এসো পা বাড়াই (৩৬ তম পর্ব)
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০১৮, ১৪:১০
"মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাথে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত, কিন্তু কেন? ফেসবুক এর চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ (Sheryl Sandberg) এর বই 'Lean In'- এ তিনি দেখিয়েছেন এ সমস্যার মূলে কি, কিভাবে নারীরা নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে, তার পূর্ণ ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারে। তার নিজের জীবন এবং পাশ্চাত্যের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও সারা পৃথিবীর নানা পরিসংখ্যান আর গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে তিনি এই বইকে সমৃদ্ধ করেছেন সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমার আন্তরিক ইচ্ছা বাংলাদেশের মানুষও এই বই পড়ে উপকৃত হোক। সেই ইচ্ছা থেকেই অনুবাদের এই প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যেই ২০টিরও অধিক ভাষায় এই বইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ের নামে একটি আন্তর্জাতিক চক্রও গড়ে উঠেছে (http://leanin.org/) যেখানে সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ চাইলে যুক্ত হতে পারে। মূল বইয়ে রেফারেন্স গুলোর বিস্তারিত দেয়া আছে।"
LEAN IN এসো পা বাড়াই
WOMEN, WORK AND THE WILL TO LEAD নারী, কাজ এবং নেতৃত্বের ইচ্ছা
WRITER: SHERYL SANDBERG অনুবাদ: আফরিন জাহান হাসি
যতদিন না আমরা সে অবস্থানে পৌছাতে পারি, আমার ভয় সফল হওয়ার জন্য, পছন্দনীয় হতে নারীরা তাদের আত্মত্যাগ করেই চলবে। যখন আমি প্রথম ফেসবুকে যোগ দেই, একটা লোকাল ব্লগ আমার সর্বনাশ করতে নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছিল, বেশ কিছু গুরুতর ছবি প্রকাশ করে। তাদের ব্লগে আমার ছবি প্রকাশ করেছিল তারা আমার হাতে একটি বন্দুক ধরিয়ে দিয়ে। আমার মুখের উপর বড় বড় লাল অক্ষরে লিখে দিয়েছিল, “মিথ্যাবাদী”। বেনামী উত্স আখ্যা দিয়েছিল, “দ্বিমুখী” (two-faced) এবং “ফেসবুককে চিরদিনের জন্য ধ্বংস করে দিতে যাচ্ছি” (about to ruin facebook forever)। আমি কেঁদেছিলাম। কিছুদিন ঘুম হারিয়েছিলাম। আমি ভয় পেয়েছিলাম যে আমার পেশাগত অবস্থান শেষ হয়ে যাচ্ছে। তখন আমি নিজেকে বলেছিলাম, এটা কোন ব্যাপার না। তারপর অন্য সবাই আমাকে বলেছিল, এটা কোন ব্যাপার না - যা আমাকে শুধু মনে করিয়ে দিয়েছিল যে তারাও সবাই এই ভয়াবহ মন্তব্যগুলো পড়েছে। আমি সমুচিত জবাব দেয়ার নানা ধরণের কল্পনা করতে থাকলাম, কিন্তু অবশেষে আমার সেরা প্রতিক্রিয়া ছিল, সেই আক্রমণকে উপেক্ষা করা আর আমার কাজ করে যাওয়া।
দ্যা হাফিংটন পোস্ট (the Huffington post) এর প্রতিষ্ঠাতা আরিয়ানা হাফিংটন (Arianna Huffington) বিশ্বাস করেন যে, সমালোচনা প্রতিরোধ করতে শেখা নারীদের জন্য একটি অপরিহার্যতা। আরিয়ানা তার কর্মজীবনের শুরুতেই বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার মনের কথা বলা মানে তিনি অনিবার্যভাবেই কারো বিরক্তির কারণ হবেন। তিনি এটাকে বাস্তবসম্মত বলে মনে করেন না, এমনকি কাঙ্ক্ষিতও না যে নারীদেরকে বলা- যখন আমরা আক্রান্ত হই তখন তা গুরুত্ব দিও না। তার পরামর্শ হচ্ছে, নিজেদেরকে আবেগপূর্ণভাবে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে দিতে হবে এবং সমালোচনা থেকে মনে যা আসে রাগ বা বিষন্নতা তা অনুভব করতে দিতে হবে। এবং তারপর আমাদের দ্রুত এগিয়ে যেতে হবে। তিনি শিশুদেরকে তার অনুকরণীয় চরিত্র হিসেবে নির্দেশ করেছেন। একটি শিশু যে এখনই কাঁদছে, পর মুহূর্তেই কান্না ভুলে খেলতে চলে যাচ্ছে। আমার নিজের জন্য, এটা ভালো পরামর্শ। মনে হয়, আমি যদি যথেষ্ট বলিষ্ঠ হতে পারতাম অন্যরা কি বলে তা উপেক্ষা করতে! কিন্তু অভিজ্ঞতা বলে প্রায়ই আমি তা পারি না। নিজেকে বিপর্যস্ত হতে দেয়া, আসলেই বিপর্যস্ত হওয়া এবং তারপর এগিয়ে যাওয়া - এরকম কিছু আমি করতে পারি।
একে অপরের উপর নির্ভর করাও সাহায্য করে। আমরা এই জ্ঞান দিয়েও নিজেদের সান্ত্বনা দিতে পারি যে এই আক্রমণগুলো ব্যক্তিগত নয়। আমরা কৌতুক করতে পারি, যেমন মার্লো থমাস (Marlo Thomas) করেছিলেন যে, “একজন পুরুষকে নির্মম বলতে হলে তাকে জো ম্যাকার্থি (Joe McCarthy) হতে হবে। একজন নারীর ক্ষেত্রে যা করা দরকার তা হলো নিজেকে ধরে রাখা।” আসল পরিবর্তন আসবে তখন, যখন ক্ষমতাধর নারীর সংখ্যা, ব্যতিক্রম হিসেবে কমে আসবে। উচ্চপর্যায়ে থাকা নারীদের অপছন্দ করা খুব সহজ কারণ তাদের সংখ্যা খুবই অল্প। শীর্ষ কাজগুলোর শতকরা ৫০ ভাগ যদি নারীদের অধিকারে আসে, তাহলে এত বেশি সংখ্যক মানুষকে অপছন্দ করা সম্ভব হবে না।
(চলবে...)