মেরিলিন মনরো: চিরসবুজ এক বিউটি আইকন

প্রকাশ : ০১ জুন ২০১৮, ২০:৪৪

সৌন্দর্য আর যৌন আবেদনের এক মূর্ত প্রতীক ছিলেন ক্ষণজন্মা অভিনেত্রী মেরিলিন মনরো। হলিউডের বিউটি কুইন হিসেবে পরিচিত মেরিলিন ছিলেন একেধারে অভিনেত্রী, গায়িকা এবং মডেল। ৫০ এর দশকের সেক্স সিম্বল এই নায়িকা এখনও যৌন আবেদনময়ীদের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছেন এবং  আজও পৃথিবীর অসংখ্য সিনেমাপ্রেমী মানুষের কাছে তিনি আকাঙ্খিত এবং স্মরণীয়।

জন্ম ও প্রথম জীবন
সারা বিশ্ব যার সৌন্দর্যে তোলপাড়, সেই মেরিলিন মনরোর প্রথম জীবন ছিল নানা দুঃখে কষ্টে পরিপূর্ণ। ১ জুন ১৯২৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলসে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার মূল নাম ছিল নর্মা জেন মর্টেনসন। তার মায়ের নাম গ্লাডিস পার্ল বেকার। তিনি ছিলেন গ্লাডিসের তৃতীয় সন্তান। এছাড়া মনরোর এক বোন ছিল। মনরোর বয়স যখন ১২ বছর, তিনি প্রথমবারের মত তার বোনের সাথে সাক্ষাত করেন। মনরোর পিতার সঠিক পরিচয় জানা যায়নি। তবে তিনি তার টাইটেল হিসেবে বেকার লিখতেন। মনরো জন্ম দিলেও তাকে বড় করার মত সামর্থ গ্লাডিসের ছিল না। তাই ছোটবেলায় এতিমখানা ও বিভিন্ন পালক পরিবারের মধ্যে থেকে মনরো বড় হন৷

নিজের ছোটবেলা সম্পর্কে এক সাক্ষাতকারে মনরো বলেছিলেন, আমার বয়স যখন পাঁচ বছর তখন থেকে আমার অভিনয় করতে ভালো লাগতো। আমার আশাপাশের পরিবেশ আমার ভালো লাগতো না। আমার মনে হতো সবকিছুই কেমন যেন অস্বচ্ছ। সেজন্য আমি মনে মনে স্টেজ বানাতাম এবং অভিনয় করতাম। আমার কাছে মনে হতো, সেখানে আমি আমার মত করে সীমানা নির্ধারণ করতে পারি। যখন আমি সত্যি জানলাম, অভিনয় বলে আসলেই কিছু আছে, তখন আমি অনেক খুশি হই। আমার মনে হয়, এটাই সেটা যা আমি হতে চাই। আমার অনেক পালক পরিবার আমাকে প্রায়ই সিনেমা হলে নিয়ে যেতেন। বড় পর্দার সামনে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি আমি বসে থাকতাম। আমার সত্যিই সেই পর্দাকে ভালো লাগতো।

১৯ জুন ১৯৪২, মাত্র ষোল বছর বয়সে মনরো প্রথমবারের মতো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন জিম ডগার্থির সঙ্গে। ২১ বছর বয়সী জিম মেরিলিনের প্রতিবেশীর পুত্র ছিলেন এবং এয়ার ক্রাফট প্লান্টে চাকুরী করতেন। মনরো সেসময় পড়াশুনা ছেড়ে দেন এবং পুরো মাত্রায় গৃহিণী হয়ে যান। সংসার জীবনে মনরো সুখি ছিলেন না। এ প্রসঙ্গে মনরো বলেন, আমাদের দুজনের কথা হতো না। আমি খুব অবসাদে ভুগতাম। জিমের সাথে কথা বলার মত কিছুই খুঁজে পেতাম না। 

কর্মজীবন
১৯৪৪ সালে চাকুরীর কারণে দুই বছরের জন্য জিম প্যাসিফিকে পাড়ি জমান। সেসময় মনরো তার পরিবারের কাছে চলে আসেন এবং একটি উড়োজাহাজ নির্মাণ কারখানায় চাকুরী করা শুরু করেন। সেখানে তার পরিচয় হয় আলোকিচিত্রী ডেভিড কনোভারের সাথে। ফ্যাক্টরীতে কর্মরত নারীদের একটি প্রতিযোগিতার জন্য তিনি প্রথম মনরোর একটি ছবি তোলেন। ১৯৪৫ সালে মনরো কারখানার চাকুরী ছেড়ে দিয়ে পুরোদমে আলোকচিত্রী কনোভার ও তার বন্ধুদের জন্য কাজ করতে থাকেন। একই বছর আগস্টে মনরো ব্লু বুক এজেন্সির সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। ছিপছিপে শরীর আর আভিজাত্যপূর্ণ চেহারার কারণে তিনি মিডিয়ায় বেশ নজর কাড়েন। মূলত তিনি ফ্যাশন ম্যাগাজিন, বিজ্ঞাপন ও ছেলেদের ফ্যাশন ম্যাগাজিনে কাজ করতেন। ১৯৪৬ সালের শুরু দিকে মাত্র কয়েক মাসের ব্যধধানে তিনি ৩৩ টি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে স্থান পান। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পাজিয়েন্ট, লাফ, ইউএস ক্যামেরা, পিক ইত্যাদি।

অভিনয় জীবন
১৯৪৬ সালটি মনরোর জীবনের সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট বলা যায়। এসময় তিনি তার চুলকে আকর্ষণীয় করতে কোঁকড়া চুলকে স্ট্রেইট করেন এবং স্বর্ণকেশী হন। মেরিলিন মনরো নাম নিয়ে চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হন। সিনেমায় ক্যারিয়ার শুরু করা জিম ভালো চোখে নেননি। সেকারণে তিনি জিম ডগার্থির কাছ থেকে বিচ্ছেদ নেন। যদি চলচ্চিত্রে নিজের একটি শক্ত অবস্থান করে নিতে তাকে আরও বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয়। ১৯৪৭ সালে ‘টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি ফক্স স্টুডিও’র সাথে চুক্তিবদ্ধ হন মনরো এবং দুটি ছবিতে তাকে প্রথমবারের মত দেখা যায়, যদিও তা খুবই অল্প সময়ের জন্য। এরপর চুক্তি নবায়ন করা হয়নি আর। পরবর্তীতে কলম্বিয়া পিকচারসের সাথে কাজ করেন। কিন্তু তারাও খুব বেশি আগ্রহ দেখায়নি।

১৯৫০ সালে ‘অল অ্যাবাউট ইভ’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ফক্স স্টুডিও থেকে পুনরায় ডাক পান। তারপরের গল্প এক উজ্জ্বল ইতিহাস। লক্ষ মানুষের স্বপ্নের নায়িকা হয়ে ওঠেন তিনি। ফক্স স্টুডিওর সাথে আরও সাত বছরের চুক্তিতে আবদ্ধ হন।

জন হাস্টন পরিচালিত ‘দ্য এসপল্ট জঙ্গল’ (১৯৫০) এ একটি ছবিতে ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয় করেন মনরো। ১৯৫৩ সালে তিনি ‘টেকনিকালার’, ‘ফিল্ম নয়ার’ ও ‘নায়াগ্রা’তে অভিনয় করেন। এসব ছবিতে মনরোকে মূলত এক যৌন আবেদনময়ী হিসেবে দেখানো হয়। তবে ‘নায়াগ্রা’তে অভিনয় করে মনরো ব্যাপক সাড়া ফেলেন। সারাহ চার্চওয়েল নামে এক বিশ্লেষক বলেন, ‘নায়াগ্রাতে’ মনরোর চরিত্রটি ছিল যৌনতায় পরিপূর্ণ। এই ছবিতে বেশির ভাগ দৃশ্যে মনরো পাতলা কাগজের শিট অথবা টাওয়েল পরিধেয় অবস্থায় যা তখনকার দর্শকদের মনে ব্যাপক আলোড়ন ফেলে। 

‘নায়াগ্রা’ মুক্তি পাওয়ার পর তখনকার নারী ক্লাবে ছবিটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে মনরোকে নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করা হয়। যদিও ছবিটি দর্শক জনপ্রিয়তা পায় এবং বক্স অফিসে ৬ মিলিয়ন আয় করে। এরই মধ্যে মনরো তার খোলামেলা পোশাক নিয়ে বেশ নিন্দিত হন। একই বছর ‘ফটোপ্লে অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানে তাকে সেরা নবাগত অভিনেত্রীর পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। যদিও এই অনুষ্ঠানে তার পোশাক নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল।

স্যাটায়ারধর্মী মিউজিক্যাল ছবি ‘জেন্টলম্যান প্রেফার ব্লন্ডস’ (১৯৫৩) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি প্রথমবারের মত সাড়া ফেলেন এবং সাফল্যের সিঁড়িতে পা রাখেন। এই ছবির মাধ্যমে তিনি প্রথমবারের মতো তার অভিনয় দ্বারা সব শ্রেণীর মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেন। বক্স অফিসে এই ছবির আয় ছিল ৫ দশমিক ৩ মিলিয়ন যা তার প্রোডাকশন খরচের দ্বিগুণ। প্রথমবার মনরোকে নিয়ে ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’ ইতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করে। ১৯৫৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মনরো প্রথমবারের মত টিভিতে অভিনয় করা শুরু করেন, ‘বেনি শো’ নামে ঐ টিভি সিরিজে তিনি একজন ফ্যান্টাসি নারীর চরিত্রে অভিনয় করেন।

একই বছর নভেম্বরে মুক্তি পায় মনরোর তৃতীয় ছবি ‘হাউ টু মেরি এ মিলনিয়ার’, যেখানে তিনি একজন মডেলের চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিতে তার চরিত্রটি ছিল কীভাবে মেয়েরা কৌশলে কোটিপতিদের বিয়ে করে। ছবিটি মনরোকে চূড়ান্ত সাফল্য এনে দেয়, বক্স অফিসে এই ছবির আয় ছিল ৮ মিলিয়ন ডলার! একই বছর ডিসেম্বরে ‘প্লেবয়’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে জায়গা করেন এই তারকা।

একই ধরণের চরিত্র আর কলিগদের চেয়ে কম সম্মানী পাওয়ায় তিনি ‘দ্য গার্ল ইন পিঙ্ক টাইটস’ ছবিতে অভিনয়ের অস্বীকৃতি জানান। এরপর ১৯৫৪ সালের ৪ জানুয়ারি তাকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে বের করে দেয়া হয়।

১৯৫৪ সালের ১৪ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মনরো। দীর্ঘকালের বন্ধু  ডি মিয়াগোকে সান ফ্রান্সিসকো-তে বিয়ে করেন তিনি। এসময় তিনি হানিমুন করার জন্য জাপান ভ্রমন করেন। পরে সেখান থেকে একা কোরিয়া যান এবং সেখানে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সেই বছর ফেব্রুয়ারিতে ‘ফটোপ্লে অ্যাওয়ার্ড’ তাকে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার প্রদান করে। তিনি মার্চে আবার চলচ্চিত্রে ফিরে আসেন এবং নতুন করে নিজেকে উপস্থাপন করেন।

১৯৫৪ সালে শুরু হয়  ‘দ্য সেভেন ইয়ার ইচ’ এই ছবির শ্যুটিং। এর জন্য ম্যানহাটনের একটি সাবওয়েতে অপেক্ষা করছিলেন মনরো। এসময় বাতাসে তার সেই বিখ্যাত সাদা স্কার্ট উড়ে যাওয়ার দৃশ্যটি রেকর্ড করা হয়। সেই দৃশ্য স্টেশনে অপেক্ষা করা প্রায় ২০০০ যাত্রী উপভোগ করেছিলেন। পরবর্তীতে এই দৃশ্যে কাজ করার কারণে মনরোকে বিয়ে করার মাত্র ৯ মাসের মধ্যে তাকে তালাক দেন তার স্বামী ডি মিয়াগো। ১৯৫৭ সালে মুক্তি পায় তার এই বিখ্যাত ছবি ‘দ্য সেভেন ইয়ার ইচ’৷

১৯৫৫ সালটি অভিনয় শেখায় ব্যয় করেন মনরো। তিনি ম্যানহাটনে চলে আসেন এবং ম্যাথ এক্টিং শেখায় মনোনিবেশ করেন। এসময় বেশ কয়েকটি কর্মশালায় যোগ দেন তিনি। ব্যক্তিজীবনে এসময় তিনি চিত্রনাট্যকার আর্থার মিলারের সাথে সম্পর্কে জড়ান। এসময় মিলারের বিরুদ্ধে কমুনিজম আন্দোলনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ফাইল ওপেন করে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। অনেকেই এসময় মনরোকে মিলানের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদের পরামর্শ দেন এবং তা না করলে তাকে হলিউডে কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে হুমকি দেন। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে মনরো মিলানের পাশে এসে দাঁড়ান। 

১৯৫৬ সালের মার্চ মাসে মনরো অনুষ্ঠানিভাবে নিজের নাম বদলিয়ে মেরিলিন মনরো করেন। সেই বছর ২৯ জুন তিনি আর্থার মিলানের সাথে তৃতীয়বারের মতো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। 

১৯৫৬ সালে তিনি ড্রামা সিনেমা ‘বাস স্টপ’ এ অভিনয় করেন। এই নাটকের মাধ্যমে তিনি তার গ্ল্যামার অবয়ব থেকে বেরিয়ে আসেন। এই ছবির পরিচালক নোলান যিনি মনরোর অভিনয় নিয়ে যথেষ্ট আতঙ্কিত ছিলেন তিনি তার মত বদলান। এসময় নোলান মনরোকে চার্লি চাপলিন’ এর সাথে তুলনা করেন যিনি একই সাথে কমেডি আর ট্র্যাজেডির সম্মিলন ঘটিয়েছেন। এই ছবিটি বক্স অফিসে প্রায় সাড়ে ৪ মিলিয়ন আয় করে।

একই বছর আগস্ট মাসে মনরোর প্রোডাকশন হাউস থেকে প্রথমবারের মত প্রযোজনা করা হয় ছবি-'দ্য প্রিন্স এন্ড দ্য শোগার্ল'। এ ছবিটি করার সময় মনরো অনেক বেশ ড্রাগ আসক্ত হয়ে পড়েন এবং শিডিউলে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়। আমেরিকায় ছবিটি নিয়ে মিশ্র মন্তব্য এলেও ইউরোপে ছবিটি বেশ প্রসার লাভ করে। এই চলচ্চিত্রের জন্য মনরো বাফটা অ্যাওয়ার্ডের মনোনয়ন পান। তাছাড়া ইতালি ও ফ্রান্সে দুইটি পুরস্কার লাভ করেন। 

এরপর বেশ কিছুদিন মনরো পারিবারিক জীবন অতিবাহিত করেন। জানা যায়, এসময় তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন কিন্তু গর্ভকালীন জটিলয়তায় তিনি আর সন্তান প্রসব করতে পারেননি।

১৯৫৯ সালে তিনি আবার চলচ্চিত্রে আসেন ‘সাম লাইক ইট হট’ ছবির মধ্য দিয়ে। স্যাটায়ার ধর্মী এ চলচ্চিত্রে মনরো একজন গায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি একজন ধনাঢ্য ব্যক্তিকে বিয়ে করতে চান। এই ছবিতে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য ‘গোল্ডেন গ্লোব’ পুরস্কারে ভূষিত হন।

১৯৬১ সালে মনরোর সর্বশেষ ছবি ‘দ্য মিসফিট’ মুক্তি পায়। এটি ছিল অ্যাডভেঞ্চার ও ড্রামা ভিত্তিক ছবি। ছবিটি বক্স অফিসে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি।

১৯৬২ সালে মনরোর অনিয়মতান্ত্রিক জীবনের কারণে তাকে ‘সামথিং গট টু গিভ’ থেকে বাদ দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, এসময় তিনি প্রায়ই শ্যুটিং এ দেরীতে আসতেন। বেশীরভাগ সময়ই যার কারণ ছিল অসুস্থতা। পরে অবশ্য তিনি ছবিটি করেন। 

১৯৬২ সালে একটি ক্যালেন্ডারে তার নগ্ন ছবি প্রকাশিত হয়৷ স্বাভাবিকভাবেই এটা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি কিছু পরিনি তা ঠিক নয়, তবে একটি রেডিও তো ধরেছিলাম আমি ৷ ১৯৬২ সালের মে মাসে তিনি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির জন্মদিনে আমন্ত্রিত হন এবং  সেখানে গান গেয়ে তার বিখ্যাত পারফরম্যান্সটি দেন যা আজও স্মরণীয়।

মৃত্যু
১৯৬২ সালের ৫ আগস্ট মাত্র ৩৬ বছর বয়সী মেরিলিন মনরোর মৃতদেহ লস অ্যাঞ্জেলসে তার নিজ ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়। অনেকেই মনে করেন, মেরিলিনকে হত্যা করা হয়েছে। যদিও তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে ড্রাগ ওভারডোজকে উল্লেখ করা হয়। মেরিলিন মনরোকে সমাধিস্থ করা হয় তার সেই ঐতিহাসিকটি পোশাকটি পরিয়ে, যা সামলাতে তিনি ম্যানহাটন স্টেশনে হিমশিম খেয়েছিলেন।

মেরিলিন মনরো অভিনীত চলচ্চিত্রের তালিকা
ডেঞ্জারাস ইয়ার্স (১৯৪৭)
স্কুডা হো! স্কুডা হে! (১৯৪৮)
লেডিস অব দ্য কোরাস (১৯৪৮)
লাভ হ্যাপি (১৯৪৯)
আ টিকেট টু টমাহক (১৯৫০)
দি আশফাল্ট জাঙ্গল (১৯৫০)
অল অ্যাবাউট ইভ (১৯৫০)
দ্য ফায়ারবল (১৯৫০)
রাইট ক্রস (১৯৫১)
হোম টাউন স্টোরি (১৯৫১)
অ্যাজ ইয়ং অ্যাজ ইউ ফিল (১৯৫১)
লাভ নেস্ট (১৯৫১)
লেটস্‌ মেক ইট লিগাল (১৯৫১)
ক্ল্যাস বাই নাইট (১৯৫২)
উই আর নট ম্যারিড! (১৯৫২)
ডোন্ট বদার টু নক (১৯৫২)
মাঙ্কি বিজনেস (১৯৫২)
ও হেনরিস ফুল হাউজ (১৯৫২)
নায়াগ্রা (১৯৫৩)
জেন্টলমেন প্রেফার ব্লন্ডিস (১৯৫৩)
হাউ টু মেরি আ মিলিয়নিয়ার (১৯৫৩)
রিভার অব নো রিটার্ন (১৯৫৪)
দেয়ার্স নো বিজনেস লাইক শো বিজনেস (১৯৫৪)
দ্য সেভেন ইয়ার ইচ (১৯৫৫)
বাস স্টপ (১৯৫৬)
দ্য প্রিন্স অ্যান্ড দ্য শোগার্ল (১৯৫৭)
সাম লাইক ইট হট (১৯৫৯)
দ্য মিসফিট্‌স (১৯৬০)
সামথিং গট টু গিভ (১৯৬২) 

মনরোর কিছু উক্তি

"হলিউড  এমন একটি জায়গা যেখানে একটি মেয়ের সত্ত্বার চেয়ে তার চুল বেশি গুরুত্বপূর্ণ।"

"মেয়েরা যদি একটি পারফেক্ট কোন কিছুতে ফিট হতে পারে, তাহলে সে সব কিছু জয় করতে পারবে।"

"সফলতা অনেক মানুষকে তোমাকে ঘৃণা করতে শেখায়। আমার খুব ইচ্ছে হয় ব্যাপারটা যদি এমন না হতো! চারপাশের মানুষের চোখে ঈর্ষা না দেখে সফলতাকে উপভোগ করতে পারা নিশ্চয়ই খুব দারুণ হতো!"

"আমি যখন ছোট ছিলাম কেউ আমাকে সুন্দর বলতো না। সব মেয়েকেই ছোটবেলায় বলা উচিত যে তারা সুন্দর, এমনকি যদি তারা নাও হয়ে থাকে।"

মনরো সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য 
ছোটবেলা থেকে বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত মেরিলিন কথা বলার সময় তোতলাতেন। পরবর্তীতে তোতলামি কেটে যায়। কিন্তু ‘সামথিংস গট টু গিভ’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সময় তিনি স্ট্রেসের কারণে ফের তোতলাতে থাকেন।

অভিনয়ের পূর্বে তিনি স্ট্রেস ফিল করতেন এবং বড় তারকা হওয়ার পরেও তার এই সমস্যা ছিল।

কৃষ্ণাঙ্গী হওয়ায় জ্যাজ সঙ্গীতশিল্পী এলা ফিটজেলাল্ড মোকাম্বো হলিউড নাইটক্লাবে বুকিং দিতে পারতেন না। মেরিলিন মনরো নাইটক্লাবের মালিককে বলেন, যদি তিনি এলাকে সেখানে গাইতে দেন, তাহলে মনরো প্রতি রাতে ক্লাবের প্রথম সারির টেবিলে বসে সঙ্গীত পরিবেশনা দেখবেন।

একবার মেরিলিন তার দ্বিতীয় স্বামী জয় ডিম্যাজিওকে প্রতিজ্ঞা করান, তিনি মারা যাওয়ার পর ডি মিয়াগো যেনো প্রতি সপ্তাহে মনরোর কবরে ফুল দেন। ডি মিয়াগোও তার প্রতিজ্ঞা রেখেছিলেন। তিনি ২০ বছর ধরে প্রতি সপ্তাহে মেরিলিন মনরোর কবরে আধডজন গোলাপ রেখে আসতেন।

বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন মনরোকে অটোগ্রাফ দিয়েছিলেন সেখানে লেখা ছিল-টু মেরিলিন, উইথ লাভ, রেসপেক্ট এন্ড থ্যাংকস।

মেরিলিন মনরো কিছু গানও রেকর্ড করেছিলেন, যা আজও অবিস্মরণীয়৷ ‘আই ওয়ানা বি লাভড বাই ইউ’, ‘ডায়মন্ডস আর আ গার্লস বেস্ট ফ্রেন্ডস’ – তার বিশ্বখ্যাত কয়েকটি গান৷

প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির সাথে তার অন্তরঙ্গতা ছিল বলে জানা যায়। মৃত্যুর পূর্বে তিনি কেনেডির ব্যক্তিগত ফোনে কল দিয়েছিলেন।

মেরিলিন সমকামী ছিলেন বলে দাবী করেছে সম্প্রতি প্রকাশিত ‘মেরিলিন: দ্য প্যাশন অ্যান্ড প্যারাডক্স’ বইটি। বইয়ের লেখক লয় ব্যানার দাবি করেছেন, নাতাশা লাইটেস নামে এক জার্মান নারীর সঙ্গে স্বামী -স্ত্রীর মত থাকতেন মনরো। এই জার্মান নারী মনরোকে অভিনয়ের প্রশিক্ষণ দিতেন।

মেরিলিন মনরোর নিজস্ব কোন বাড়ি ছিল না। তেমন সম্পত্তিও পাওয়া যায়নি তার মৃত্যুর পর। যদিও সে সময় তার ছবি থেকে ইন্ডাস্ট্রি আয় অরেছে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার।

তথ্যসূত্র
১। biography.com
২। আনন্দবাজার পত্রিকা
৩। marilynmonroe.com
৪। Brilliant Stardom and Personal Tragedy Punctuated the Life of Marilyn Monroe". The New York Times.
৫। Dotinga, Randy (August 3, 2012). "Marilyn Monroe: Anything but a dumb blonde". The Christian Science Monitor.
৬। "Remembering Marilyn Monroe". Smithsonian Institution.
৭। "The Inscrutable Life and Death of Marilyn Monroe"

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত