তৃণমূলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পৌঁছে দিবে শ্রাবণের বইগাড়ি
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ২৩:৪২
‘ইতিহাস ধরবো তুলে বই যাবে তৃণমূলে’ -এই স্লোগানকে ধারণ করে শুরু হতে যাচ্ছে শ্রাবণ প্রকাশনী আয়োজিত মুক্তিযুদ্ধের ভ্রাম্যমাণ বইমেলা। আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা পাঁচ সহস্রাধিক বই নিয়ে এই গাড়ি ছুটে বেড়াবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আনাচে-কানাচে।
৮ ডিসেম্বর (শনিবার) বিকেল ৩টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে চার মাসব্যাপী এই ভ্রাম্যমাণ বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়। মাহিরা বিনতে এর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী মিতা হক পরিচালিত 'সুরতীর্থ'-এর শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে শিল্পীদের সাথে সমবেত জাতীয় সঙ্গীতে কন্ঠ মেলান উপস্থিত সকলে। অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন নায়লা তারান্নুম চৌধুরী, নাজমুল আহসান ও কাজী বুশরা আহমেদ তিথি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্রের অন্যতম সম্পাদক ও গবেষক আফসান চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সকল সংকলন এখনো শহরকেন্দ্রিক। কিন্তু একাত্তর হচ্ছে গ্রামের একাত্তর। অথচ স্বাধীনতা অর্জনে গ্রামের মানুষের ত্যাগ সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি। শ্রাবণ প্রকাশনীর এই উদ্যোগ আমাদের সেই ঘাটতিকে পূরণ করবে এটাই প্রত্যাশা।
সমকালের উপসম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, শ্রাবণ প্রকাশনীর এই অসাধারণ উদ্যোগের সাথে আমরা আছি। আমরা মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রাজধানী থেকে বিভিন্ন জেলা শহরে, জেলা শহর থেকে গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য এই ভ্রাম্যমাণ বইমেলার উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়।
প্রকাশনা সংস্থা ইউপিএল এর পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের প্রকাশনা সংস্থা ইউপিএল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। তাই শ্রাবণ প্রকাশনী যখন এ ধরণের একটি উদ্যোগে আমাদের সাথে থাকতে বলেছে, তখন আমরা সানন্দে রাজি হয়েছি। এই উদ্যোগের সার্বিক সফলতা কামনা করি।
নিউ এজ এর সম্পাদক নুরুল কবির বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মতো এতো রক্তক্ষয় পৃথিবীর খুব কম জাতিই দিয়েছে। তাই এই মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস গ্রামগঞ্জে পৌঁছে দেয়া সচেতন মানুষ হিসেবে আমাদের কর্তব্য। শ্রাবণ প্রকাশনীকে ধন্যবাদ এমন উদ্যোগের জন্য।
শহীদ আলতাফ মাহমুদ কন্যা শাওন মাহমুদ বলেন, শ্রাবণ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রবীন আহসান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন আমরা তার সাথে আছি। আমি মনে করি এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমার পিতা আলতাফ মাহমুদ এর মতো দেশের আরো অসংখ্য জানা অজানা মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের গল্প দেশের সর্বত্র পৌঁছে যাবে। একজন শহীদ কন্যা হিসেবে এই উদ্যোগের সাথে জড়িত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
এরপর ভ্রাম্যমাণ বইমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম।
বইমেলার উদ্বোধন ঘোষণা করে তিনি বলেন, বাঙালির জীবনে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অর্জন মুক্তিযুদ্ধ। তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে হলে বই পড়তে হবে। অন্যকে পড়তেও উৎসাহিত করতে হবে।
এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে শ্রাবণ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রবীন আহসান জানান, রাজধানী বাইরে আমরা এর আগেও ছোট পরিসরে বই নিয়ে গিয়েছি। জেলা শহরগুলোতে অনেক পাঠক থাকলেও আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা ভালো বইগুলো তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছায় না। সবার হাতে বইগুলো পৌঁছে দিতেই আমাদের এই উদ্যোগ।
ভ্রাম্যমাণ বইমেলার মিডিয়া পার্টনার হিসেবে যুক্ত হয়েছে একাত্তর টেলিভিশন, সমকাল, নিউ এজ, চ্যানেল আই অনলাইন ও নারীবিষয়ক নিউজ পোর্টাল জাগরণীয়া। সহযোগিতা করছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।