একটি ব্যাংক চেকের গল্প
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০১৯, ১৬:২০
মা বললো, তাড়াতাড়ি আসিস
বাবা বললো, ওই যে দেখতে পাচ্ছি বড়রাস্তা, দেখে পার হবি।
জেব্রাক্রসিংয়ের নিমীলিত চোখের দিকে তাকিয়ে আবরার ভাবলো, আজ ক্যাম্পাসে যদি সে আসে, পাশে বসে, যদি হেঁটে যায়, আর বন্ধুদের আড্ডায়, ক্লাস লেকচারে আরেকটি নতুন দিনের সাথে যদি আমি মিশে যেতে যেতে....
এটুকু ভাবার পরই পথে নেমে এসে যখন সে পা বাড়ালো ক্রসিংয়ে, তখনই 'সুপ্রভাত' বলে চেঁচিয়ে উঠলো কেউ! বড় রাস্তার ওপারে আব্বা তখনও
তাকিয়ে আছেন অর্থহীন, অসাড়!
আবরারের রক্ত মুছে ধুয়ে তকতকে করে রেখে গেল সিটি কর্পোরেশন। তাদের বাপ এলেন ব্যান্ড বাজিয়ে, এক ফুঁয়ে জমিয়ে ফেললেন পার্টি আর একটি উড়ন্ত রাস্তা পায়ুপথ থেকে বেরিয়ে এলো জাদুবলে।
এরপর ডাক পড়লো সেই লোকটির যিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন ওপারে, ছেলে পার হচ্ছিল বলে তাকিয়ে ছিলেন সামনে, তাকিয়ে আছেন এখনো, এদিকে
ছেলের মগজ বেরিয়ে যাওয়া লাশ নিয়ে চলে গেছে কারা যেন দাবি আদায়ে
মা কাউকে মানা করেননি আর। বসে আছেন এই দুপুরে, চোখ দিয়ে
ধুলো উড়ছে, আগুনের মত এই দিনে মা বসে আছেন একা, তার শুকনো স্তনে জমে আছে স্মৃতি, তার নিম্নাঙ্গে, জরায়ুর ভেতরে জমে আছে অন্ধকার
এইসব নিয়ে তিনি জড়োসড়ো, বসে আছেন, একাই।
ছেলেটির বন্ধুরা ফিরে এসেছে রাজপথে। ওরা খুব রেগে গেছে, অথচ
ওরা জানে রাত হলেই ফিরে যেতে হবে, এখন আর ঘর ছেড়ে বেরুচ্ছে না কেউ,
রাজাধিরাজ পৌঁছে গেছেন বসুন্ধরার বাড়িতে, তার হাতে দশ লক্ষ টাকার
তরতাজা চেক।
আবরার যখন বেরিয়ে যাচ্ছিলো, মা বলেছিলেন- তাড়াতাড়ি ফিরিস
আবরার যখন রাস্তা পেরুচ্ছিলো, বাবা বলেছিলেন, আস্তে যাস
আর আবরার ভাবছিল, কয়েকটা বছর পরেই আমি, যাকে বলে মানুষ হয়ে উঠবো, ঠিক যেমন মা চান আর বাবা বলেন!
এরপর তারা দেখলো, এমনকি আবরারও, সে একটি আস্ত চেক হয়ে বেরিয়ে এসেছে জেব্রাক্রসিং ফুঁড়ে- চকচকে আর জমকালো, ধারালো সেই চেক!
আপনাদের মধ্যে যারা এখনো সেরকম কোন চেক হয়ে ওঠেননি, তারা একদিন তা হয়ে উঠবেন, এই শুভকামনা রইলো।