে তার পরিচয় হারিয়ে ফেলতে থাকে। এক পর্যায়ে হারিয়ে ফেলে শেষকৃত্য পাওয়ার সম্ভাবনাটুকুও। আর, তাই মেয়ের জানাজায় কিছু মানুষকে শরীক করতে চাওয়ার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে বৃদ্ধ বাবার করুণ আর্তনাদও বৃথা যায়। নাটকটি রচনা করেছেন হরিপদ দত্ত এবং এর নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন আইনুল ইসলাম অপু।