অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে একাত্তরের জননী রমা চৌধুরী
প্রকাশ : ১২ জুন ২০১৭, ১৭:৪৯
একাত্তরের বীরাঙ্গনা, অসীম সাহসী নারী ‘একাত্তরের জননী’ হিসেবে সমধিক পরিচিত বিশিষ্ট লেখিকা রমা চৌধুরী গুরুতর অসুস্থ হয়ে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গত ১০ জুন (শনিবার) সন্ধ্যার পর হঠাৎ করে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নগরীর ও আর নিজাম রোডের মেডিকেল সেন্টার নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় তার বুকে ও পেটে ব্যথা হচ্ছিল বলে জানা গেছে।
তার প্রায় সর্বক্ষণের সঙ্গী ও তার বইয়ের প্রকাশক আলাউদ্দিন খোকন চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, ১১ জুন রবিবার (সন্ধ্যায়) তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এর আগে তার প্রস্রাব পায়খানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, এবং বমিও হচ্ছিল। তবে কৃত্রিমভাবে তা করানোর পর রবিবার থেকে তিনি কিছুটা সুস্থ বলে জানিয়েছেন খোকন। তিনি মুখে কিছু খেতে পারছেন না। তাকে স্যালাইন দেয়া হয়েছে। তবে বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
হাসপাতালে এই সাহসী নারীর দেখাশোনা করছেন তার সেজো ছেলে জহর লাল চক্রবর্তী, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী আবদুল মোতালেব ও আলাউদ্দিন খোকন। তারা এ অসীম সাহসী-প্রতিবাদী নারী রমা চৌধুরীর আশু রোগমুক্তির জন্য তার শুভানুধ্যায়ীদের শুভ কামনা প্রার্থনা করেছেন।
প্রসঙ্গত ১৯৪১ সালের ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহনকারী রমা চৌধুরী ১৯৬১ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে কক্সবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব নিয়ে যোগ দেন। তখন তার বয়স মাত্র ২০ বছর। ১৯৭১ সালেও তিনি বোয়ালখালীতে একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। ৭৬ বছর বয়সী রমা চৌধুরী একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নির্যাতিতই শুধু হননি; সে সময় হারিয়েছেন তার দুই শিশু পুত্রকে। ফটিকছড়িতে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্বে ছিলেন ১৯৭৮ সালের ২৯ মার্চ পর্যন্ত। সেখানে নানা ধরনের চক্রান্তে পড়ে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর আর চাকরি করেননি কোথাও। লেখালেখি করেই এতটা বছর পার করছেন। এরপর ১৯৯৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছোট ছেলের মৃত্যু হয় এক সড়ক দুর্ঘটনায়।
পুত্রদের মৃত্যুর পর তিনি তাদেরকে হিন্দু ধর্মমতে দাহ না করে মাটিতেই সমাহিত করেছিলেন এবং তারপর থেকে পায়ে আর জুতা পরেননি দুঃখিনী এই মা। যে মাটির নিচে তার ছেলেরা ঘুমিয়ে আছে সেই মাটিতে তিনি জুতা পায়ে হাঁটতে পারেন না এমনটাই বলেন রমা চৌধুরী। খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে বই বিক্রি করেই চলেছেন তিনি এতদিন। অবিরামভাবে লিখে চলেছেন বিভিন্ন পত্রিকাতে। এরই মধ্যে রমা চৌধুরীর ১৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ‘একাত্তরের জননী’ বইটির প্রথম খণ্ড ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। এটি মূলত তাঁর আত্মজৈবনিক গ্রন্থ। কারো কাছ থেকে তিনি কোন আর্থিক বা বৈষয়িক সাহায্য নেননি এখন পর্যন্ত। শুধুমাত্র তার কাছ থেকে বই কিনলেই টাকা নিয়েছেন, এ ছাড়া নয়।
গত প্রায় ৪ বছর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে রমা চৌধুরীর ব্যাপারে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ২৭ জুলাই গণভবনে তার সাথে দেখা করার জন্য অনুরোধ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন রমা চৌধুরী, তবে কোনো ধরনের সাহায্য নেবেন না এ শর্তে। এ সময় রমা চৌধুরীর মুখে তার সব হারানোর কথা শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী।