বাঙালি সাহিত্যিক ও মানবাধিকার আন্দোলন কর্মী মহাশ্বেতা দেবী
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০১৬, ১৭:৩৯
এক বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক ও মানবাধিকার আন্দোলন কর্মী মহাশ্বেতা দেবী। ১৯২৬ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ জানুয়ারি বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সাঁওতাল ইত্যাদি উপজাতিদের ওপর কাজ এবং লেখার জন্য বিখ্যাত । তিনি জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর লেখা শতাধিক বইয়ের মধ্যে হাজার চুরাশির মা অন্যতম। সাহিত্যে অবদানের জন্য তাঁকে ২০০৭ খ্রীষ্টাব্দে সার্ক সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয়।
মহাশ্বেতা দেবী একটি মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা মনীশ ঘটক ছিলেন কল্লোল যুগের প্রখ্যাত সাহিত্যিক এবং তাঁর কাকা ছিলেন বিখ্যাত চিত্রপরিচালক ঋত্বিক ঘটক। মহাশ্বেতা দেবী শিক্ষালাভের জন্য শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন। তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। পরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে এম এ ডিগ্রী লাভ করেন।
১৯৬৪ খ্রীষ্টাব্দে তিনি বিজয়গড় কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। এই সময়েই তিনি একজন সাংবাদিক এবং লেখিকা হিসাবে কাজ করেন। পরবর্তীকালে তিনি বিখ্যাত হন মূলত পশ্চিমবাংলার উপজাতি এবং নারীদের ওপর তাঁর কাজের জন্য। তিনি বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে বিভিন্ন উপজাতি এবং মেয়েদের উপর শোষণ এবং বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছেন। সাম্প্রতিক কালে মহাশ্বেতা দেবী পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিল্পনীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। সরকার কর্তৃক বিপুল পরিমাণে কৃষিজমি অধিগ্রহণ এবং স্বল্পমূল্যে তা শিল্পপতিদের কাছে বিতরণের নীতির তিনি কড়া সমালোচক। এছাড়া তিনি শান্তিনিকেতনে প্রোমোটারি ব্যবসার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করেছেন।
মহাশ্বেতা দেবীর গ্রন্থসমূহ হল- অরণ্যের অধিকার, নৈঋতে মেঘ, অগ্নিগর্ভ, গণেশ মহিমা, হাজার চুরাশীর মা, চোট্টি মুণ্ডা এবং তার তীর, শালগিরার ডাকে, নীলছবি (১৯৮৬, অধুনা, ঢাকা), বন্দোবস্তী, আই.পি.সি ৩৭৫, সাম্প্রতিক, প্রতি চুয়ান্ন মিনিটে, মুখ, কৃষ্ণা দ্বাদশী, ৬ই ডিসেম্বরের পর, বেনে বৌ, মিলুর জন্য, ঘোরানো সিঁড়ি, স্তনদায়িনী, লায়লী আশমানের আয়না, আঁধার মানিক, যাবজ্জীবন, শিকার পর্ব, অগ্নিগর্ভ, ব্রেস্ট গিভার, ডাস্ট অন দ্য রোড, আওয়ার নন-ভেজ কাউ, বাসাই টুডু, তিতু মীর, রুদালী, উনত্রিশ নম্বর ধারার আসামী, প্রস্থানপর্ব, ব্যাধখন্ড।
মহাশ্বেতা দেবী ১৯৯৭ সালে রামন ম্যাগসেসে পুরস্কার, সাহিত্য একাডেমির সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান ‘জ্ঞানপীঠ পুরস্কার’, ২০০৬ সালে ভারত সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক পুরস্কার ‘পদ্মবিভূষণ’ এবং ২০০৭ সালে সার্ক সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।
২০১৬ সালের ২৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) কলকাতার বেলভিউয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এ প্রখ্যাত সাহিত্যিক।