সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করবে বাংলাদেশ-সুইডেন
প্রকাশ : ১৬ জুন ২০১৭, ২১:১০
বাংলাদেশ এবং সুইডেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই এবং সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র হিসেবে জ্বালানি নিরাপত্তা, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, ব্যবসা এবং নগর উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছে।
১৫ জুন (বৃহস্পতিবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন লোফভেনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুইদেশের মধ্যে এই মতৈক্য হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে সুইডেনের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে তিনদিনের দ্বিপক্ষীয় সফরে সুইডেনে অবস্থান করছেন।
সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন লোফভেনের কার্যালয়ে এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
সুইডেনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম সারোয়ার এবং প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব মো. নজরুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এটাই বাংলাদেশের কোন সরকার বা রাষ্ট্র প্রধানের সুইডেনে প্রথম দ্বিপাক্ষিক সরকারি সফর।
শহীদুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই দ্বিপাক্ষিক সফরের মধ্যদিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে।
তিনি সুইডেনের প্রধানমন্ত্রীকে উদ্বৃত করে বলেন, সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের দুয়ারও উন্মোচিত হয়েছে।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একযোগে কাজ করার বিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছেন।
তিনি বলেন, দুই নেতা বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ-অলোচনা করেন এবং দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, ব্যবসা এবং নগর উন্নয়ন খাতকে চিহ্নিত করেন।
এই প্রসঙ্গে সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন লোফভেন শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেন কিভাবে এই স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সহযোগিতা করতে পারে।
সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের বিষয়ে সহযোগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং এক্ষেত্রে তাদের বেসরকারি খাতের ভূমিকাও তিনি তুলে ধরেন।
সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে এ দু’টি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য অনেকটাই বাংলাদেশের অনুকূলে রয়েছে।
লোফভেন বলেন, সুইডেন বর্তমানে অনেক উন্নয়নশীল দেশেই স্মার্ট সিটি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সহযোগিতা করছে।
বাংলাদেশে কিভাবে ‘স্মার্ট সিটি’ প্রতিষ্ঠায় সুইডেন সহযোগিতা করতে পারে সে বিষয়েও সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ইউরোপের অনেক দেশের আগেই স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি প্রদান করায় সুইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সুইডেন সবসময়ই বাংলাদেশকে সহযোগিতা প্রদান করে আসছে।
দেশের উন্নয়নের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ গত অর্থবছরে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
তিনি এ সময় তৈরি পোশাক খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের চিত্রও তুলে ধরেন।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে দেশের শিল্পায়নে তার সরকারের উদ্যোগে সারাদেশে একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গও এ সময় উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
২০৩০ উন্নয়ন এজেন্ডার বিষয়ে সুইডেনকে মুখ্য ভূমিকা পালনকারি দেশ হিসেবে উল্লেখ করে শহীদুল হক বলেন, সুইডেন ২০৩০ উন্নয়ন এজেন্ডা বাস্তবায়নে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহযোগিতা করতে চায়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকে তারা একটি সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
২০১৪ সালে সুইডেনের সঙ্গে জাতিসংঘের বৈশ্বিক চুক্তি অনুযায়ী সুইডেন শিল্প প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের ধরন পরিবর্তনের বিষয়ে একটি নতুন ধারণার সূচনা করে, লোফভেন বলেন, পুরাতন ধ্যান-ধারণা বদলে শিল্পোৎপাদনের সম্পর্কে নতুনভাবে এগিয়ে নিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি জরুরি। তারা এ বিষয়ে কয়েকটি দেশকে প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কাজ করতে চান।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘রেডিমেড গার্মেন্টস ট্রাইপারটাইট কনসালটেটিভ কাউন্সিল’কে সহযোগিতার ঘোষণাকে এ সংক্রান্ত বৈশ্বিক চুক্তির আওতায় একটি নবতর অঙ্গীকার হিসেবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এ বিষয়ে সুইডিশ সরকার কারিগরি সহায়তা প্রদানে আগ্রহী এবং বাংলাদেশ সরকারও তাদের প্রস্তাব সাদরেই গ্রহণ করেছে।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, শ্রম সচিব মিকাইল সিপার, সুইডেনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম সারোয়ার এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিআইডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এক একান্ত বৈঠকেও মিলিত হন বলে পররাষ্ট্র সচিব জানান।