ছয় বছর ধরে বদ্ধ ঘরে শিকলবন্দী
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০১৭, ২১:২৮
দীর্ঘ ৬ বছর ধরে একটি বদ্ধ ঘরে শেকলে বন্দী হয়ে দিন কাটাচ্ছেন ফাতেমা। ঘরের এক কোণেই নোংরা পরিবেশে সারছেন প্রাকৃতিক কাজ। সন্তানের এমন অসহায়ত্ব বাবা মা দেখছেন প্রতিদিন, কিন্তু কিছুই করার নেই তাদের।
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার জিনারি ইউনিয়নের চরকাটিহারী গ্রামের ফাতেমা আক্তারের বয়স এখন ২১-২২ বছর। ফাতেমার বাবা দরিদ্র কৃষক মো. মহিবুর রহমান। ছয় ভাইবোনের মধ্যে ফাতেমা পঞ্চম।
কৃষক মহিবুরের সংসারে দুঃখের শেষ নেই। বড় ছেলে বাবুল সর্দারের তিন সন্তানের মধ্যে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। দ্বিতীয় ছেলে রফিকুল ইসলাম সড়ক দুর্ঘটনায় একটি চোখ হারিয়েছেন। তৃতীয় মেয়ে সালমা আক্তার যৌতুকের কারণে বিয়ের পর সংসার করতে পারেননি। দুই সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে রয়েছেন। চতুর্থ মেয়ে নাজমা আক্তারেরও একই অবস্থা। পঞ্চম সন্তান ফাতেমাও মানসিকভাবে অসুস্থ। ছোট ছেলে পাপ্পু মিয়া (১৫) উপজেলার গড়বিশুদিয়া দাখিল মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।
ফাতেমার বিষয়ে বাবা মহিবুর বলেন, ফাতেমা আক্তার ২০১১ সালে উপজেলার হোগলাকান্দি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। এ কারণে বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। তখন থেকেই তিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। শুরুতে কিছুদিন চিকিৎসা করানো হয়। তবে টাকার অভাবে স্থায়ী কোনো চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি।
বাবা মহিবুর জানান, মা-বাবাসহ কাউকে সামনে পেলে ফাতেমা প্রায়ই দা নিয়ে কোপ দিতে যান। সে জন্য তাকে শিকলবন্দী করে বদ্ধ ঘরে আটকিয়ে রাখা হয়েছে।
ফাতেমার মা আছিয়া খাতুন বলেন, কে চায় নিজের মেয়েকে এভাবে বদ্ধ ঘরে নোংরা অবস্থায় বন্দী করে রাখতে? কিন্তু কোনো উপায় নেই। ফাতেমাকে একমুহূর্তের জন্য ছাড়লেও দা নিয়ে অন্যকে কোপাতে আসেন। গতকালও একবার তাকে ছাড়া হয়েছিল। তখন ফাতেমা দা নিয়ে পরিবারের সবাইকে কোপাতে আসেন। সে জন্য আবারও তাকে শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছে।
হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ফাতেমার ব্যাপারে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আহসানিয়া মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার মো. আক্তার জামিল বলেন, ‘আহসানিয়া মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফাতেমার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারাও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আশা করছি, আহসানিয়া মিশন ফাতেমার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।’